দিল্লির বিবৃতি-বাঁধ হবে, তবে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে না

বিতর্কিত টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে অগোচরে চুক্তি করার বিষয়টি স্বীকার করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিষ্ণু প্রকাশ গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে ভারতের অগ্রগতির কথা জানিয়ে বলেন, ওই প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। প্রকল্পের আওতায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ও চাষাবাদের জন্য পানি না সরানোর কথা ২০০৯ সালে ভারত সফরকারী বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলকে অবহিত করা হয়েছিল বলেও তিনি জানান।


মুখপাত্রের বিবৃতিটি গতকাল তাঁর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, 'টিপাইমুখ জলবিদ্যুতের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন আমরা দেখেছি। যৌথ অংশীদারিত্বের একটি কম্পানি (জেভিসি) প্রতিষ্ঠার জন্য গত ২২ অক্টোবর মণিপুর সরকার, ন্যাশনাল হাইড্রোপাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি) ও সুতলেজ জলবিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের (এসজেভিএন) মধ্যে সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরই সাম্প্রতিক সময়ের একমাত্র অগ্রগতি। টিপাইমুখ হাইড্রোইলেকট্রিক করপোরেশন লিমিটেড বা সংশ্লিষ্ট কম্পানির নিবন্ধক কর্তৃক অনুমোদিত অন্য কোনো নামে কম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হবে।'
বিবৃতির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়, 'এটা স্মরণ করা যেতে পারে যে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী ও বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের বাংলাদেশ সংসদীয় প্রতিনিধিদল ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ২০০৯ সালে ভারত সফর করেন। প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটির মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকছে এবং এর মাধ্যমে সেচের জন্য পানি সরিয়ে নেওয়া হবে না বলে ওই প্রতিনিধিদলকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।'
তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়, 'এরপর ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মহামান্য শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী (ড. মনমোহন সিং) আবার আশ্বাস দিয়েছেন যে টিপাইমুখ প্রকল্পে ভারত এমন কিছু করবে না; যার ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় আবারও ওই আশ্বাস দেওয়া হয়।'
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নয়াদিলি্লতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই বিবৃতি দেয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস বলেছেন, ভারতের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য পাওয়ার পরই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিক্রিয়া জানাবে। এর আগে সোমবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারত তখনো কিছু জানায়নি। বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উজানে আসামের বরাক নদের ওপর বাঁধ নির্মাণ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগের কথা কয়েক বছর আগে জানাজানি হওয়ার পর এ দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা ওই বাঁধের কারণে এ দেশে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন। খোদ ভারতেও ওই বাঁধ নিয়ে বিতর্ক আছে। বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতায় বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু না করার আশ্বাস দেয় ভারত সরকার। এরপর হঠাৎ করেই গত শুক্রবার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে বিনিয়োগ চুক্তির খবর সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উষ্ণতম এ সময়ে এ দেশকে না জানিয়ে গোপন চুক্তি করায় তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.