কোরের মাথায় আফ্রিদির মুকুট by সৌমিত জয়দ্বীপ
সিডনি
হারবার ব্রিজ। খ্রিস্ট নববর্ষ বরণে রোশনাইয়ের চমকপ্রদ আভিজাত্য তাকে
জগদ্বিখ্যাত করেছে। রাত শেষে দিন আসে। তাসমান সাগরের ঠিক কোলঘেঁষে জেগে
থাকা সিডনিতে রোশনাইয়ের ফুলঝুরিও শেষ হয়। ওপারে তখন শুরু হয় ক্রিকেট।
নিউজিল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন সিডনির মতো
বিখ্যাত শহর নয়। সাগরটার ঠিক কোলেও নয় তার বসতি। ইন্টারনেট দুনিয়ার সব
মানচিত্রে খুঁজেও পাওয়া যায় না শহরটাকে। নতুন বছরের চমকে সেই অখ্যাত
কুইন্সটাউনই কি-না বিখ্যাত সিডনিকে হারিয়ে দিল! কোরে অ্যান্ডারসনকে
কুইন্সটাউন যুগ-যুগান্তর মনে রাখবে। মনে রাখবেন কোরে অ্যান্ডারসনও। 'দু'জনে
দোহার' হয়ে যে কীর্তিগাথা ও চমক রচিত হলো বছরের প্রথম দিন, 'সে কি ভোলা
যায়...'!
মাঠটার নাম কিন্তু কুইন্সটাউন ইভেন্টস সেন্টার ভ্রূ কুঁচকাচ্ছেন? 'ইভেন্টস সেন্টার'ই হলো সোজা-সহজ বাংলায় 'ঘটনাকেন্দ্র'। কী কাকতালীয় বলুন! শেক্সপিয়র বলেছিলেন, 'নামে কী এসে যায়?' কখনও কখনও নামে অনেক কিছুই এসে যায় মি. ড্রামাটিস্ট!
গুনে গুনে ৩৬ বল
নাহ, কোনো ড্রামা নয়। সত্যি ঘটনা। পাঁচ নম্বরে নেমে কোরে অ্যান্ডারসন তো করেছেন ৪৭ বলে অপরাজিত ১৩১ রান। কিন্তু ঠিক ওই গৌরবদীপ্ত মুহূর্তটার আগে কী যে পেয়ে বসেছিল তাকে কে জানে! ৩৫ বলে ৯৫ থেকে ৩৬ বলে ১০১। রেকর্ড! দ্রুততম সেঞ্চুরির একক কৃতিত্ব হতে হলে ছক্কা ছাড়া গতি নেই। গতি এমনই খেলা দেখাল যে, পৃথিবীর সব শক্তিই যেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানটার শরীরে ভর করল! যদিও বলেছেন পরে, 'না। আসলেই না। আমি ভাবছিলাম সেঞ্চুরিটা অনেক দ্রুত হয়ে গেল। আমার মাথাতেই আসেনি যে এটাই দ্রুততম।'
সোয়া সতেরো বছর ও আফ্রিদি ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরি দেখল বিশ্ব। ভেঙে গেল শহিদ আফ্রিদির সোয়া সতেরো বছর-পূর্ব রেকর্ড। সেঞ্চুরিটা ছিল ৩৭ বলে। তিন নম্বরে নেমে ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসটাকে আফ্রিদি অমর করেছিলেন এই জগদ্বিখ্যাত সেঞ্চুরি দিয়ে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে কেনিয়ার নাইরোবিতে। ১৯৯৬ সালের ৪ অক্টোবর। ১৬ বছরের সেই তরুণ আফ্রিদি আজ ক্যারিয়ারের প্রায় সায়াহ্নে। শেষবেলায় ৩৩ বছর বয়সী আফ্রিদি দেখলেন তার রেকর্ডকে 'গুডবাই' বলে বিশ্বক্রিকেট নতুন বছরে 'ওয়েলকাম' জানাচ্ছে ২৩ বছর বয়সী অ্যান্ডারসনের রেকর্ডটা! আফ্রিদির অনন্য মুকুটটা এখন অ্যান্ডারসনের মাথায়। আফ্রিদি তাকে চিনতেন না, চিনেছেন রেকর্ডটা ভেঙে দেওয়ার পর। 'অখ্যাত' সেই ছেলেটাই কিং হয়ে গেলেন!
৩৭-এ সাবধান!
এখন আর এই রেকর্ডের কথা বলা হলে, মুখস্থবিদের মতো '৩৭' বলা থেকে সাবধান! সোয়া সতেরো বছরের অভ্যাস সহজে যাওয়া কঠিনই। তবে, কাজটা কঠিনতম হয়ে যাবে হয়তো। কেন যাবে? কারণ, এই রেকর্ড একদিন আবারও ভাঙবে। মহান অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে 'ব্র্যাডম্যানীয় ৯৯.৯৬' ছাড়া সব রেকর্ডই ভাঙনের ভেলায় ভেসে যাবে হয়তো একদিন। কবে, তা মহাকাল জানে। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য_ এই তত্ত্ব বাদ দিয়েই বলা যায়, রেকর্ডটা আসলে ভাঙতই।
কেন ভাঙত রেকর্ডটা?
