প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে কোটি কোটি টাকার অডিট আপত্তি by আবু হেনা মুহিব

প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ নেই, তবু আছে কোটি কোটি টাকার অডিট আপত্তি। যোগসাজশে নির্ধারিত মূল্যের কম মূল্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিক্রি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্তের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া, ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত টাকা গ্রহণসহ অন্তত ৬৬টি আপত্তি উঠেছে কমিশনের বিরুদ্ধে। এসব আপত্তির কথা স্বীকার করেছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মির্জা আবদুল
জলিল। সমকালকে তিনি বলেছেন, 'সব অভিযোগ সঠিক। তবে কোনোটাই আমার গত তিন বছরের মেয়াদের নয়।'
প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের অডিট আপত্তির হাল নাগাদ বিবরণী থেকে জানা গেছে, ৬৬টি আপত্তির কোনো কোনোটির জবাব দেওয়া হলেও কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) অফিস এসব জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
সূত্র মতে, কমিশনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত উল্লেখযোগ্য আপত্তির মধ্যে ১৯৯৭ সালে কমিশনের নিয়োগ করা সিএ ফার্মের নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা কম মূল্যে কয়েকটি সরকারি মিল বিক্রি করা হয়েছে। এ বাবদ ৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সরকারের। একই সময়ে বেসরকারিকরণ বোর্ডের (প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের আগের নাম) নামে ইস্যুকৃত ১৮ লাখ টাকার পে-অর্ডারের বিপরীতে ভুয়া চলতি হিসাব খুলে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০০১ সালে প্রথম দরপত্রের সর্বোচ্চ দরদাতাকে বিভিন্ন অজুহাতে মিল না দিয়ে যোগসাজশে পুনঃদরপত্রের মাধ্যমে ৭৭ লাখ টাকা কমে বিক্রি করা হয়েছে। একই বছর চালু গাড়ি মেরামত করার ভাউচার দেখানো এবং সার্বক্ষণিক গাড়ির ব্যবহার দেখিয়ে অতিরিক্ত জ্বালানি বিলের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে। ২০০২ সালে কমিশনের ৭টি গাড়ি মেরামত বাবদ নির্দিষ্ট সিলিংয়ের অতিরিক্ত ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য আপত্তির মধ্যে রয়েছে_ ২০০৩ সালে দরপত্র যাচাই না করে সাংগুভেলী টিম্বার ইন্ডাস্ট্রি বিক্রির মাধ্যমে ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কম আদায় করা, ২০০৫ সালে গাড়ি মেরামতে সরকারি নীতিমাল উপেক্ষা করে অনিয়মিত হারে গাড়ি মেরামতের মাধ্যমে সরকারের ৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয়। ২০০৬ সালে বেসরকারিকরণ নীতিমালার শর্ত বাদ দিয়ে ২০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত রিবেট (ছাড়) দেওয়ার মাধ্যমে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি করা। একই বছর অডিট আপত্তির অনুচ্ছেদ নম্বর ৩ ও ৪-এর আওতায় যথাক্রমে রাষ্ট্রের ৬০ লাখ ও ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করা।
সূত্র জানায়, এর বাইরে অন্যান্য আপত্তির মধ্যে রয়েছে মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী স্থায়ী ও চলতি সম্পদমূল্যের মাত্র ৩৯ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রাপ্ত মূল্যে মিল বিক্রি করায় সরকারের ৬৫ কোটি ২২ লাখ টাকার ক্ষতি করা, কমিশনের গাড়ি সার্বক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা সত্ত্বেও পুলের গাড়ি ব্যবহারের নামে জ্বালানি বিল পরিশোধ বাবদ ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা এবং অনুমোদিত বাজেটের অতিরিক্ত ২০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করা। উল্লেখযোগ্য এসব আপত্তিসহ মোট ৬৬ আপত্তির মধ্যে মাত্র ১৯টি আপত্তি কমিশনের পক্ষ থেকে নিষ্পত্তি করা গেলেও বাকি ৪৭টি আপত্তির জবাবে সন্তুস্ট হয়নি সিএজি অফিস। অডিট আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ড, মির্জা আবদুল জলিল সমকালকে জানান, সব আপত্তি-অভিযোগ সঠিক তবে এসব আপত্তির কোনোটাই বর্তমান কমিশনের গত তিন বছরের মেয়াদে সংঘটিত হয়নি। বরং পুরনো অনেক আপত্তি তার সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি বলেন, উত্তারাধিকার সূত্রে কমিশনের ঘাড়ে এসব অডিট আপত্তি এসে পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এসব আপত্তি নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.