তবুও জাপার অবস্থান পরিষ্কার হলো না
সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী প্রশ্নোত্তর পর্বের পরও পরিষ্কার হলো না জাতীয় পার্টি পুরোদমে নির্বাচনে আছে কি না। যদিও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন; তাঁর পাশে ছিলেন না দলটির মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন এমন অনেক নেতাই।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দাবি করেছেন, দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিএমএইচে, জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ শারীরিকভাবে অসুস্থ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির প্রধান জি এম কাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আলাদাভাবে দলের সভাপতিমণ্ডলীর কে, কোথায় আছেন তার উত্তর তিনি দিতে পারবেন না। তবে তিনি দাবি করেছেন, নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিটি শব্দ এরশাদের অনুমোদিত। ইশতেহারটি সভাপতিমণ্ডলীর সভায় অনুমোদন পেয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, দেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমের সামনে নির্বাচনী ইশতেহার তাঁরা ঘোষণা করছেন। এটি বিশ্বাস করা না-করা সংবাদমাধ্যমের ওপর তাঁরা ছেড়ে দিয়েছেন। আজ আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পাশে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়ণগঞ্জের নাসিম ওসমান, তাজুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী মাঈদুল ইসলাম প্রমুখ।
জাতীয় পার্টির যেকোনো অনুষ্ঠানে দলটির প্রেস শাখা সাংবাদিকদের অবহিত করলেও আজকের ইশতেহার ঘোষণা সম্পর্কে শাখাটি ছিল নীরব। গতকাল বুধবার রাতে জাতীয় পার্টির কোনো কোনো নেতা মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে সাংবাদিকদের ইশতেহার ঘোষণা হবে বলে জানান। তবে, জাতীয় পার্টির নির্বাচনমুখী অংশটির দাবি, এরশাদ জানেন আজ ইশতেহার ঘোষণা হচ্ছে। তিনি জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ডের প্রধান, তিনি যাঁদের মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁরাই লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আছেন। ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে তিনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দাবি করেন, এরশাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এরশাদ তাঁকে বলেছেন, ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারণ মাঠ পর্যায়ে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত ছিলেন। এখন তাঁর শঙ্কা কেটে গেছে।
প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা, জাসদের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, উপস্থিত ছিলেন দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির ইশতেহার ঘোষণা করেন দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
ইশতেহারের স্লোগান‘শান্তির জন্য পরিবর্তন—পরিবর্তনের লক্ষ্যে জাতীয় পার্টি’।গালভরা স্লোগান হলেও তিন পৃষ্ঠার ইশতেহারটি পড়তে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সময় লেগেছে মাত্র মিনিট পাঁচেক।ইশতেহারে মোটা দাগে সব খাতের উন্নয়ন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।বিভিন্ন সময় এরশাদ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা-ও বলা হয়েছে।
তবে ইশতেহার ঘোষণার আগে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দলে কোনো বিদ্রোহী অংশ নেই। সবার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘সচরাচর যে অবস্থার মধ্যে নির্বাচন হয়, তেমনটা এবার নয়। নির্বাচনে অংশ নেওয়া একটি দলের সাংবিধানিক অধিকার, বর্জন করাও সাংবিধানিক অধিকার। জাতীয় পার্টি সব সময় সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন চেয়েছে। নব্বইয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর পার্টির চেয়ারম্যান জেলে ছিলেন, কিন্তু আমরা নির্বাচনে গেছি। ১৯৯৬ সালেও তিনি জেলে ছিলেন, ২০০১ সালে আদালতের নির্দেশে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি, তবু জাতীয় পার্টি নির্বাচন করেছে। চয়েসটা হলো সাংবিধানিক ও অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে।’ তিনি সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে জঙ্গিবাদের উত্থানের প্রসঙ্গও এনেছেন। আনিসুল ইসলাম বলেন, তাঁর দল লাঠি মিছিল পছন্দ করে না, বোমা দিয়ে মানুষ হত্যারও বিরোধী। সব দলের মধ্যে বোঝাপড়া করে সংকট সমাধান করা উচিত, কিন্তু বোমা মেরে যদি সমস্যার সমাধান হয়, তাহলে ১০ লাখ জঙ্গি যে তাণ্ডব করবে, সেটিও অন্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এরশাদ কি আটক, জাপা এখন কার নেতৃত্বে, মন্ত্রীরা কি সত্যিই পদত্যাগ করেছিলেন—প্রশ্নোত্তর পর্বের প্রায় পুরোটাজুড়েই ঘুরেফিরে আসে এরশাদ প্রসঙ্গ। তিনি সিএমএইচে কেন, কবে ছাড়া পাবেন, তাঁর অসুখটা কী—এসব প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, দলের মহাসচিব এসব প্রশ্নের জবাব দেবেন। এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে অনড় রয়েছেন বলে ববি হাজ্জাজ এক ভিডিওবার্তায় গতকাল জানিয়েছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ববি জাতীয় পার্টির গবেষণা সেলের একজন কর্মকর্তা। তিনি কীভাবে এসব কথা বলছেন তা তাঁর জানা নেই।
দলের নেতৃত্ব কার হাতে—জানতে চাইলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, চেয়ারম্যান তাঁর অবর্তমানে দল চালানোর দায়িত্ব রওশন এরশাদকে দিয়েছেন। এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের মহাসচিব ও জি এম কাদেরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে এরশাদ স্বাক্ষরিত চিঠি আছে সংবাদমাধ্যমের হাতে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দায়িত্ব রওশন এরশাদকে দেওয়া হয়েছে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদের কাছে প্রশ্ন ছিল, তাঁরা মন্ত্রিসভায় আছেন কি না। তিনি উত্তরে বলেছেন, তিনি মন্ত্রিসভায় আছেন। ডাকযোগে পাঠানো পদত্যাগপত্র পৌঁছেছে কি না, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।
বক্তব্য উপস্থাপনের সময় একাধিকবার সমাজ পরিবর্তনে যাঁরা ভূমিকা রাখেন তাঁদের সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁরা বোমা হামলার নিন্দা করছেন না।
No comments