পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ও প্রতিকারের উপায় by মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সাধনে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে কাউকে হত্যা করার নাম পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা হত্যার আশঙ্কা করলেও হত্যার দিন, ক্ষণ ও স্থান জানেন না। অন্যদিকে পরিকল্পনাকারী দীর্ঘদিন ধরেই হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করার জন্য একাধিক দিন, ক্ষণ ও স্থান নির্ধারণ করে অবশেষে তা ঘটিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনাকারীচক্র নিজের অংশগ্রহণ ছাড়াও বিশ্বস্ত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ হত্যাকারীকেও পরিকল্পিতভাবে যুক্ত করে থাকে।


পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নতুন নয়, বেশ পুরনো। বলা চলে, সভ্যতার উন্মেষ থেকেই চলে এসেছে এটি। এটির কোনো স্থানিক গণ্ডি নেই, সব দেশেই কমবেশি তা ঘটছে। উন্নত দেশগুলো আইনের শাসন এবং ব্যক্তিমানুষের বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে এর প্রতিকার অনেকটাই করতে পেরেছে, করে চলছে। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হাজারো সমস্যার মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অন্যতম নাজুক অবস্থার মধ্যে আছে। একই সঙ্গে ব্যক্তিমানুষ এবং গড়ে ওঠা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ যাবতীয় প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতি, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, বিচার-বিশ্লেষণের দায়বদ্ধতায় খুব একটা বেড়ে ওঠে না, ওঠার চেষ্টা দায়সারাভাবে করে থাকে। ফলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থের সংঘাতকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে নানা উপায়ে সাধন করার চেষ্টা চলতে থাকে। পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে প্রতিপক্ষকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের মাধ্যমে নিজের স্বার্থসিদ্ধির পথ সুগম করার ধারা অন্যতম স্থান অধিকার করে আছে। এটি আদিম ও বর্বরতম একটি উপায় হিসেবেই ইতিহাসে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু যেহেতু আধুনিক যুগে জন্ম নিলেও বেশির ভাগ রাষ্ট্র ও সমাজ মানবসভ্যতার আধুনিক নিয়মকানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করছে না, করার ক্ষেত্রে শৈথিল্য ও দুর্বলতা প্রদর্শন করে থাকে; তাই আদিম, প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বর্বরতার প্রবণতাগুলো আধুনিক যুগেও বিভিন্ন দেশে বেশ নির্বিঘ্নে ক্ষমতার সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে অবস্থান করছে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব-সংঘাত অনেক বেশি বিস্তৃত ও সুদূরপ্রসারী হয়েছে। ফলে এগুলোকে অবলম্বন করে অনেকেই গোটা রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থাকেই কব্জায় এনে অনেক বেশি গোষ্ঠীগতভাবে লাভবান হতে পারছে। অধিকন্তু এখন অর্থবিত্ত ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। ফলে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর বিষয়টি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ হয়ে গেছে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের পার পাওয়ারও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত যেসব রাষ্ট্রে আইনের শাসন দুর্বল, ঘুষ-দুর্নীতির প্রসার ঘটে চলেছে, সেসব দেশে ঘাতকচক্র অর্থবিত্ত ও প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে সমাজের নিচুতলা পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার প্রবণতা ও মানসিকতা ন্যক্কারজনকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। সমাজ ক্রমেই এসব অপশক্তির হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশে নিজের ক্ষমতা, বিত্ত, রাজনীতি ইত্যাদিকে জোর করে বাস্তবায়নের ধারা নতুন নয়। আমি বেশি পুরনো ইতিহাসে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। ১৯৭১ সালে গোটা দেশ ও জাতি যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন জামায়াত-মুসলিম লীগ, এমনকি উগ্রবাদী কিছু বামপন্থী দলও এর বিরোধিতা করেছিল। তাদের এই অবস্থানকে তারা 'আদর্শগত' বলে সাফাই গাইছে বা দোহাই দিচ্ছে। সেই 'আদর্শ' বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদের নেতা-কর্মীরা বাঙালি নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, বুদ্ধিজীবীদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। তাদের ভাষায় এটি করেছে তারা তাদের 'আদর্শ' বাস্তবায়ন করার জন্য! অথচ যারা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, তারা একবারও ভাবেনি, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে যে 'আদর্শ' বাস্তবায়ন করার শিক্ষা তাদের দেওয়া হয়েছিল, সেই 'আদর্শ' প্রকৃতই কোনো মহৎ আদর্শ নয়, মানবতাবিরোধী এমন 'আদর্শ' কোনো