প্রথম দিনে সাড়া কম by রাশেদ মেহেদী/ইন্দ্রজিৎ সরকার
অবরোধ সত্ত্বেও বুধবার দূরপাল্লার যান চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের |
অবরোধে
সাড়া কমছে। 'গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা' কর্মসূচি পণ্ড হওয়ার পর
অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় বিএনপিসহ ১৮ দল। গতকাল প্রথম দিনে
জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। রাজধানীসহ মহানগরগুলোতে প্রায় স্বাভাবিকভাবে
গণপরিবহন চলাচল করে। দূরপাল্লার অনেক রুটেই যাত্রীবাহী বাসসহ পণ্য
পরিবহনকারী যান চলেছে। যদিও যাত্রী কম থাকার অভিযোগ তুলেছেন বাস মালিকরা।
রাজধানীর মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট
অঞ্চলের বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করেছে। চট্টগ্রাম থেকেও বিভিন্ন রুটে
দূরপাল্লার যান চলাচল করে। তবে গাবতলী টার্মিনাল থেকে ঢাকা-পাটুরিয়া ছাড়া
অন্য কোনো রুটে বাস চলেনি। মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল
প্রায় স্বাভাবিক ছিল। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা বিলম্বে ছাড়লেও অনেকটা
স্বাভাবিকভাবেই চলেছে ট্রেন। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। সন্ধ্যায় লঞ্চও ছেড়ে
গেছে যথানিয়মে। রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, মার্কেট,
দোকানপাটও খোলা ছিল।
একমাত্র চাঁদপুর ছাড়া অন্য কোথাও বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সেখানে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ভোলায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। কুড়িগ্রামের উলিপুরে ২টি নৈশ কোচ ভাংচুর হয়। এছাড়া আর কোথাও সহিংসতা ও নাশকতার
খবর পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বেশ কিছু কারণে অবরোধ কর্মসূচি অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে। প্রথমত মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে সরকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। পণ্যসহ অন্যান্য পরিবহনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী নেমেছে। মহাসড়ক আগের চেয়ে অনেকটা শঙ্কামুক্ত। তবে মানুষের মাঝে আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটেনি। বাস মালিকরা জানান, তারা দূরপাল্লার বাস চালাতে প্রস্তুত। তবে প্রয়োজনীয় যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম থেকেও দূরপাল্লার বাস মালিকরা একই অভিযোগ করেছেন। তবে তারা আশা করছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই হয়ত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। একটি সূত্রে জানা যায়, জামায়াত অনেকটা পিছুটান দিয়েছে। মূলত মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতায় বড় ভূমিকা পালন করছিল জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। সম্প্রতি যৌথবাহিনীর অভিযানে জামায়াতের নাশকতাকারী ক্যাডাররা অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। তাছাড়া টানা এই কর্মসূচির কারণে সক্রিয় কর্মীরাও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তবে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত ও বিএনপি ভোটের দিনে নাশকতা করতে পারে। সে কারণে তারা শক্তি সঞ্চয় করছে। সম্ভবত এ কারণে গতকাল তাদের রাজপথে তেমন সক্রিয় অবস্থায় দেখা যায়নি। আজও কর্মসূচি অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে হতে পারে বলে তাদের ধারণা।
মহাসড়কের চিত্র :রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল করেছে। তবে উত্তরবঙ্গের দূরপাল্লার বাস চলাচল করেনি। দুপুর ২টায় মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় বাস চলাচল করছে। টার্মিনালে কাউন্টার থেকে কর্মচারীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেক বাস চলাচল করছে। দীর্ঘপথে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ পাহারা থাকার কারণে বাস চালানো হচ্ছে। তবে একেবারে নতুন এবং অপেক্ষাকৃত বিলাসবহুল বাস ছাড়া হচ্ছে না। এছাড়া যাত্রী কম থাকার অভিযোগ করেছেন তারা।
অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রথম দিনে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জের বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তবে সেগুলোয় যাত্রীর সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে চলছিল না বাসগুলো। কিছু যাত্রী বাসে উঠে বসার পর পরিবহন কর্মীরা আরও যাত্রীর আশায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন।
সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন সমকালকে বলেন, বিভিন্ন গন্তব্যের বেশ কিছু বাস গতকাল সায়েদাবাদ থেকে ছেড়েছে। মোটামুটি সন্তোষজনক সংখ্যক যাত্রী পেলেই বাস ছাড়ছে। সব রুটের বাসই কম-বেশি চলছে। তার দাবি অনুযায়ী, গতকাল শতাধিক বাস চলাচল করেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, বেশিরভাগ পরিবহনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী রূপসী বাংলা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আবদুস সামাদ সমকালকে বলেন, তাদের কোনো বাস অবরোধে চলাচল করবে না। পথে কোথাও অবরোধ সমর্থকদের হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় মালিকপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।
কিছু বাস চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওগুলো দূরপাল্লার লোকাল বাস। পথের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে থেমে যাত্রী নেয়। ওই বাসগুলোর দাম কম হওয়ায় তারা রাস্তায় নামানোর ঝুঁকি নিতে পারে। অভিজাত পরিবহনগুলোর বাসের দাম অনেক বেশি। সেগুলো অবরোধে চালানোর ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।
গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে শুধু ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে বাস চলাচল করেছে। অন্য কোনো রুটে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন গন্তব্যের কিছু বাস যথারীতি চলাচল করেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সাভার, ধামরাই, পাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ, গাজীপুরের কিছু বাস ছেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকা থেকে ফরিদপুর ও খুলনা রুটে চলাচলকারী ঈগল পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের কর্মী রাসেল সমকালকে জানান, তাদের কোনো বাস ছাড়েনি। অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ার পরিকল্পনাও নেই তাদের।
প্রায় একই বক্তব্য ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহনের কর্মী মোশতাক হোসেন রেজা খানের। তিনি সমকালকে বলেন, যাত্রাপথে নিরাপত্তার শঙ্কা তো আছেই। তাছাড়া যাত্রীও মিলছে না। যাত্রী পেলে হয়তো কিছু বাস চালানো যেত।
তিনি জানান, দিনে না হলেও রাতে গাবতলী থেকে কিছু পরিবহনের বাস ছাড়ছে। উত্তরা পরিবহন সংস্থা, আরপি ও সুমন পরিবহনের মাগুরা ও ঝিনাইদহ রুটের কিছু বাস রাতে ছেড়ে যায়। সালাম পরিবহনের উত্তরবঙ্গগামী বাসও রাতে ছাড়ছে।
এদিকে, বাস চালানো নিয়ে গাবতলী টার্মিনালে পরিবহন কর্মীদের কিছুটা লুকোচুরি করতে দেখা যায়। দুপুরে উত্তরা পরিবহন সংস্থার কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মীরা লোকজন দেখলেই ডেকে জিজ্ঞাসা করছেন, কোথায় যাবেন? সাংবাদিক পরিচয়ে জানতে চাইলে, তারা বলেন, কোনো বাস চলছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লা সমকালকে বলেন, অনেক হয়েছে, এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকার মতো অবস্থা। এ কারণে অবরোধেও সায়েদাবাদ-মহাখালী থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আরও বাড়লে বাস চলাচলও বাড়বে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ কামাল হোসেন সমকালকে বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া বাস চলাচল করছে কোনো বাড়তি নিরাপত্তা ছাড়াই। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু এবং দৌলতদিয়া থেকে অন্যান্য রুটে নিরাপত্তার আশঙ্কায় গাবতলী থেকে সরাসরি বাস চলছে না। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় চলছে বলে তিনি জানান।
রেলপথের চিত্র : কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় স্বাভাবিকভাবেই ট্রেন চলাচল করেছে। তবে ট্রেন পথে ধীরগতিতে চলার কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে স্টেশনে আসছে। ফলে ফিরতি ট্রেনও কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমলাপুর স্টেশনের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আটটি ট্রেনের মধ্যে পাঁচটিই বিলম্বে ছাড়ে। তিনটি যথাসময়ে ছেড়ে যায়। ঢাকার বাইরে থেকেও ট্রেন স্বাভাবিকভাবেই এসেছে। বুধবার রেলপথে কোথাও নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, সেখান থেকে সব রুটে ট্রেন ছেড়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।
নদীপথের চিত্র : সদরঘাট থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ১১টি রুটে লঞ্চ ছেড়েছে। সেখানে যাত্রী মোটামুটি ভালোই ছিল। লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চ চলাচলে কোথাও কোনো বাধা আসেনি। নদীপথে অবরোধ হয়নি।
রাজধানীর চিত্র : সর্বশেষ 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' ঠেকাতে 'সরকারি অবরোধে' রাজধানীর রাস্তায় গণপরিবহন চলেনি বললেই চলে। বুধবার ডাকা ১৮ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রথম দিনের চিত্র ছিল সম্পূর্ণই ভিন্ন। এ দিন যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। মোটামুটি সিটি সার্ভিসের অধিকাংশ বাসই চলাচল করেছে। চলেছে অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, রিকশাসহ বিপুল সংখ্যক প্রাইভেট কারও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে যানজটের চিত্র দেখা যায়।