প্রধানত তিনটি কারণে ভাঙত এই রেকর্ড। প্রথমত, টি২০ ক্রিকেটের উল্লম্ফন। রমরমা বাণিজ্যের কালে তার বিশাল বিস্তৃতি। এই ক্রিকেটে-কালের অভিমুখ মারমার কাটকাট ব্যাটিং। চার-ছক্কার উত্তেজনায় 'ব্যাটিং ব্যাকরণ' এখানে অমান্য জ্ঞান করা যায়। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম বোলারটিও কখনও কখনও নতজানু এ কালে। 'শম্বুক গতি'র টেস্টেও এখন ওভারে ৪-৪.৫ রান নস্যি। এমন ব্যাটিং আজকের ক্রিকেট সংস্কৃতির মানদণ্ড। শহিদ আফ্রিদি যতদিন শীর্ষে থাকলেন, ততদিন সময় কোরে অ্যান্ডারসনকে তাই আজ কেউ দেবে না! কাজটা কঠিন। কিন্তু কঠিনতর নয়। তর্কটা হলো, পরিসংখ্যান বলছে, ওয়ানডে ম্যাচ হলেও, বৃষ্টির কারণে খেলা হয়েছে ২১ ওভার করে। অর্থাৎ টি২০-ই তো! কিন্তু ক্রিকেট মানে শুধু এই একটা ম্যাচ নয়। আরও ওয়ানডে হবে। সময়ই উত্তর দেবে। কিন্তু উত্তরটা সহজ করে দিয়েছে আসলে দ্বিতীয় কারণটা। ব্যাটিংকে মুশকিল আসান করার জন্য কী করা হয়নি ক্রিকেটে। এখন ওয়ানডে ক্রিকেটের ফিল্ডিংয়ে নিয়ম বদলেছে। নন পাওয়ার প্লেতে আগে বৃত্তবন্দি থাকত ৪ জন। এখন ৫ জন। মানে আগে বাইরে থাকতে পারত ৫ জন। এখন কমিয়ে হয়েছে ৪ জন! আর তৃতীয় কারণটা লঘু হলেও সত্য যে, পাওয়ার প্লে-২ ৩৫-৪০ ওভারে চলে যাওয়ায়, কোনো দলের রান সংগ্রহের অবস্থা শক্তিশালী থাকলে যদি কোনো ব্যাটসম্যান নেমেই আক্রমণ শুরু করেন, তাহলে অবশ্যই শেষ ১৫ ওভারের মধ্যে সেঞ্চুরি সম্ভব। টি২০-র যুগে এতসব ব্যাটিংবান্ধব নিয়মে ব্যাটসম্যানদের তো পোয়া বারো হবেই! রেকর্ডটা তাই ভাঙতই। ১৪ ছয়, ৬ চারে সাজানো অ্যান্ডারসনের রেকর্ডটাও আসলে ভাঙবে। কাল নয়তো পরশু। সেই সময়ের অপেক্ষা। তবে, তখন পর্যন্ত 'কোরে ওয়াজ দ্য কিং অব কুইন্সটাউন' বলাতে একচুলও ভুল নেই!
মাঠটার নাম কিন্তু কুইন্সটাউন ইভেন্টস সেন্টার ভ্রূ কুঁচকাচ্ছেন? 'ইভেন্টস সেন্টার'ই হলো সোজা-সহজ বাংলায় 'ঘটনাকেন্দ্র'। কী কাকতালীয় বলুন! শেক্সপিয়র বলেছিলেন, 'নামে কী এসে যায়?' কখনও কখনও নামে অনেক কিছুই এসে যায় মি. ড্রামাটিস্ট!
গুনে গুনে ৩৬ বল
নাহ, কোনো ড্রামা নয়। সত্যি ঘটনা। পাঁচ নম্বরে নেমে কোরে অ্যান্ডারসন তো করেছেন ৪৭ বলে অপরাজিত ১৩১ রান। কিন্তু ঠিক ওই গৌরবদীপ্ত মুহূর্তটার আগে কী যে পেয়ে বসেছিল তাকে কে জানে! ৩৫ বলে ৯৫ থেকে ৩৬ বলে ১০১। রেকর্ড! দ্রুততম সেঞ্চুরির একক কৃতিত্ব হতে হলে ছক্কা ছাড়া গতি নেই। গতি এমনই খেলা দেখাল যে, পৃথিবীর সব শক্তিই যেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানটার শরীরে ভর করল! যদিও বলেছেন পরে, 'না। আসলেই না। আমি ভাবছিলাম সেঞ্চুরিটা অনেক দ্রুত হয়ে গেল। আমার মাথাতেই আসেনি যে এটাই দ্রুততম।'
সোয়া সতেরো বছর ও আফ্রিদি ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরি দেখল বিশ্ব। ভেঙে গেল শহিদ আফ্রিদির সোয়া সতেরো বছর-পূর্ব রেকর্ড। সেঞ্চুরিটা ছিল ৩৭ বলে। তিন নম্বরে নেমে ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসটাকে আফ্রিদি অমর করেছিলেন এই জগদ্বিখ্যাত সেঞ্চুরি দিয়ে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে কেনিয়ার নাইরোবিতে। ১৯৯৬ সালের ৪ অক্টোবর। ১৬ বছরের সেই তরুণ আফ্রিদি আজ ক্যারিয়ারের প্রায় সায়াহ্নে। শেষবেলায় ৩৩ বছর বয়সী আফ্রিদি দেখলেন তার রেকর্ডকে 'গুডবাই' বলে বিশ্বক্রিকেট নতুন বছরে 'ওয়েলকাম' জানাচ্ছে ২৩ বছর বয়সী অ্যান্ডারসনের রেকর্ডটা! আফ্রিদির অনন্য মুকুটটা এখন অ্যান্ডারসনের মাথায়। আফ্রিদি তাকে চিনতেন না, চিনেছেন রেকর্ডটা ভেঙে দেওয়ার পর। 'অখ্যাত' সেই ছেলেটাই কিং হয়ে গেলেন!
