পবিত্র কোরআনের আলো-যারা অপরাধ উপলব্ধি করে ফিরে আসতে পারে তাদের প্রতি আল্লাহ ক্ষমাশীল

১১৬. ইন্নাল্লা-হা লাহূ মুলকুস সামাওয়াতি ওয়ালআরদ্বি্; ইউহ্য়ী ওয়া ইউমীতু; ওয়া মা লাকুম্ মিন দূনিল্লাহি মিন ওয়্যালিয়্যিন ওয়্যালা- নাছীর। ১১৭. লাক্বাদ তা-বাল্লা-হু আ'লান নাবিয়্যি ওয়ালমুহা-জিরীনা ওয়ালআনসা-রিল্লাযীনাত্তাবাঊ'হু ফী ছা-আ'তিল উ'ছ্রাতি মিম্ বা'দি মা কা-দা ইয়াযীগু ক্বুলূবু ফারীকি্বম্ মিনহুম ছুম্মা তা-বা আ'লাইহিম; ইন্নাহূ বিহিম রাঊফুর্ রাহীম।


১১৮. ওয়া আ'লাস সালা-ছাতিল্লাযীনা খুলি্লফূ; হাত্তা ইযা- দ্বা-ক্বাত আ'লাইহিমুল আরদ্বু বিমা রাহুবাত্ ওয়াদ্বা-ক্বাত আলাইহিম আনফুছুহুম ওয়ায্বান্নূ আন লা- মালজাআ মিনাল্লা-হি ইল্লা- ইলাইহি; ছুম্মা তা-বা আ'লাইহিম লিইয়াতূবূ; ইন্নাল্লা-হা হুয়াত্তাওয়্যা-বুর রাহীম।
[সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ১১৬-১১৮]

অনুবাদ : ১১৬. নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মালিকানা আল্লাহর। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু প্রদান করেন। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই, কোনো সাহায্যকারীও নেই।
১১৭. অবশ্যই আল্লাহ সদয় হয়েছেন তাঁর নবীর ওপর, সদয় হয়েছেন মোহাজিরদের ওপর, আনসারদের ওপর এবং যাঁরা একান্ত কঠিন সময়ে তাঁর সঙ্গে থেকে ছিলেন তাঁদের ওপর। এমনকি যখন তাদের একটি ক্ষুদ্র অংশের অন্তরে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উপক্রম হয়েছিল এর পরও আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সদয়।
১১৮. আর সেই তিনজনের ওপরও (তিনি সদয় হয়ে গেলেন) যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল। অবশেষে যখন এ পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল, তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠল এবং তারা উপলব্ধি করল যে আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কোনো আশ্রয় নেই, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হয়ে গেলেন যেন তারা তাঁরই কাছে ফিরে আসতে পারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপরাধ ক্ষমাকারী ও পরম দয়ালু।

ব্যাখ্যা : ১১৬ নম্বর আয়াতটি আগের আলোচনার ধারাবাহিকতায় এর উপসংহার হিসেবেই এসেছে। আল্লাহ তায়ালার বাণীতে এখানে কিছু চিরন্তন সত্য উচ্চারিত হয়েছে। পুনরুল্লেখ করা যেতে পারে, এতক্ষণ মুনাফিকদের নিন্দা এবং যেসব মুসলিম অলসতার কারণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল তাদের প্রতি সদয়, ভর্ৎসনা ও ক্ষমা প্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। ১১৭ নম্বর আয়াতে সেসব নিবেদিতপ্রাণ মুসলিমদের প্রশংসা করা হয়েছে, যাঁরা চরম কঠিন পরিস্থিতিতে সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে আনন্দচিত্তে তাবুক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, তাবুক অভিযানে তৎকালীন সক্ষম মুসলিম পুরুষদের প্রায় সবাই এবং আগ্রহী নারীরাও এতে অংশ নিয়েছিলেন। অবশ্য তাদের মধ্যে এমনও কিছুসংখ্যক ছিল যারা দুর্গম পথ, বৈরী আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত বাহনের অভাবে প্রথমে কিছুটা দোদুল্যমান ছিল এবং তাদের মনের ভেতরেও কিছু দুর্বলতা প্রবেশ করে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের ওপর আল্লাহর রহমত থাকায় শেষ পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়নি। শেষ পর্যন্ত তারাও মন-প্রাণ দিয়ে অভিযানে শরিক হয়ে যান। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর অভিযাত্রীদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, এখন তাদের একটি অংশের অন্তরে বিভ্রান্তির উপক্রম হয়েছিল।
১১৮ নম্বর আয়াতে যে তিনজনের কথা বলা হয়েছে, তারা হলেন সেই তিনজন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত মুলতবি আছে বলে ১০৬ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা সেই তাবুক অভিযান থেকে বিরত থাকা ১০ জনের তিনজন, যাদের সাতজন খুঁটির সঙ্গে নিজেদের বেঁধে আমরণ আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন। তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে মর্মে আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুল (সা.) তাদের মুক্ত করে দেন। এ তিনজন সম্পর্কে রাসুল (সা.) হুকুম দিয়েছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর কাছ থেকে তাদের ব্যাপারে কোনো ফয়সালা না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানরা তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করে চলবে। ফলে দীর্ঘ ৫০ দিন তাদের এভাবে কাটাতে হয়। সেই সময়ে তারা তাদের অপরাধের মর্মর্বেদনায় চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এ ব্যাপারে বুখারি শরিফের একটি দীর্ঘ হাদিসে এর মর্মস্পর্শী বর্ণনা আছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.