দুপুরের পর রাজধানীর বনানী, ফার্মগেট এলাকায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। জনমনে কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও বুধবার রাজধানীতে নাশকতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোথাও পিকেটিং কিংবা ঝটিকা মিছিল চোখে পড়েনি। রাজধানীতে স্বাভাবিকভাবেই খোলা ছিল দোকান-পাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
একমাত্র চাঁদপুর ছাড়া অন্য কোথাও বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সেখানে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ভোলায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। কুড়িগ্রামের উলিপুরে ২টি নৈশ কোচ ভাংচুর হয়। এছাড়া আর কোথাও সহিংসতা ও নাশকতার
খবর পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বেশ কিছু কারণে অবরোধ কর্মসূচি অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে। প্রথমত মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে সরকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। পণ্যসহ অন্যান্য পরিবহনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী নেমেছে। মহাসড়ক আগের চেয়ে অনেকটা শঙ্কামুক্ত। তবে মানুষের মাঝে আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটেনি। বাস মালিকরা জানান, তারা দূরপাল্লার বাস চালাতে প্রস্তুত। তবে প্রয়োজনীয় যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম থেকেও দূরপাল্লার বাস মালিকরা একই অভিযোগ করেছেন। তবে তারা আশা করছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই হয়ত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। একটি সূত্রে জানা যায়, জামায়াত অনেকটা পিছুটান দিয়েছে। মূলত মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতায় বড় ভূমিকা পালন করছিল জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। সম্প্রতি যৌথবাহিনীর অভিযানে জামায়াতের নাশকতাকারী ক্যাডাররা অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। তাছাড়া টানা এই কর্মসূচির কারণে সক্রিয় কর্মীরাও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তবে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত ও বিএনপি ভোটের দিনে নাশকতা করতে পারে। সে কারণে তারা শক্তি সঞ্চয় করছে। সম্ভবত এ কারণে গতকাল তাদের রাজপথে তেমন সক্রিয় অবস্থায় দেখা যায়নি। আজও কর্মসূচি অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে হতে পারে বলে তাদের ধারণা।
মহাসড়কের চিত্র :রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচল করেছে। তবে উত্তরবঙ্গের দূরপাল্লার বাস চলাচল করেনি। দুপুর ২টায় মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় বাস চলাচল করছে। টার্মিনালে কাউন্টার থেকে কর্মচারীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেক বাস চলাচল করছে। দীর্ঘপথে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ পাহারা থাকার কারণে বাস চালানো হচ্ছে। তবে একেবারে নতুন এবং অপেক্ষাকৃত বিলাসবহুল বাস ছাড়া হচ্ছে না। এছাড়া যাত্রী কম থাকার অভিযোগ করেছেন তারা।
অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রথম দিনে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জের বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তবে সেগুলোয় যাত্রীর সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে চলছিল না বাসগুলো। কিছু যাত্রী বাসে উঠে বসার পর পরিবহন কর্মীরা আরও যাত্রীর আশায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন।
সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন সমকালকে বলেন, বিভিন্ন গন্তব্যের বেশ কিছু বাস গতকাল সায়েদাবাদ থেকে ছেড়েছে। মোটামুটি সন্তোষজনক সংখ্যক যাত্রী পেলেই বাস ছাড়ছে। সব রুটের বাসই কম-বেশি চলছে। তার দাবি অনুযায়ী, গতকাল শতাধিক বাস চলাচল করেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, বেশিরভাগ পরিবহনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী রূপসী বাংলা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আবদুস সামাদ সমকালকে বলেন, তাদের কোনো বাস অবরোধে চলাচল করবে না। পথে কোথাও অবরোধ সমর্থকদের হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় মালিকপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।
