দুর্ঘটনা :কান্না থামে না

কারও বাসায় বেড়াতে গেলেও মায়ের হাতে ছাড়া খাবার খেতে চাইত না নেহা। মা-ই ছিল নেহার সবকিছু। চোখের সামনে সেই মায়ের মৃত্যু রাজধানীর উদয়ন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী শিশু নেহা কোনোভাবেই মানতে পারছে না। গত ১০ নভেম্বর রাজধানীর আসাদ গেটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন নেহার মা মাসুদা বেগম চাঁদনী । ঢাকার পলাশী এলাকার বাসা থেকে বান্ধবীর স্বামী মোফাজ্জেল হোসেনের সঙ্গে মেয়ে নেহাকে নিয়ে বান্ধবীর বাসা উত্তরায়


যাচ্ছিলেন তারা। আসাদ গেটে আসার পর পেছন থেকে দ্রুতগামী একটি বাস তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে চাঁদনী বাসের চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। মায়ের মৃত্যু এলামেলো করে দিয়েছে নেহার পৃথিবী।
২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ডেমরা থানার সারুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় কাজী ২৮ বছরের মোজাফফর হোসেন বট্টু তার দুই বন্ধুর সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন কাজের উদ্দেশে। দনিয়ার সাইনবোর্ড মাতৃসদন এলাকায় হঠাৎ একটা পিকআপ সজোরে ধাক্কা দেয় তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলকে। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে বট্টু ঘটনাস্থলেই মারা যান। গোটা পরিবারটিই ছিল তার ওপর নির্ভরশীল। ক্যান্সারের অসহ্য যন্ত্রণার সঙ্গে সন্তান হারানোর তীব্র শোক নিয়ে বট্টুর বাবা মারা গেছেন কিছুদিন আগে। আর বট্টুর মা জহুরা বেগম ছেলের ছবি বুকে নিয়ে সারাদিনই অশ্রু ফেলেন। বট্টুর চাচাতো ভাই ডেমরা সারুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি রিপন বলেন, বট্টুর মৃত্যুতে এ পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। তার মতে, মোটরসাইকেল বা অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে গণসচেতনতাও গড়ে তোলা প্রয়োজন।
গত ১৫ অক্টোবর বরিশালে মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহন হন সমকালের সাবেক অফিস সহকারী নুর আলম। বরিশাল শহরের বিমানবন্দর থানার ছয়মাইল এলাকায় একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। এভাবে তরুণ ছেলেকে হারিয়ে নুর আলমের বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। আর নুর আলমের ১৮ মাস বয়সী একমাত্র সন্তান ঐশী কোনদিনই বুঝতে পারবে না বাবার আদর স্নেহ কেমন। একটি দুর্ঘটনা পিতৃহীন শিশুটির জীবনের ছকই পাল্টে দিয়েছে।
পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করে মোটরসাইকেল কেনার টাকা জোগাড় করেছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ইলিয়াস আহমেদ মজুমদার। ২০১০ সালের ২৪ এপ্রিল নিজের কেনা নতুন মোটরসাইকেলে চড়ে বন্ধুসহ কুমিল্লা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কাছাকাছি পেঁৗছতে একটা ক্যাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ওই জায়গাতেই নিহত হন ইলিয়াস। ইলিয়াসের বাবা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বসবাসরত বশির আহমেদ মজুমদার বলেন, মোটরসাইকেল হলো মরণফাঁদ। আমি সবসময় নিষেধ করতাম। এজন্য নিজেই কিনেছিল মোটরসাইকেলটি। আর এটিই ওর মৃত্যু ডেকে আনলো। তার মতে, মোটরসাইকেল আরোহীদের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ করতে, হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে আরও কঠোর আইন হওয়া উচিত।
ষ নাহিদ মিতুল

No comments

Powered by Blogger.