কোরবানি :শুধু প্রতীকী পশু জবাই নয় by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
আগামী ৭ নভেম্বর সোমবার 'ঈদুল আজহা' পালিত হবে। ঈদুল আজহা 'কোরবানির ঈদ' নামেও সমধিক পরিচিত। হজরত ইবরাহীমের (আ.) সুন্নত হিসেবে মুসলমানরা 'কোরবানি' করে থাকেন। হজরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর হুকুম পালন করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে কোরবানি করার জন্য পুত্র হজরত ইসমাঈলের (আ.) গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহীমের (আ.) অন্তরের ঐকান্তিকতাকে গ্রহণ করলেন আর হজরত ইসমাঈলের (আ.)
পরিবর্তে একটি পশু কোরবানির ব্যবস্থা করে দিলেন। কোরআনুল কারিমে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ উলেল্গখ রয়েছে। সে থেকে হজরত ইবরাহীমের (আ.) উত্তরসূরিরা তার সুন্নতের অনুসরণে পশু কোরবানি করে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত এ রেওয়াজ চালু থাকবে_ ইনশাল্লাহ।
ওলামায়ে কেরামদের প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, কোরবানি ওয়াজিব। কিছু ওলামায়ে কেরামের মতে, কোরবানি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বে তা ত্যাগ করা যাবে না। কোরবানির হিসাবকে অনেকেই জাকাতের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন, যা ঠিক নয়। যার কাছে ঈদুল আজহার দিনগুলোতে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যতীত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমপরিমাণ সম্পদ থাকবে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ মাল পূর্ণ এক বছর থাকা জরুরি নয়। বরং কোরবানির শেষ দিন সূর্যাস্তের আগে নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে কোরবানি ওয়াজিব। নেসাবের বর্তমান বাজারদর হিসেবে যার কাছে প্রায় ৯২ হাজার টাকার সম্পদ থাকবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো রূপার বাজারদর জেনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। এ নিবন্ধ লেখার সময় রূপার বাজারদর ছিল এক হাজার ৭৫০ টাকা ভরি।
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহভীতি ও তাঁর নৈকট্য অর্জন। এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'তাদের (পশুদের) গোশত আল্লাহর কাছে পেঁৗছায় না, এমনকি তাদের রক্তগুলোও না। কিন্তু তোমাদের 'তাকওয়া' অবশ্যই তাঁর (আল্লাহর) কাছে পেঁৗছে।'-সূরা হজ : ৩৭
অর্থাৎ আমরা কোন আকারের, কত মূল্যমানের পশু কোরবানি করলাম, আল্লাহর কাছে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। আল্লাহতায়ালা শুধু দেখতে চান, যে বান্দা কোরবানি করছে সে তার মনের গভীরে আল্লাহকে কত বেশি ভালোবেসে কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আল্লাহতায়ালা এটাও লক্ষ্য করেন যে, বান্দার মনে আল্লাহর ভয় কতটুকু সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া কোরবানির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিধিবিধান মেনে চলার ব্যাপারে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এটাও আল্লাহর দরবারে বিবেচ্য বিষয়। সে হিসেবে বলা যায়, কোরবানি নিছক কোনো আনুষ্ঠানিক পশু জবাইয়ের উৎসব নয়। পশু জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের ভেতরে জন্মানো পশুত্বের কতভাগ বিসর্জন দিতে পারলাম তা-ই বিবেচ্য বিষয়।
তাই আমাদের ভাবতে হবে, আমরা যে কোরবানি দিচ্ছি তা আমাদের জন্য ওয়াজিব কি-না? নাকি আমরা রেওয়াজ মোতাবেক কোরবানি দিচ্ছি? নাকি পাড়া-প্রতিবেশীদের দেখাদেখি সামাজিকতা রক্ষার খাতিরে এবং গোশতের চাহিদা পূরণের জন্য কোরবানি দিচ্ছি? নাকি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি দিচ্ছি? আমাদের মনের গভীরে আল্লাহকে কত বেশি ভালোবেসে আমরা কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আল্লাহ এটাও লক্ষ্য করেন যে, আমাদের মনে আল্লাহর ভয় কতটুকু সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া যৌথভাবে কোরবানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাদের সঙ্গে শরিক বা অংশীদার হিসেবে কোরবানি দিচ্ছেন, আপনার জানামতে তাদের কোরবানির উদ্দেশ্য কী?