কিছু বাস চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওগুলো দূরপাল্লার লোকাল বাস। পথের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে থেমে যাত্রী নেয়। ওই বাসগুলোর দাম কম হওয়ায় তারা রাস্তায় নামানোর ঝুঁকি নিতে পারে। অভিজাত পরিবহনগুলোর বাসের দাম অনেক বেশি। সেগুলো অবরোধে চালানোর ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।
গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে শুধু ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে বাস চলাচল করেছে। অন্য কোনো রুটে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন গন্তব্যের কিছু বাস যথারীতি চলাচল করেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সাভার, ধামরাই, পাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ, গাজীপুরের কিছু বাস ছেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকা থেকে ফরিদপুর ও খুলনা রুটে চলাচলকারী ঈগল পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের কর্মী রাসেল সমকালকে জানান, তাদের কোনো বাস ছাড়েনি। অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ার পরিকল্পনাও নেই তাদের।
প্রায় একই বক্তব্য ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহনের কর্মী মোশতাক হোসেন রেজা খানের। তিনি সমকালকে বলেন, যাত্রাপথে নিরাপত্তার শঙ্কা তো আছেই। তাছাড়া যাত্রীও মিলছে না। যাত্রী পেলে হয়তো কিছু বাস চালানো যেত।
তিনি জানান, দিনে না হলেও রাতে গাবতলী থেকে কিছু পরিবহনের বাস ছাড়ছে। উত্তরা পরিবহন সংস্থা, আরপি ও সুমন পরিবহনের মাগুরা ও ঝিনাইদহ রুটের কিছু বাস রাতে ছেড়ে যায়। সালাম পরিবহনের উত্তরবঙ্গগামী বাসও রাতে ছাড়ছে।
এদিকে, বাস চালানো নিয়ে গাবতলী টার্মিনালে পরিবহন কর্মীদের কিছুটা লুকোচুরি করতে দেখা যায়। দুপুরে উত্তরা পরিবহন সংস্থার কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মীরা লোকজন দেখলেই ডেকে জিজ্ঞাসা করছেন, কোথায় যাবেন? সাংবাদিক পরিচয়ে জানতে চাইলে, তারা বলেন, কোনো বাস চলছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লা সমকালকে বলেন, অনেক হয়েছে, এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকার মতো অবস্থা। এ কারণে অবরোধেও সায়েদাবাদ-মহাখালী থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আরও বাড়লে বাস চলাচলও বাড়বে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ কামাল হোসেন সমকালকে বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া বাস চলাচল করছে কোনো বাড়তি নিরাপত্তা ছাড়াই। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু এবং দৌলতদিয়া থেকে অন্যান্য রুটে নিরাপত্তার আশঙ্কায় গাবতলী থেকে সরাসরি বাস চলছে না। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় চলছে বলে তিনি জানান।
রেলপথের চিত্র : কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় স্বাভাবিকভাবেই ট্রেন চলাচল করেছে। তবে ট্রেন পথে ধীরগতিতে চলার কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে স্টেশনে আসছে। ফলে ফিরতি ট্রেনও কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমলাপুর স্টেশনের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আটটি ট্রেনের মধ্যে পাঁচটিই বিলম্বে ছাড়ে। তিনটি যথাসময়ে ছেড়ে যায়। ঢাকার বাইরে থেকেও ট্রেন স্বাভাবিকভাবেই এসেছে। বুধবার রেলপথে কোথাও নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, সেখান থেকে সব রুটে ট্রেন ছেড়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।
নদীপথের চিত্র : সদরঘাট থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ১১টি রুটে লঞ্চ ছেড়েছে। সেখানে যাত্রী মোটামুটি ভালোই ছিল। লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চ চলাচলে কোথাও কোনো বাধা আসেনি। নদীপথে অবরোধ হয়নি।
রাজধানীর চিত্র : সর্বশেষ 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' ঠেকাতে 'সরকারি অবরোধে' রাজধানীর রাস্তায় গণপরিবহন চলেনি বললেই চলে। বুধবার ডাকা ১৮ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রথম দিনের চিত্র ছিল সম্পূর্ণই ভিন্ন। এ দিন যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। মোটামুটি সিটি সার্ভিসের অধিকাংশ বাসই চলাচল করেছে। চলেছে অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, রিকশাসহ বিপুল সংখ্যক প্রাইভেট কারও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে যানজটের চিত্র দেখা যায়।
দুপুরের পর রাজধানীর বনানী, ফার্মগেট এলাকায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। জনমনে কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও বুধবার রাজধানীতে নাশকতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোথাও পিকেটিং কিংবা ঝটিকা মিছিল চোখে পড়েনি। রাজধানীতে স্বাভাবিকভাবেই খোলা ছিল দোকান-পাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
No comments