একনায়কের দশ দিন by জামান সরদার

যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর মতো বহুল বিতর্কিত শক্তির সহায়তায় 'গণঅভ্যুত্থান' কতটা ন্যায়সঙ্গত, সে নিয়ে তর্ক চলতেই পারে; কিন্তু দুনিয়াজুড়েই যে একনায়কদের এখন চরম দুর্দিন, তাতে সন্দেহ নেই। সাদ্দাম হোসেন, বেন আলি, হোসনি মোবারক, মুয়াম্মার গাদ্দাফি_ গত কয়েক বছরে এক নামে পরিচিত একনায়কদের দিন ফুরিয়েছে। বাকি যারা এখনও টিকে আছেন, তারাও স্বস্তিতে নেই। অবশ্য সবাই নয়। চীন ও কিউবায় আরব ধাঁচের বসন্ত এখনও অনেক দূর। সেখানে আরও অনেক দিন শৈত্যপ্রবাহ চলবে।


তবে একনায়করা দেশে সবার মুখে কুলুপ এঁটে দিতে পারলেও দেশের বাইরের অন্যদের হাত বাঁধা থাকে না। 'লিস্টভার্স' বলে একটি ওয়েবসাইট বিদ্যমান একনায়কদের মধ্যে 'সেরা' দশের তালিকা করেছে। আর দশটা পশ্চিমা প্রপঞ্চের মতো এখানেও কমিউনিস্ট বিরোধিতা স্পষ্ট।
লিস্টভার্সের তালিকার প্রথমেই রয়েছেন উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং ইল। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে ক্ষমতায়। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ১৯৯২ সাল থেকে ক্ষমতাসীন মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেল কাম প্রেসিডেন্ট থান শোয়ে। তৃতীয় স্থানে আছেন চীনা প্রেসিডেন্ট হু জিন তাও। মেয়াদের দিক থেকে তিনি অবশ্য নবীন_ ২০০২ সাল। তবে তার দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গত ছয় দশক ধরে চীন শাসন করছে। এরপর আছেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে, ১৯৮০ সাল থেকে ক্ষমতায়। পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ। তিনি যদিও ২০০৫ সালে বাদশাহ মনোনীত হন, ১৯৯৫ সালে বাদশাহ ফাহাদ স্ট্রোকের শিকার হওয়ার পর থেকে কার্যত তিনিই সৌদি আরবের শাসনকার্য চালিয়েছেন। এরপর যথাক্রমে রয়েছেন ইকুয়েটোরিয়াল গিনির প্রেসিডেন্ট টিওদোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা (১৯৭৯ সাল থেকে ক্ষমতায়), সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির (১৯৮৯), তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট সাপারমুরাত নিয়াজোভ (১৯৯০), কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো (১৯৫৯) ও সোয়াজিল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এমসোয়াতি (১৯৮৬)।
তালিকার বাইরে থাকা ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ বিভক্ত ও যুক্ত ইয়েমেনে প্রায় সাড়ে তিন দশক দোর্দণ্ড প্রতাপে শাসন চালিয়ে গণআন্দোলনের মুখে না ঘরকা না ঘাটকা পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তালিকায় থাকা মিয়ানমারের সেনাশাসক থান শোয়ে অবশ্য বুদ্ধি করে নিজের রাজদণ্ডে 'নির্বাচনের' জলছাপ লাগিয়ে নিয়েছেন। বলাবাহুল্য, একনায়কদের আরও নানা উদ্ভাবনী ক্ষমতা আছে; কিন্তু জনগণ পক্ষে না থাকলে যে কোনো ক্যারিক্যাচারই কাজে আসে না, তা বহুবার প্রমাণ হয়েছে। বাংলায় চোরের দশ দিন গৃহস্থের একদিন বলে কথা চালু আছে। বিশ্বজুড়ে একনায়কদের দশ দিন বোধহয় শেষ; জনগণের একদিন
শুরু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.