এ বিষয়গুলো সামনে রেখে যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করে অংশীদার নির্বাচন করতে হবে। আরেকটি কথা, কোরবানির নিয়ত করার সময় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিয়ত করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদিস অনুযায়ী 'সব কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নিভর্রশীল।' তাই কোরবানির নিয়ত করতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কোরবানি করতে হবে শুধু আল্লাহর নামে। কোরবানি করতে হবে শুধু আল্লাহর নির্দেশিত ও তাঁর রাসূল (সা.) প্রদর্শিত পদ্ধতিতে, অন্য কোনো নিয়ম-পদ্ধতি এখানে চলবে না। উপরোক্ত বিষয়গুলো স্মরণ রেখে আমরা যদি কোরবানির প্রস্তুতি নিই, সে অনুযায়ী কোরবানি করি, তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের কোরবানিকে গ্রহণযোগ্য ইবাদত হিসেবে কবুল করবেন বলে আশা করা যায়। কোরবানি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। তবে এসব ফজিলতপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত হলো, তা একমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে, লোক দেখানো কোনো উদ্দেশ্য থাকবে না। যদি আল্লাহতায়ালাকে পাওয়ার আশা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোরবানি করা হয়, তাহলে সওয়াবের বিপরীতে গুনাহের বোঝা বহন করতে হবে।
muftianaet@gmail.com
ওলামায়ে কেরামদের প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, কোরবানি ওয়াজিব। কিছু ওলামায়ে কেরামের মতে, কোরবানি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বে তা ত্যাগ করা যাবে না। কোরবানির হিসাবকে অনেকেই জাকাতের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন, যা ঠিক নয়। যার কাছে ঈদুল আজহার দিনগুলোতে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যতীত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমপরিমাণ সম্পদ থাকবে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ মাল পূর্ণ এক বছর থাকা জরুরি নয়। বরং কোরবানির শেষ দিন সূর্যাস্তের আগে নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে কোরবানি ওয়াজিব। নেসাবের বর্তমান বাজারদর হিসেবে যার কাছে প্রায় ৯২ হাজার টাকার সম্পদ থাকবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো রূপার বাজারদর জেনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। এ নিবন্ধ লেখার সময় রূপার বাজারদর ছিল এক হাজার ৭৫০ টাকা ভরি।
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহভীতি ও তাঁর নৈকট্য অর্জন। এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, 'তাদের (পশুদের) গোশত আল্লাহর কাছে পেঁৗছায় না, এমনকি তাদের রক্তগুলোও না। কিন্তু তোমাদের 'তাকওয়া' অবশ্যই তাঁর (আল্লাহর) কাছে পেঁৗছে।'-সূরা হজ : ৩৭
অর্থাৎ আমরা কোন আকারের, কত মূল্যমানের পশু কোরবানি করলাম, আল্লাহর কাছে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। আল্লাহতায়ালা শুধু দেখতে চান, যে বান্দা কোরবানি করছে সে তার মনের গভীরে আল্লাহকে কত বেশি ভালোবেসে কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আল্লাহতায়ালা এটাও লক্ষ্য করেন যে, বান্দার মনে আল্লাহর ভয় কতটুকু সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া কোরবানির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিধিবিধান মেনে চলার ব্যাপারে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এটাও আল্লাহর দরবারে বিবেচ্য বিষয়। সে হিসেবে বলা যায়, কোরবানি নিছক কোনো আনুষ্ঠানিক পশু জবাইয়ের উৎসব নয়। পশু জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের ভেতরে জন্মানো পশুত্বের কতভাগ বিসর্জন দিতে পারলাম তা-ই বিবেচ্য বিষয়।
তাই আমাদের ভাবতে হবে, আমরা যে কোরবানি দিচ্ছি তা আমাদের জন্য ওয়াজিব কি-না? নাকি আমরা রেওয়াজ মোতাবেক কোরবানি দিচ্ছি? নাকি পাড়া-প্রতিবেশীদের দেখাদেখি সামাজিকতা রক্ষার খাতিরে এবং গোশতের চাহিদা পূরণের জন্য কোরবানি দিচ্ছি? নাকি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি দিচ্ছি? আমাদের মনের গভীরে আল্লাহকে কত বেশি ভালোবেসে আমরা কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আল্লাহ এটাও লক্ষ্য করেন যে, আমাদের মনে আল্লাহর ভয় কতটুকু সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া যৌথভাবে কোরবানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাদের সঙ্গে শরিক বা অংশীদার হিসেবে কোরবানি দিচ্ছেন, আপনার জানামতে তাদের কোরবানির উদ্দেশ্য কী?
এ বিষয়গুলো সামনে রেখে যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করে অংশীদার নির্বাচন করতে হবে। আরেকটি কথা, কোরবানির নিয়ত করার সময় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিয়ত করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদিস অনুযায়ী 'সব কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নিভর্রশীল।' তাই কোরবানির নিয়ত করতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কোরবানি করতে হবে শুধু আল্লাহর নামে। কোরবানি করতে হবে শুধু আল্লাহর নির্দেশিত ও তাঁর রাসূল (সা.) প্রদর্শিত পদ্ধতিতে, অন্য কোনো নিয়ম-পদ্ধতি এখানে চলবে না। উপরোক্ত বিষয়গুলো স্মরণ রেখে আমরা যদি কোরবানির প্রস্তুতি নিই, সে অনুযায়ী কোরবানি করি, তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের কোরবানিকে গ্রহণযোগ্য ইবাদত হিসেবে কবুল করবেন বলে আশা করা যায়। কোরবানি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। তবে এসব ফজিলতপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত হলো, তা একমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে, লোক দেখানো কোনো উদ্দেশ্য থাকবে না। যদি আল্লাহতায়ালাকে পাওয়ার আশা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোরবানি করা হয়, তাহলে সওয়াবের বিপরীতে গুনাহের বোঝা বহন করতে হবে।
muftianaet@gmail.com
No comments