বিশ্বকাপের স্বপ্ন শেষ

থাটি সুইয়ের মতো বিঁধেছিল। 'আপনারা সবাই জেনে নিন, বাংলাদেশ আর কোনোভাবেই ২০১৩ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, পরের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে পারলে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেতে পারবে।' শ্রীলংকার কাছে ৬ উইকেটে হারার পর বাংলাদেশি সাংবাদিকদের দেখে এ আসরে আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার জুলি বেঞ্জামিন এভাবেই খোঁচা দিয়েছিলেন। যদিও এটি তার কাজের মধ্যেই পড়ে, তারপরও সেটা মনে


করিয়ে দেওয়ায় বেশ লজ্জাতেই পড়তে হয়েছিল অনেককে। তবে লজ্জাটা শুরু হয়েছিল দিনের শুরু থেকেই। যখন লংকার বিপক্ষে টাই-টাই ১০০ রানে গিয়ে ঘরের মেয়েদের দৌড় শেষ হয়, তখনই বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ার স্বপ্নভাঙার শব্দ শোনা যায় মিরপুরে। এরপর বোলিংয়ে লংকার ৪ উইকেট ফেলে দেওয়ার মধ্যে ছিল কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা। তাতে আর যাই হোক, প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছিঁটেও ছিল না।
ম্যাচ হারার পর মিরপুরে অনেককেই গজরাতে দেখা গেল, কেন টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিলেন সালমা, আগের দিন যেখানে ফিল্ডিং নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কম রানে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তাহলে এদিন কেন তা হলো না। সালমাকে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কিছু রাখেননি তার ব্যাটসম্যানরা। সকালে ওপেনার আয়শা আকতার এসেই জায়গায় দাঁড়িয়েই ব্যাট ঘোরাতে থাকেন। পায়ের মুভমেন্ট না থাকায় ২ রানে এলবিডবি্লউ হয়ে খেসারত দিতে হয় তাকে। ফারাজানা হক পিংকি এসেও বোল্ড হয়ে যান শূন্য রানে। দলের দুই প্রধান ব্যাটসম্যান শুকতারা আর সালমা যখন ধস সামলাচ্ছিলেন, তখনই রান আউট হয়ে যান শুকতারা মাত্র ৩ রানে। মিড অফে ঠেলে দিয়েই একটি রান নিতে গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সালমা জায়গা ছাড়েননি রানটি নেওয়া যাবে না বলে। দেখতে খারাপ লেগেছে ব্যাপারটা, সালমা চাইলে পারতেন একটু চেষ্টা করে, তিনি কিন্তু একটুও নড়েননি। ১৩ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সালমার কাঁধেই সব দায়িত্ব এসে পড়ে। তিনি লতা মণ্ডলকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, লতা ৪০ বলে ১১টি রানও করেছিলেন, কিন্তু শট খেলতে পছন্দ করা লতার জন্য এর বেশি ধৈর্য ধরা সম্ভব ছিল না। লতা চলে যাওয়ার পর সালমাও সুইপ খেলতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বসেন। ৮৩ মিনিট ক্রিজে থেকে ৭৬ বলে ৩২ রান করেছিলেন তিনি। অধিনায়ক প্যাভিলিয়নে যাওয়ার পর চামেলি এসেছিলেন; কিন্তু তার ব্যাটিং গার্ড নেওয়া দেখেই বোঝা যায়, বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকাটা তার পক্ষে সম্ভব নয়। ১৭ বলে ৫ রান করে আউট হয়ে ফিরে যান তিনি। এরপর রুমানা ৪৪ বলে ১৭টি মহামূল্যবান রান করেছিলেন। কারণ এই রানের জন্যই দল একশ'র কাছাকাছি চলে যায়। পরে পান্না ঘোষ আর জাহানারা এসে দলের স্কোর একশ' ছুঁতে সাহায্য করেন। পান্না ২০ বলে ১২ রান করে আউট হলেও জাহানারা ৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
১০১ রানের টার্গেটটা লংকার জন্য আহামরি কিছু ছিল না। তারপরও পান্না ও জাহানারার প্রথম ওভারটি মেডেন যাওয়ার পর গ্যালারি কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল; কিন্তু এরপর পান্নার এক ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে লংকান ওপেনার বুঝিয়ে দেন ঘড়ি ধরে ব্যাটিং করার মেয়ে তিনি নন। যদিও আরেক ওপেনার যশোদাকে লাঞ্চের আগেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সালমা। লাঞ্চ শেষ করেই আরেক ওপেনার গালাগেদারা সালমাকে সুইপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন। ৩৭ রানে ২ উইকেট হারানো দেখে সালমার হয়তো আফসোস হয়েছিলে, স্কোর বোর্ডে একশ' রান দেখে। এরপর সালমার আফসোস আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শুকতারা আর কুবরা। দলীয় ৭৪ আর ৮৬ রানের মাথায় লংকানরা আরও দুটি উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশি স্পিনারের হাতেই। তাই বলে ১০১ রান তুলতে ২৬.৩ ওভারের বেশি সময় নেয়নি। বেলায় বেলায় ম্যাচটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর শুধু হতাশাই ছিল সালমাদের মধ্যে। 'চেয়েছিলাম দুশ'র ওপর রান তুলতে। পারলাম না। এত কম রান দিয়ে ওদের হারানো যায় না...।' ম্যাচসেরা হয়েও এই আফসোসে পুড়ছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

No comments

Powered by Blogger.