৩৭-এ সাবধান!
এখন আর এই রেকর্ডের কথা বলা হলে, মুখস্থবিদের মতো '৩৭' বলা থেকে সাবধান! সোয়া সতেরো বছরের অভ্যাস সহজে যাওয়া কঠিনই। তবে, কাজটা কঠিনতম হয়ে যাবে হয়তো। কেন যাবে? কারণ, এই রেকর্ড একদিন আবারও ভাঙবে। মহান অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে 'ব্র্যাডম্যানীয় ৯৯.৯৬' ছাড়া সব রেকর্ডই ভাঙনের ভেলায় ভেসে যাবে হয়তো একদিন। কবে, তা মহাকাল জানে। রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য_ এই তত্ত্ব বাদ দিয়েই বলা যায়, রেকর্ডটা আসলে ভাঙতই।
কেন ভাঙত রেকর্ডটা?
প্রধানত তিনটি কারণে ভাঙত এই রেকর্ড। প্রথমত, টি২০ ক্রিকেটের উল্লম্ফন। রমরমা বাণিজ্যের কালে তার বিশাল বিস্তৃতি। এই ক্রিকেটে-কালের অভিমুখ মারমার কাটকাট ব্যাটিং। চার-ছক্কার উত্তেজনায় 'ব্যাটিং ব্যাকরণ' এখানে অমান্য জ্ঞান করা যায়। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম বোলারটিও কখনও কখনও নতজানু এ কালে। 'শম্বুক গতি'র টেস্টেও এখন ওভারে ৪-৪.৫ রান নস্যি। এমন ব্যাটিং আজকের ক্রিকেট সংস্কৃতির মানদণ্ড। শহিদ আফ্রিদি যতদিন শীর্ষে থাকলেন, ততদিন সময় কোরে অ্যান্ডারসনকে তাই আজ কেউ দেবে না! কাজটা কঠিন। কিন্তু কঠিনতর নয়। তর্কটা হলো, পরিসংখ্যান বলছে, ওয়ানডে ম্যাচ হলেও, বৃষ্টির কারণে খেলা হয়েছে ২১ ওভার করে। অর্থাৎ টি২০-ই তো! কিন্তু ক্রিকেট মানে শুধু এই একটা ম্যাচ নয়। আরও ওয়ানডে হবে। সময়ই উত্তর দেবে। কিন্তু উত্তরটা সহজ করে দিয়েছে আসলে দ্বিতীয় কারণটা। ব্যাটিংকে মুশকিল আসান করার জন্য কী করা হয়নি ক্রিকেটে। এখন ওয়ানডে ক্রিকেটের ফিল্ডিংয়ে নিয়ম বদলেছে। নন পাওয়ার প্লেতে আগে বৃত্তবন্দি থাকত ৪ জন। এখন ৫ জন। মানে আগে বাইরে থাকতে পারত ৫ জন। এখন কমিয়ে হয়েছে ৪ জন! আর তৃতীয় কারণটা লঘু হলেও সত্য যে, পাওয়ার প্লে-২ ৩৫-৪০ ওভারে চলে যাওয়ায়, কোনো দলের রান সংগ্রহের অবস্থা শক্তিশালী থাকলে যদি কোনো ব্যাটসম্যান নেমেই আক্রমণ শুরু করেন, তাহলে অবশ্যই শেষ ১৫ ওভারের মধ্যে সেঞ্চুরি সম্ভব। টি২০-র যুগে এতসব ব্যাটিংবান্ধব নিয়মে ব্যাটসম্যানদের তো পোয়া বারো হবেই! রেকর্ডটা তাই ভাঙতই। ১৪ ছয়, ৬ চারে সাজানো অ্যান্ডারসনের রেকর্ডটাও আসলে ভাঙবে। কাল নয়তো পরশু। সেই সময়ের অপেক্ষা। তবে, তখন পর্যন্ত 'কোরে ওয়াজ দ্য কিং অব কুইন্সটাউন' বলাতে একচুলও ভুল নেই!
No comments