মসলায় ভেজাল-প্রতারণার শেষ কোথায়?

যারা জাদুবিদ্যা রপ্ত করেছেন, তাদের পক্ষে বিভ্রম তৈরি করা সহজ। হাজার লোকের সামনে আস্ত ট্রেন হাপিস করা কিংবা লোকচক্ষুর সামনে একজনের বুকে ছুরি চালিয়ে পরক্ষণে আবার তাকেই জ্যান্ত হাজির করার মতো অসম্ভব কাজ তারা অনায়াসে করতে পারেন। বিভ্রম তৈরির এমন ক্ষমতার জন্য জাদুকররা জনপ্রিয়। মানুষ তাদের কৌশল ও কসরত দেখে আনন্দ লাভ করে। আমাদের সমাজে আরেক ধরনের লোক আছেন যারা জাদুকর না হলেও বিভ্রম


তৈরির ক্ষমতা অসামান্য। সাধারণ ভাষায় তারা প্রতারক বলে অভিহিত হয়। এই প্রতারক গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য এতটাই যে হাজার মানুষকে ধাপ্পা দেওয়া তাদের জন্য সামান্য কাজ। যে বস্তুটিকে মরিচের গুঁড়া মনে করে কিনে বাড়ি আনছে ক্রেতা, সেটি যে আসলে কাপড়ের রঙ তা কোনোভাবেই জানা যাচ্ছে না। হলুদ মনে করে যা তরকারিতে দেওয়া হচ্ছে তা আসলে কাঠের গুঁড়া। এমনি করে যাকে বিশুদ্ধ পানি মনে করে পান করছেন হাজারো মানুষ তা আসলে বিশুদ্ধ নয়, যে বস্তুকে তেল মনে করা হচ্ছে তা তেল নয়, যাকে ফল মনে করা হচ্ছে তা আসলে কীটনাশকের গোলা। প্রতারণার গল্পের কোনো শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে, বাজারে গিয়ে যদি বিশুদ্ধ কোনো দ্রব্যের সন্ধান করেন কেউ তবে তাকে খালি হাতে ফিরতে হবে ঘরে। কোনো সংস্থা যদি ভেজালদ্রব্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে নিষ্ঠার সঙ্গে তবে বাজার রাতারাতি ফাঁকা হয়ে যাবে। তাই ভেজালেই অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে এ দেশের ক্রেতা-ভোক্তারা। ভেজালের জাদুকরদের হাত থেকে রেহাই নেই কারও। এমনই কিছু জাদুকরের দেখা মিলেছে সাম্প্রতিক ভেজালবিরোধী অভিযানে। গুঁড়া মরিচে রঙ, হলুদে কাঠের গুঁড়া মিশিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তারা। বিএসটিআইর লোগো নকল করে পণ্য বাজারজাত করেছে। ভেজালবিরোধী অভিযানে ধাপ্পাবাজ, প্রতারকদের ধরা পড়ার সংবাদ মাঝে মধ্যে আশান্বিত করে বটে, কিন্তু ভেজালের সমুদ্রে এটি প্রায় নুড়িপাথরের ঢিলের সমতুল্য। অথচ এই সর্বব্যাপ্ত ভেজাল প্রজন্মের পর প্রজন্মকে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু ভেজাল রোধের ব্যাপকভিত্তিক অভিযান নেই, ভেজালদ্রব্য নিরোধে আইন নেই। ক্রেতা-ভোক্তাদের পক্ষ থেকে বিহিত চাইবার উপায় নেই। ভেজালের আধিপত্য রোধ করতে এসবের বিকল্প সত্যিই নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক সংবাদ কোথায়?
 

No comments

Powered by Blogger.