উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নূ্যনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার রাখা বাধ্যতামূলক

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে নিজ কোম্পানির কমপক্ষে ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার রাখা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি। বর্তমানে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের একক বা সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ উলি্লখিত সীমার কম রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার কিনে শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে
যাচ্ছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য থেকে কমপক্ষে একজন পরিচালক রাখার বিধান রেখে নির্দেশনা জারি করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশনের নিয়মিত সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে সংকট নিরসনে সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করতে যাচ্ছে_ এমন খবরে গত বুধবার থেকেই দেশের উভয় শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৮০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা গত প্রায় চার মাসের সর্বোচ্চ। গতকাল সাধারণ মূল্যসূচক বেড়েছে ২৭৪ পয়েন্ট।
উদ্যোক্তাদের শেয়ার : উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার রাখার বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান। তিনি জানান, গতকাল অনুষ্ঠিত সংস্থার ৪০৭তম নিয়মিত কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির গেজেট আকারে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে আবার মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদন এবং কোনো উদ্যোক্তা ও পরিচালকের শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর অনুমোদন করা হবে না।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদও অনুরূপ একটি সুপারিশ করেছিল। তবে সাইফুর রহমান জানান, ডিএসইর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, সংস্থা বহুদিন আগে থেকেই এ নীতি প্রণয়নের কাজ করছে। এর আগে সমকালে '২ শতাংশ শেয়ারের মালিক নিয়ন্ত্রণ করছে ৯৮ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানি' শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।
নতুন এ নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের মোট শেয়ার রাখার পরিমাণ ৩০ শতাংশেরও কম, সেগুলোর চাহিদা ও শেয়ারদর বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা এসইসির সিদ্ধান্তকে 'বাস্তবভিত্তিক' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এসইসির মুখপাত্র জানান, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের প্রত্যেককে নূ্যনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। বর্তমানে কোনো পরিচালকের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ২ শতাংশের কম হলে পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আগেই তাকে ওই পরিমাণ শেয়ার ২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে যাদের মোট শেয়ার ধারণের পরিমাণ কোম্পানির মোট শেয়ারের ৫ শতাংশ বা তার বেশি থাকবে, তিনি শেয়ারহোল্ডারদের কর্তৃক পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য হবেন।
সাইফুর রহমান আরও জানান, কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ এসইসির নতুন এ নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হলে সে কোম্পানি রাইট শেয়ার বা পুনঃআইপিও প্রক্রিয়ায় মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদন পাবে না। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের কম রয়েছে, সেসব কোম্পানির সব উদ্যোক্তা ও পরিচালক নিজেদের সাধারণ বা বোনাস শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।
উলি্লখিত সিদ্ধান্ত ডিএসইর সুপারিশের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুর রহমান জানান, ডিএসইর সুপারিশের ভিত্তিতে নয়, কমিশন কয়েক মাস আগে থেকেই এ বিষয়ে নীতি-পরিকল্পনা প্রণয়ন করার পরিকল্পনা করে আসছে।
নতুন এ নির্দেশনা জারির কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশন লক্ষ্য করছে, কিছুসংখ্যক কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা ২ শতাংশ বা তারও কম শেয়ার ধারণ করেও পুরো কোম্পানির নীতি নির্ধারণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। একই সঙ্গে তারা কোম্পানি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানা থাকায় শেয়ার কারসাজিও করে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব অনৈতিক পথ বন্ধ করতেই এসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বেশি শেয়ার থাকায় তারা কোম্পানির সমৃদ্ধি ও আয় বৃদ্ধিতে আরও সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল হবেন বলে মনে করে এসইসি। এ ছাড়া কোম্পানিতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বাজার পরিস্থিতি : দরপতন ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণার পর বুধবার থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে এসেছে দেশের উভয় শেয়ারবাজার। গতকালও এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৫৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৫০টিরই দর বেড়েছে। কমেছে মাত্র আটটির দর। মোট লেনদেন গত ২ আগস্টের পর প্রায় চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮০২ কোটি ৯২ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ সূচক ২৭৪ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে ৫৫৯৬ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের ক'দিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল ডিএসইতে দিনের লেনদেনের শুরু হয় সব শেয়ারের দর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি দিয়ে। দর বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেন সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ শেয়ার বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে লেনদেনের বেশির ভাগ সময়ই বেশির ভাগ কোম্পানির লেনদেন একপ্রকার থমকে ছিল। বিকেল ৩টায় লেনদেনের শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ১০২টি কোম্পানির শেয়ার দিনে সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধির সীমায় (সার্কিট ব্রেকার) লেনদেন হয়েছে এবং এসব শেয়ারের কোনো বিক্রেতা ছিল না।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৮২টিরই দর বেড়েছে। নির্বাচিত খাত সূচক ৪৮৮ পয়েন্ট বেড়ে ক্লোজ হয়েছে ১০১৭০ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার।

No comments

Powered by Blogger.