সমঝোতাই সময়ের দাবি by আবু সাঈদ খান
দেশকালভেদে
গণতন্ত্রের রকমফের আছে। 'মেইড ইন বাংলাদেশ গণতন্ত্র' এখন দুই ভাগে বিভক্ত।
একটি 'আওয়ামী গণতন্ত্র', অপরটি 'জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র'। বর্তমান সরকারের
গণতন্ত্র রক্ষার কর্মকাণ্ড দেখলে 'আওয়ামী গণতন্ত্রে'র নমুনা মিলবে। আর
বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষার নামে যা করছে, তার মাঝে 'জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রে'র
স্বরূপ মূর্তমান।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কর্মীবাহিনীকে
লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছে। কর্মীবাহিনী সে হুকুম পালনে
পারদর্শিতা দেখিয়ে চলেছে। গত ২৯ ডিসেম্বর খোদ রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকদের একটি মিছিলে চড়াও হয়ে তাদের ধরাশায়ী করেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে
ভিন্নমতাবলম্বীদের সভা পণ্ড করে দিয়েছে।সুপ্রিম কোর্টের সদর দরজা খুলে
সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগানরত আইনজীবী ও অন্যদের লাঠিপেটা করে গণতন্ত্রের
মর্মবাণী বুঝিয়ে দিতে কার্পণ্য করেনি। এতে একজন নারী আইনজীবী এখন হাসপাতালে
শয্যাশায়ী হয়ে 'গণতন্ত্রের বিরুদ্ধাচরণে'র ফল ভোগ করছেন। বিরোধী দল যাতে
গণতন্ত্রের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা
ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিরোধী দলের নেতারা যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপিসহ ১৮ দলের শীর্ষ নেতারা গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। কেবল
প্রকাশ্যে আছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। তার নিরাপত্তার ব্যাপারে
সরকার উদ্বিগ্ন! তাই কখনও বালুভর্তি ট্রাক, কখনও পুলিশভর্তি ভ্যান দিয়ে
ফটকের মুখ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে, যাতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে না
পারেন তিনি। সরকারদলীয় নেতাদের ভাষ্য, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই তাকে ২৯
ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগদানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তবে বিরোধী দলের নেত্রীর
সঙ্গে সাক্ষাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত
রবার্ট গিবসনকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। বালুর ট্রাক ও পুলিশের ভ্যান সরিয়ে
তাদের পথ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ দলীয় নেতাকর্মী, এমনকি সাংবাদিকদের প্রবেশে
বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতার বাড়ির ফটক থেকে বিএনপির নেতা শমসের
মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান প্রমুখকে ভ্যানে তুলে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের কোনো লুকোচুরি নেই। ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা
স্পষ্ট করে বলছেন, গণতন্ত্র বাঁচাতে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন
হচ্ছে। যে নির্বাচনে বিরোধী দল না আসায় অনেক আসনে ক্ষমতাসীন দলের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট আসনে
নির্বাচন জমবে না বলে সরকারের মন্ত্রীরা স্বীকার করছেন। তারা বলছেন, তাদের
করার কী ছিল? গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার স্বার্থে দশম নির্বাচন হচ্ছে,
বিরোধী দল সমঝোতায় এলে একাদশ নির্বাচন নিয়ে কথা হবে।
বলা হচ্ছে, বিএনপির শাসনামলে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন কি হয়নি? আলবৎ হয়েছে। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার একগুঁয়েমি সংকটের জন্ম দিয়েছে এবং তা দীর্ঘায়িত করেছে। বিরোধী দলের ওপর নির্বিচারে দমন-পীড়ন করেছে। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচন করেছে খালেদা সরকার। (তবে এতে শেষ রক্ষা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হওয়ার পর নির্বাচিত ষষ্ঠ সংসদ বিলুপ্ত করতে হয়েছে)। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে জঙ্গি ও মৌলবাদীদের নিয়ে খেলেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা সংঘটিত করেছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রাণে বাঁচলেও আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। নানাভাবে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চলেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি বিরোধী পক্ষের ওপর নির্যাতনের সেই অজুহাত তুলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার কি তার পুনরাবৃত্তি করবে বা বিএনপির শাসনামলকে টেক্কা দিয়ে বিরোধী পক্ষকে দমন-পীড়ন করবে?
