কুমিল্লা সিটি নির্বাচন-ভোটগ্রহণ হবে ৫ জানুয়ারি-ইসিকে সতর্ক করল বিএনপি

বগঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২ ডিসেম্বর শুক্রবার। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৪ ও ৫ ডিসেম্বর (রবি ও সোমবার) এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৪ ডিসেম্বর বুধবার।


সিইসি জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে না এবং সব ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গতকাল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের এবং ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি জানিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লেখা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়াতে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপক সমালোচনা করে বলা হয়, সেনাবাহিনী নিয়োগ না করার এবং ইভিএম ব্যবহারের কারণে জনগণ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করলে এর দায়ভার কমিশনকেই নিতে হবে।
প্রসঙ্গত এ বছরের ৬ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেশের অষ্টম এ সিটি করপোরেশন গঠনের ঘোষণা দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ হয় ১০ জুলাই। এ অবস্থায় প্রজ্ঞাপন জারি না গেজেট প্রকাশ কোনটাকে গ্রহণ করে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে কমিশন। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুসারে সিটি করপোরেশন গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে ওই ১৮০ দিনের সময় গণনা হলে ১ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। অন্যদিকে ১০ জুলাই গেজেট প্রকাশের দিন থেকে সময় গণনা করলে নির্বাচনের শেষ সময়সীমা দাঁড়ায় ৫ জানুয়ারি। শেষ পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের দিন থেকেই সময় গণনা করে সময়সীমার শেষ দিনে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন জানায়, কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল বাতেনকে রিটার্নিং অফিসার এবং আরো ৯ জন নির্বাচন কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন_গাজীপুরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন চৌধুরী, গোপালগঞ্জের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন, কুমিল্লার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুুল হালিম খান, গাইবান্ধার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, হবিগঞ্জের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন, কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আতিয়ার রহমান ও কুমিল্লা সদরের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ডের এ সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ১৯৯ জন এবং নারী ভোটার ৮৬ হাজার ৭৪ জন। ভোটকেন্দ্র ৬৫টি এবং ভোটকক্ষ রয়েছে ৪২১টি।
এদিকে বিএনপির ইভিএম-বিরোধিতা প্রসঙ্গে গতকাল নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সময় সিইসি বলেন, 'আমরা ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে ইভিএম নিয়ে আলোচনা করেছি। এসব দলের মধ্যে একমাত্র এলডিপি আপত্তি জানিয়েছে। বাকি দলগুলোর মধ্যে সাত-আটটি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে তাদের সমর্থন জানিয়েছে। অন্য দলগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। বড় দলের মধ্যে আওয়ামী লীগও ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। এ অবস্থায় বিএনপির একার আপত্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।'
সেনা মোতায়েন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ : কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, 'নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে পুলিশ গাছাড়াভাবে কাজ করে। তা ছাড়া নির্বাচনে র‌্যাব যে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, সেনাবাহিনী তা পারে না। সেনাবাহিনীকে কিছু করতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হয়। সেজন্য র‌্যাব-পুলিশ সক্রিয়ভাবে কাজ করলেই আমাদের বেশি লাভ। এ নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হবে।
সিইসি জানান, নির্বাচনী অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া প্রতি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ২৪ জন করে সদস্য থাকবেন।
সিইসি আরো জানান, সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য এবারই প্রথম সব কেন্দ্রে কমিশনের নিজস্ব ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন করেছে। সংশোধিত আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণায় জীবন্ত প্রাণী ও বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া আচরণবিধি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় কোনো প্রার্থী শোডাউন করতে পারবেন না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে প্রার্থীকে তফসিলি ব্যাংকে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। যার নম্বর, ব্যাংক ও শাখার নাম মনোনয়নপত্রে উল্লেখ করতে হবে। নির্বাচনের পুরো ব্যয় এই অ্যাকাউন্ট থেকে করতে হবে। নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার সময় এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাব বিবরণীও জমা দিতে হবে।
সিইসি বলেন, মেয়র প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন, কিন্তু ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবেন না। তবে কাউন্সিলররা ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.