অভিন্ন নদ-নদীতে হস্তক্ষেপ করার আগে আলোচনার তাগিদ ঢাকার

রাকের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদ-নদীগুলোতে হস্তক্ষেপ (ইন্টারভেন) করার আগে এ দেশের সঙ্গে পরামর্শ করার তাগিদ দিয়েছে ঢাকা। বরাক নদের ওপর টিপাইমুখ এলাকায় প্রকল্প নিয়ে অব্যাহত বিতর্কের মুখে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। এতে বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে বলে সরাসরি উল্লেখ করা হলেও টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প নিয়ে ভারতকে স্বচ্ছতার


সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং বলা হয়েছে, এটি বোঝাপড়ায় ঘাটতি দূর করতে বা বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রশমনে ভূমিকা রাখবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি তাৎক্ষণিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, তারা ভারত থেকে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার প্রতীক্ষায় আছে। গতকাল সন্ধ্যার ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারত থেকে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। বরং গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তার কয়েকটি বাক্য উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়_ভারতের মণিপুর রাজ্যের বরাক নদের প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। এ ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিও সরকার লক্ষ্য করেছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্প একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে, যাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া সেচের মতো কারণে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে নদ থেকে পানি প্রত্যাহার করা হবে না।'
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়, এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির নিম্নোক্ত অংশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
'২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মহামান্য শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী (ড. মনমোহন সিং) পুনরায় আশ্বাস দিয়েছেন যে টিপাইমুখ প্রকল্পে ভারত এমন কিছু করবে না, যার ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর (ড. মনমোহন সিং) সফরে আবারও ওই আশ্বাস দেওয়া হয়।'
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়, সর্বোচ্চ পর্যায় আশ্বাসের বাক্য ও মর্মকে ধারণ করে, একই অববাহিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বরাকের মতো অভিন্ন নদ-নদীতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ (ইন্টারভেনশন) করার আগে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করতে চায়।
বিজ্ঞপ্তির চতুর্থ ও শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান আন্তরিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ আশা করে যে ভারত সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব তথ্য এবং এ প্রকল্প বিষয়ে আরো কোনো উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে এ দেশকে অবহিত করবে। বোঝাপড়ায় ফাঁক এড়ানো বা বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রশমনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি সূত্রে জানা যায়, টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ নিয়ে দিলি্ল থেকে পাঠানো কিছু তথ্য গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে পেঁৗছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তা পর্যালোচনার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও পরামর্শ নেন। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

No comments

Powered by Blogger.