প্রকৃত আদর্শ হতে পারে না। দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও সেই 'আদর্শ' ধারণ করার মতো তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বাংলাদেশ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় কমেনি, বেড়েছে। বিষয়টির অনেক কারণ রয়েছে। এই কারণগুলো খুঁজে এর প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া যাঁদের দায়িত্ব ছিল, তাঁরা তা করেননি বা এখনো করছেন না বলেই পশ্চাৎপদ সমাজের অনুষঙ্গ মানুষ হিসেবে অনেকেই অতীত ইতিহাসের অনেক বর্বর, অমানবিক আদর্শ, বিশ্বাস ও ধারণাকে এ যুগে এসেও বিনা প্রশ্নে গ্রহণ, ধারণ ও বহন করে চলছে। আধুনিক যুগের পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রব্যবস্থায় এটি একটি রূঢ় বাস্তবতা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে। যুদ্ধ আদর্শিকভাবে যেমন হয়েছিল, তেমনি সশস্ত্রভাবেও হয়েছিল। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একদিকে উচ্চাদর্শের যেমন উদ্ভব ঘটেছে, তেমনি আবার নানা বিভ্রান্তি, দিক্ভ্রান্তি ও বিচ্যুতির বাস্তবতা তৈরি হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর সেসব ধারা, উপধারা ও প্রবণতা বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজকে পেয়ে বসেছিল। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরলীকৃত রাজনৈতিক বিশ্বাস ও বোধ থেকে চলতে চেয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তৈরি যেসব অসম বাস্তবতা সমাজের গভীরে তৈরি হয়েছিল, সেগুলোকে অন্তর্দৃষ্টি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা হয়নি, বোঝা হয়নি। ফলে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর নানা উপসর্গ তৈরি হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং তৎপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে রাজনীতিতে যে ধারার সূচনা করেছিল, তার নজির আধুনিক বিশ্বে একেবারেই বিরল। রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে ঘাতকচক্র বাংলাদেশে অবাধে হত্যা, খুন ও সন্ত্রাসকে সমাজ ও রাজনীতির সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ইনডেমনটি অধ্যাদেশের মতো 'আইন' সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পক্ষে রাষ্ট্রকে দাঁড় করানো হয়েছিল। অপরাধীচক্র রাষ্ট্রীয়ভাবে সব সুযোগ-সুবিধা লাভ করেছিল, তাদের দম্ভ ও আস্ফালন কতটা বেড়ে গিয়েছিল তা সবারই জানা বিষয়। শুধু সামরিক শাসকরাই নয়, এমনকি নির্বাচিত শাসকগোষ্ঠী এসব হত্যাকারীকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিল, গণতান্ত্রিক ও সত্যিকার আদর্শবাদী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে তাদের দলগত ও রাজনৈতিকভাবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এমনকি জাতীয় সংসদেও তাদের 'নির্বাচিত করিয়ে' আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আরো দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা হচ্ছে, একাত্তরের ঘাতকচক্রকে রাজনীতিসহ সর্বত্র পুনর্বাসিত ও নির্বাচিত করিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেওয়া হয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশে ২০০১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে চারদলীয় জোট বিজয়লাভের পর দেশে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও বিস্তার লাভ করার সুযোগ পায়, তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল আদর্শগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা আওয়ামী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে শেষ করে দেওয়া ২০০১-০৬ সালে দেশে অঞ্চলভিত্তিকভাবে প্রতিপক্ষকে একদিকে হত্যা করা হচ্ছিল, অন্যদিকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের লক্ষ্য ছিল একটি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শকে শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, আরেকটি মতাদর্শকে কণ্টকমুক্ত করা, রাষ্ট্রক্ষমতাকে নিজেদের হাতে স্থায়ীভাবে রাখা। পুরো এই মানসিকতাই প্রাচীন ও মধ্যযুগীয়, আধুনিক নয়।
মোটা দাগে যখন এভাবে পরস্পরবিরোধী দলকে আঘাত করা বা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের রাজনীতি চলতে দেওয়া হয়, তখন স্বার্থ ও সংঘাতের দ্বন্দ্ব সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই বিস্তার লাভ করে, ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। বাংলাদেশের রাজনীতি একদিকে পরস্পরবিরোধী দলের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ, হত্যা, খুন ইত্যাদি মাধ্যমে চলার সুযোগ পেয়ে এসেছে, অন্যদিকে মূল দলগুলোর অভ্যন্তরে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে দলগুলোর অভ্যন্তরে সংঘাত-দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে উঠেছে। দলগুলোর ওপরের দিকে বিরোধ কিছুটা চাপা থাকে, গ্রুপিংয়ে রূপ নিয়ে থাকে, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বহিঃপ্রকাশ তেমন ঘটে না। তবে মধ্যসারি থেকে নিচের দিকে এই দ্বন্দ্ব আদি, প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বর্বরতার পন্থায় প্রকাশিত হওয়ার বাস্তবতা তৈরি হয়। ওই সব স্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে অনেকেই দলের বাইরে ও ভেতরে বিরোধীপক্ষকে সেভাবেই দমন করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এখানেই সমস্যার উদ্ভবের গূঢ় কারণ নিহিত বলে আমাদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ছে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একের পর এক খুনের ঘটনা নিয়ে প্রচারমাধ্যমে যে ধরনের সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে, তা সমস্যার গভীরে দৃষ্টি দেওয়ার চেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের হত্যাকাণ্ড সব মহলকে বিস্মিত করেছে, এর প্রতিক্রিয়া, মামলা, মামলা-পরবর্তী লোকমান হোসেনের বাড়িতে হামলা ইত্যাদি ঘটনাকে হালকাভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। গত ৫ নভেম্বর কালের কণ্ঠ 'জনপ্রিয় হলেই খুন' শিরোনামের প্রতিবেদনে কেবল নরসিংদীতেই চারজন জনপ্রিয় তরুণ নেতার হত্যাকাণ্ডের যে বিবরণ প্রকাশ করেছে, তা সাম্প্রতিককালে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের একটি জেলার উদাহরণ মাত্র। এ ধরনের ঘটনা অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়েই ঘটছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য অনেকটাই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগ এখন যেহেতু ক্ষমতায়, তাই এমন সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দলের অভ্যন্তরে ঠাঁই করে নিতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যারা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নয়, নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থেই দলকে ব্যবহার করে থাকে। এদের হাতে প্রচুর অর্থবিত্ত, মাস্তান ও সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে, যারা এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাতে মোটেও পিছপা হয় না, দ্বিধা করে না। এসব গোষ্ঠী যদি এভাবেই চলতে পারে, তাহলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একসময় ইতিহাস, ঐতিহ্য, আদর্শ ও নেতৃত্বশূন্য হতে বাধ্য হবে_এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর পরিণতি শুধু আওয়ামী লীগের একার জন্যই নয়, দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির জন্যও মারাত্মক হতে বাধ্য। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব থেকে মুক্তির উপায় কী? এর উত্তর সহজে দেওয়া গেলেও বাস্তবায়ন খুব সহজ নয়, বরং বেশ কঠিন ও জটিল। তবে রাজনৈতিক আদর্শের পথে না যাওয়া ছাড়া আওয়ামী লীগের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
প্রথম পথটি হচ্ছে দলকে রাজনৈতিক আদর্শগতভাবে তৃণমূল থেকে গঠন ও পরিচালনার সংস্কৃতিতে আসতে হবে। দলের সব পর্যায়ে আদর্শবাদী, মেধাবী, যোগ্য, সুশিক্ষিত নেতা-কর্মীর জায়গা সৃষ্টি করে দিতে হবে, সন্ত্রাসী ও কুশিক্ষিতদের হটিয়ে দিতে হবে, দলের আদর্শপরিপন্থী যেকোনো কর্মকাণ্ডকে সাংগঠনিকভাবেই পরাস্ত করার রাজনীতি থাকতে হবে। আওয়ামী লীগকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারকারীদের হাত থেকে মুক্ত করে প্রকৃত আদর্শবাদীদের দ্বারাই পরিচালনা করতে হবে। একই কথা বিএনপির জন্যও প্রযোজ্য। বিএনপি যে ধারার রাজনীতিতে জন্ম নিয়ে বিকশিত হয়েছে, তা দিয়ে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক সভ্য দেশে পরিণত করা মোটেও সম্ভব নয়। সুতরাং নূ্যনতম গণতান্ত্রিক আদর্শের পথে বিএনপিকেও আসতে হবে। দ্বিতীয় যে বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে, তা হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আইনের শাসনে চলতে দিতে হবে। যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন, তা যেন রাষ্ট্রের আইন, বিচার, প্রশাসনসহ কোনো প্রতিষ্ঠানকেই কর্তৃত্ব করার দীর্ঘদিনের ধারায় আর না চলে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানাদিকে এর নিজস্ব নিয়মে চলতে দিতে হবে। তাহলে ঘাতকচক্র এত বেপরোয়াভাবে চলার সাহস দেখাতে পারবে না। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির পেছনে দল ও ক্ষমতার আশ্রয়ে লালিত-পালিত ও পল্লবিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কর্মকাণ্ডই প্রধানত দায়ী। এরা সব সময়ই সরকারি দলে আশ্রয় নেয়, দলের দুর্দিনে পালিয়ে বেড়ায়, মাথা নিচু করে হাঁটে। দল এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে রাষ্ট্র মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। বাংলাদেশকে একুশ শতকের আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে উন্নত দেশকেই অনুসরণ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প পথ নেই।
লেখক : ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.