এটি কারও না বোঝার কথা নয় যে, সেদিন বিএনপি যা করেছিল, গণতন্ত্রের জন্য করেনি। ক্ষমতা রক্ষার জন্যই বিরোধী পক্ষের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছিল। আজও আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকার যা করছে, তা গণতন্ত্রের স্বার্থেই নয়, ক্ষমতায় আরেক মেয়াদে আসার জন্যই এই নীতিহীন খেলা খেলছে, দমন-পীড়ন করছে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল যা করছে, তা কতটুকু সমর্থনযোগ্য?
একটি অর্থবহ নির্বাচনের জন্য বিএনপি বা ১৮ দল অবশ্যই আন্দোলন করতে পারে। কিন্তু তারা আন্দোলনের নামে এসব কী ঘটিয়েছে ও ঘটাচ্ছে? গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার স্লোগান দিয়ে বিএনপি সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে মেতে উঠেছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা মৃত্যু-উপত্যকায় পরিণত করেছে। সেখানে সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হত্যা করেছে, বাড়িঘর পুড়িয়েছে, শহরগুলোতে অবরোধ চলাকালে গাড়িতে আগুন দিয়েছে, নারী-পুরুষ-শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে, রেললাইন উপড়ে ফেলেছে, রাস্তার দু'পাশে গাছ কেটে সয়লাব করেছে। সে দায় কি বিএনপি এড়াতে পারে? যৌথ বাহিনীর তৎপরতার মুখে পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এলে সময়-সুযোগমতো দুর্বৃত্তরা আবার ফুঁসে উঠবে না, সে গ্যারান্টি কোথায়? এটি অস্বীকার করা যাবে না যে, বিএনপির নেতৃত্ব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আন্দোলনে জামায়াত শরিক হয়ে এটিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুলের লক্ষ্যে পরিচালনা করছে। এ নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথা নেই। ক্ষমতার মোহে দলটি অন্ধ, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
এটি স্পষ্ট হওয়ার বিষয় যে, ক্ষমতাসীন সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে বলে অগণতান্ত্রিক আচরণের লাইসেন্স পেতে পারে না, প্রহসনের নির্বাচন করতে পারে না। অন্যদিকে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে জঙ্গি-মৌলবাদী ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে পারে না, সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়া দিতে পারে না।
জাতির সামনে এখন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একটি হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার; অপরটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়। দেশকে একাত্তরের ধারায় পরিচালনা করতে হলে সেসব ঘাতক-দালালের বিচার করতে হবে- যারা একাত্তরে গণহত্যা-নারী ধর্ষণ-লুটপাট করেছে, ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। অন্যদিকে বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের জন্য জাতি পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। তাই গণতন্ত্রের ওপর যখনই খড়্গ নেমেছে, জনগণ তা রুখে দাঁড়িয়েছে। এমনকি বাকশালের মাধ্যমে একদলীয় ব্যবস্থার জন্য স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনায় কসুর করেনি এ জাতি। সেই জাতি কি কখনও 'আওয়ামী গণতন্ত্র' বা 'জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র' মেনে নিতে পারে? মনে রাখা দরকার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দুই-ই সময়ের দাবি, একটি অন্যটির বিকল্প নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে যে ছাড় চাইছে, তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার বিতর্কিত হয়ে পড়বে। বিতর্কিত সরকার ভালো কাজ করলেও তা নিয়ে সমালোচনা উঠবে। আর বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার আন্দোলনও বেগবান হচ্ছে না। বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। এ ভ্রান্ত কৌশল আন্দোলনের জন্য আত্মঘাতী।
একতরফা নির্বাচন কোনো সমাধান নয়। একাত্তরের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে যেমনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থবহ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা করা। দেশবাসী আশা করে, সব দল একই টেবিলে বসবে, সমঝোতায় আসবে, এই দুই কর্তব্য পালনের অঙ্গীকার করবে, একাত্তরের চেতনায় পথ চলবে- এর কোনো বিকল্প নেই।
বলা হচ্ছে, বিএনপির শাসনামলে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন কি হয়নি? আলবৎ হয়েছে। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার একগুঁয়েমি সংকটের জন্ম দিয়েছে এবং তা দীর্ঘায়িত করেছে। বিরোধী দলের ওপর নির্বিচারে দমন-পীড়ন করেছে। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচন করেছে খালেদা সরকার। (তবে এতে শেষ রক্ষা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হওয়ার পর নির্বাচিত ষষ্ঠ সংসদ বিলুপ্ত করতে হয়েছে)। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে জঙ্গি ও মৌলবাদীদের নিয়ে খেলেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা সংঘটিত করেছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রাণে বাঁচলেও আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। নানাভাবে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চলেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি বিরোধী পক্ষের ওপর নির্যাতনের সেই অজুহাত তুলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার কি তার পুনরাবৃত্তি করবে বা বিএনপির শাসনামলকে টেক্কা দিয়ে বিরোধী পক্ষকে দমন-পীড়ন করবে?
