নেশালাগা ডিজে ড্যান্সে সিলেটের থার্টিফার্স্ট
থার্টিফার্স্টে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে
উঠেছিল সিলেটের তরুণ-তরুণীরা। বাংলোবাড়ি, হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে
ভোররাত পর্যন্ত চলে থার্টিফার্স্টের নেশালাগা ডিজে ডান্স। অনেকেই হারিয়ে
যান গোপন অভিসারে।
ঢাকার ডিজেরা এসে মোহময় করে তোলে
থার্টিফার্স্টের জলসাঘর। মঙ্গলবার সন্ধ্যা নামতেই সিলেটে থার্টিফার্স্টের
সুর বেজে ওঠে। নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, নয়াসড়ক সহ বেশ
কিছু এলাকায় তরুণ-তরুণীদের আড্ডা আর আনাগোনা বেড়ে যায়। ওই সব এলাকার
রেস্টুরেন্টগুলোতে সন্ধ্যা রাতেই চলে পার্টির আয়োজন। তবে, সে আয়োজন কেবলই
খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। জিন্দাবাজারে প্রাইভেট কার ও
মাইক্রোবাস যোগে এসে ঢাকার ডিজেরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়ে যায়। আয়োজক
লন্ডন প্রবাসীরা এ সময় তাদের নিয়ে মার্কেটিং ও রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া
করে। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে নীরব হতে থাকে চারদিক। সাড়ে ১১টার দিকে,
পুলিশ, র্যাবসহ যৌথবাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় নেমে টহল দিতে থাকেন। একই
সঙ্গে তারা নগরীর সব ক’টি পয়েন্টে তল্লাশি শুরু করেন। এ অবস্থায় রাত ১২টার
মধ্যে নীরব হয়ে পড়ে গোটা নগর। তবে, পুলিশের এই ধরপাকড় থার্টিফার্স্টের
বর্ণিল আয়োজনে কোন বাধা হয়নি। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায়
একটি বাংলো বাড়িতে থার্টিফার্স্টের বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে ঢাকার
ডিজে গার্লরা ছিল বিশেষ আকর্ষণ। সম্ভবত এই আয়োজনটি ছিল সবচেয়ে বড় আয়োজন।
এখানে সিলেটের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রশাসনের অনেক কর্তা উপস্থিত
ছিলেন। তবে, সেখানে মিডিয়া কর্মীদের প্রবেশ নিষেধ ছিল। ওই আয়োজনে সিলেটের
ওসমানী মেডিকেল কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয়
তরুণী উপস্থিত ছিল। ওই এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি বাংলোবাড়িতে চলে
থার্টিফার্স্টের আয়োজন। তবে, চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকায়
থার্টিফার্স্টের উন্মাদনা রাস্তায় ছড়ায়নি। আর যারা রাত ১১টার মধ্যে গিয়েছিল
তারা রাতভর থার্টিফার্স্ট উন্মাদনায় মেতে থাকে। এসব আয়োজনে পানীয়ের নেশায়
বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে সবাই। অনেক আয়োজনে নেশায় টলমলে তরুণীদের নিয়ে
প্রবাসী আয়োজকরা হারিয়ে যায় অজানায়। নগরীর বিমানবন্দর এলাকার কয়েকটি
রেস্তরাঁয় ছিল থার্টিফার্স্টের আয়োজন। ফ্যাশন শো’র নামে আয়োজন করা হলেও রাত
১টার পর বদলে যায় পরিস্থিতি। তরুণ-তরুণীরা উন্মাতাল ডান্সে মাতিয়ে তোলে
থার্টিফার্স্টের জমকালো আয়োজন। বিমানবন্দর এলাকার আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবার
প্রবাসীদের বেশির ভাগই ওই এলাকার বাংলোবাড়ি ও বাগানের রেস্ট হাউজগুলোতে
থার্টিফার্স্টের আয়োজন করে। এসব আয়োজনে প্রশাসনের ঝুটঝামেলা থেকে রেহাই
পেতে বিভিন্ন থানার সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ও শাসকদল আওয়ামী লীগের নেতাদের
দাওয়াত করে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তারা উপস্থিত থাকায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে
উঠেন থার্টিফার্স্টের ডিজেরা। নগরীর সুবিদবাজারের দু’টি চাইনিজ
রেস্টুরেন্টেও ছিল থার্টিফার্স্টের বর্ণাঢ্য আয়োজন। ফ্যাশন শো’র নামে
মান্ডারিন ও ফ্লোবাতে আয়োজন করা হয় থার্টিফার্স্ট নাইটের। কেবল নির্ধারিত
অতিথিরা এই দু’টি শো’তে যোগ দেন। অনুমতি ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
এমনকি আয়োজনের ছবি তোলাও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। এই দু’টি রেস্টুরেন্টে
থার্টিফার্স্টের আয়োজনে সিলেটের মডেল কন্যারাই ছিল মূল আকর্ষণ। পালাক্রমে
দু’টি হোটেলেই সিলেটের ডিজে মডেলরা মাতিয়ে রাখে। রাত একটার পর পানীয়ের
ছড়াছড়ি শুরু হয়। এ কারণে মাতাল ডিজে ও তাদের আয়োজকদের কারণে হোটেল
কর্তৃপক্ষ একপর্যায়ে বিব্রত বোধ করে। দু’টি হোটেলে আয়োজনে নেতৃত্বে ছিলেন
সিলেটের ডিজে সামিনা ইসলাম মৌ। সহযোগী ছিলেন মাহি ও শোভা। এই তিনজন মিলে ১০
থেকে ১২ জনের ডিজে মডেলদের দিয়ে মাতিয়ে রাখেন দু’টি প্রোগ্রাম। রাত ২টার
দিকে ফ্লোবা রেস্টুরেন্টে কিছুটা বাঁধভাঙা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মৌ ও শোভা
টালমাটাল হয়ে ওঠেন। আয়োজকদের নিয়ে মেতে ওঠেন তারা। এই অবস্থায় আসরও
স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত নেশালাগা দুই ডিজেকে পাঠিয়ে দেয়া হয় অন্যত্র। পরে
ভোররাতের দিকে তাদের পরিবারের স্বজনরা গিয়ে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। আর
মাহিসহ কয়েকজন ফ্লোবার অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখেন। এদিকে, নগরীর পর্যটন
এলাকাগুলোতে ছিল প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ডিজে আয়োজন। এই ডিজে অনুষ্ঠানমালা
রাতভর জমিয়ে রাখে ঢাকার ডিজে তরুণীরা। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি
মিডিয়া মো. আইয়ুব জানিয়েছেন, পুলিশ উচ্ছৃঙ্খলতার কোন অভিযোগ পায়নি। তবে
সতর্ক ছিল।
No comments