দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরামের সমাপনী-নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার

সাম্য, স্বাধীনতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সাধারণ জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরাম-২০১১ শেষ হয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে পুঁজিবাদকে নব্য-উদারতাবাদ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভে পাঁচ দিনব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন ফোরামের যুক্ত


আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় তিনি বলেন, সকল প্রকার শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য,
কুসংস্কার, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, বর্ণপ্রথা, নারী নির্যাতন, পিতৃতন্ত্রসহ মানুষের অধিকারবিরোধী সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছি আমরা। দক্ষিণ এশিয়ার সব মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধির পথের সন্ধানে আমরা অনড় থাকব। সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করা এবং সব অন্যায্যতা বন্ধে জনতার ঐক্যের শপথ নিয়েছি আমরা। তিনি বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্রায়নের মাধ্যমে জনবান্ধব শাসন কায়েমের জন্য আমাদের অবিচল থাকতে হবে। দক্ষিণ এশিয়াকে করতে হবে সামরিকায়ন, দারিদ্র্য ও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত।
ঐতিহাসিক স্থানে সমাপনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যেও পাকিস্তান লেবার পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক তারিক মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য করজোড়ে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে অবশ্যই ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আমি আশা করি, এখনই পাকিস্তান সরকার একাত্তরের ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। এ সময় উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক তার বক্তব্যে আটকেপড়া বিহারিদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে দক্ষিণ এশিয়ায় জনআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনের আহমেদ জাদ্দার তার দেশে মার্কিনিদের যোগসাজশে চলা ইসরায়েলি সহিংসতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরামের সদস্য ও ভারতীয় নেতা বিনোদ রায়না তিস্তা এবং টিপাইমুখের বিষয়টি মীমাংসা করার দাবি জানান। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত সাম্রাজ্যবাদী আচরণ করতে চায়। তার বিরুদ্ধেও সবাইকে এক হতে হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ফোরামের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আন্তর্জাতিক সোশ্যাল ফোরামের সদস্য ভারতের অমিত সেনগুপ্ত। ঘোষণাপত্রেও ক্ষুধা, দারিদ্র্য, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত এবং সাম্য ও ন্যায্যের দক্ষিণ এশিয়া গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, জনগণের আর্থিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার লক্ষ্যে সব কর্তৃত্ববাদ ও নিয়ন্ত্রণবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখব।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ব্রাজিলের চিকো ওয়াইলটেকার, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, নারীনেত্রী শিরিন আখতার, রোকেয়া কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, পাকিস্তানের ছাত্রনেতা নোমান কাদরী, ইরাকের প্রতিনিধি ইসমাইল দাউদ, দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরাম-২০১১-এর সমন্বয়ক হিলাল উদ্দিন, পাকিস্তানের আকিলা নাজ, এমডি আফতাব, আসাদুর রহমান আসাদ, রশীদ-ই-মাহবুব প্রমুখ।
আতশবাজি ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালা শেষ হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা নাচ-গান পরিবেশন করেন।
এদিকে ফোরামের অংশ হিসেবে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত আন্দোলন এবং নাগরিক উদ্যোগ যৌথভাবে একটি সেমিনারের আয়োজন করে। মুকুল সিকদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এইচকেএস আরেফিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, নেপালের দলিত অধিকারকর্মী রাম লক্ষ্মণ চামার, ভারতের কে সাজায়া, মনি রানী, জাকির হোসেন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.