এটি কারও না বোঝার কথা নয় যে, সেদিন বিএনপি যা করেছিল, গণতন্ত্রের জন্য করেনি। ক্ষমতা রক্ষার জন্যই বিরোধী পক্ষের ওপর খড়্গহস্ত হয়েছিল। আজও আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকার যা করছে, তা গণতন্ত্রের স্বার্থেই নয়, ক্ষমতায় আরেক মেয়াদে আসার জন্যই এই নীতিহীন খেলা খেলছে, দমন-পীড়ন করছে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল যা করছে, তা কতটুকু সমর্থনযোগ্য?
একটি অর্থবহ নির্বাচনের জন্য বিএনপি বা ১৮ দল অবশ্যই আন্দোলন করতে পারে। কিন্তু তারা আন্দোলনের নামে এসব কী ঘটিয়েছে ও ঘটাচ্ছে? গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতার স্লোগান দিয়ে বিএনপি সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে মেতে উঠেছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা মৃত্যু-উপত্যকায় পরিণত করেছে। সেখানে সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হত্যা করেছে, বাড়িঘর পুড়িয়েছে, শহরগুলোতে অবরোধ চলাকালে গাড়িতে আগুন দিয়েছে, নারী-পুরুষ-শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে, রেললাইন উপড়ে ফেলেছে, রাস্তার দু'পাশে গাছ কেটে সয়লাব করেছে। সে দায় কি বিএনপি এড়াতে পারে? যৌথ বাহিনীর তৎপরতার মুখে পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এলে সময়-সুযোগমতো দুর্বৃত্তরা আবার ফুঁসে উঠবে না, সে গ্যারান্টি কোথায়? এটি অস্বীকার করা যাবে না যে, বিএনপির নেতৃত্ব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আন্দোলনে জামায়াত শরিক হয়ে এটিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুলের লক্ষ্যে পরিচালনা করছে। এ নিয়ে বিএনপির মাথাব্যথা নেই। ক্ষমতার মোহে দলটি অন্ধ, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
এটি স্পষ্ট হওয়ার বিষয় যে, ক্ষমতাসীন সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে বলে অগণতান্ত্রিক আচরণের লাইসেন্স পেতে পারে না, প্রহসনের নির্বাচন করতে পারে না। অন্যদিকে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে জঙ্গি-মৌলবাদী ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে পারে না, সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়া দিতে পারে না।
জাতির সামনে এখন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একটি হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার; অপরটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়। দেশকে একাত্তরের ধারায় পরিচালনা করতে হলে সেসব ঘাতক-দালালের বিচার করতে হবে- যারা একাত্তরে গণহত্যা-নারী ধর্ষণ-লুটপাট করেছে, ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। অন্যদিকে বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের জন্য জাতি পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। তাই গণতন্ত্রের ওপর যখনই খড়্গ নেমেছে, জনগণ তা রুখে দাঁড়িয়েছে। এমনকি বাকশালের মাধ্যমে একদলীয় ব্যবস্থার জন্য স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনায় কসুর করেনি এ জাতি। সেই জাতি কি কখনও 'আওয়ামী গণতন্ত্র' বা 'জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র' মেনে নিতে পারে? মনে রাখা দরকার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দুই-ই সময়ের দাবি, একটি অন্যটির বিকল্প নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে যে ছাড় চাইছে, তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার বিতর্কিত হয়ে পড়বে। বিতর্কিত সরকার ভালো কাজ করলেও তা নিয়ে সমালোচনা উঠবে। আর বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার আন্দোলনও বেগবান হচ্ছে না। বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। এ ভ্রান্ত কৌশল আন্দোলনের জন্য আত্মঘাতী।
একতরফা নির্বাচন কোনো সমাধান নয়। একাত্তরের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে যেমনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থবহ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা করা। দেশবাসী আশা করে, সব দল একই টেবিলে বসবে, সমঝোতায় আসবে, এই দুই কর্তব্য পালনের অঙ্গীকার করবে, একাত্তরের চেতনায় পথ চলবে- এর কোনো বিকল্প নেই।
No comments