ভুলের দায় by জাহিরুল ইসলাম

রীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের 'গ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল। ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করায় চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা আন্দোলন শুরু করেছে। কয়েকজন আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। উপাচার্য জানিয়েছেন, পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও কিছু কথা থেকেই যায়।


প্রথমত, কয়েকটি বাদে বাকি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। বাস্তবতা হলো, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বাকি আছে সেগুলোতে বাণিজ্য অনুষদ নেই। আর থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের সঙ্গে তা কোনোভাবেই সমান নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর এই ভর্তিচ্ছুরা অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা চান্স পেয়েছিল তারা ভর্তি হয়নি। ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় অনুুষ্ঠিত হলে তারা যে আবার চান্স পাবে তার নিশ্চয়তা কী?
দ্বিতীয়ত, পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আবার বাড়তি কিছু পয়সা খরচ করতে হবে। সইতে হবে কষ্টও। দূরদূরান্ত থেকে যেসব শিক্ষার্থী পুনরায় পরীক্ষা দিতে আসবে তাদের অতিরিক্ত ব্যয় কে বহন করবে?
তৃতীয়ত, পরীক্ষা আবার অনুষ্ঠিত হলে চান্স না পাওয়া অনেকেরই ভাগ্য খুলতে পারে। কিন্তু প্রথমবার চান্স পাওয়াদের মধ্যে যারা পাবে না তাদের ভোগান্তিই হবে বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন তো বটেই অনেকের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ার সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। মাত্র কয়েকজন শিক্ষকের ভুলের দায়ে উদ্ভূত ঝুঁকি পরীক্ষার্থীরা কেন নেবে?
ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠিত হলে আরও কিছু সমস্যা তৈরি হবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াদের মধ্য থেকে যারা নতুন করে চান্স পাবে তারা সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসবে। ফলে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু আসন শূন্য হবে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে পারাটাই যেখানে সোনার হরিণ, সেখানে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করে কিছু আসন ফাঁকা করার পথ প্রশস্ত করা কতটুকু যৌক্তিক?
এ কথা ঠিক, ৯৭৫ আসনের এই ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে না। কিন্তু এটা তাদের জন্য একটা মনস্তাত্তি্বক চাপও বটে। পরীক্ষায় বসার জন্য নতুন করে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। খবরে প্রকাশ, এ বিষয়ে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ১৭ দিনেও তারা বৈঠকে বসতে পারেননি। ফলে বিষয়টির গুরুত্ব নিয়ে তাদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির গাফিলতির পর তদন্ত কমিটিও কেন গাফিলতি করল সে বিষয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেসব শিক্ষকের গাফিলতির কারণে শিক্ষার্থীদের বাড়তি ভোগান্তি এবং শিক্ষাজীবন হুমকির সম্মুখীন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি? সেটা যদি করাও হয়, দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ভর্তিচ্ছু যেসব শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, তাদের অনার্স ভর্তির সুযোগ কে ফিরিয়ে দেবে?
zahirul.du@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.