যক্ষ্মা-সচেতনতাই নিরাময়ের পথ
বহু বছরের আয়াসসাধ্য উদ্যোগে বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগ নিয়ে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়েছে। রোগটি সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে জানাশোনা বেড়েছে। রোগটি যে নিরাময়যোগ্য সেটিও প্রচারের মধ্য দিয়ে মানুষকে জানানো সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যাপক কার্যক্রম হিসেবে যক্ষ্মা নিরাময় কার্যক্রমে যে সফলতা প্রত্যাশিত ছিল তার দেখা মিলছে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে রোগ বেড়েই চলেছে। যক্ষ্মার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক কার্যক্রমের মধ্যে রোগের বৃদ্ধি একটি আশঙ্কাজনক সংবাদ বটে। সোমবার সমকালে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত একটি সংবাদে বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, অন্য সমস্যাগুলোর সঙ্গে যে সমস্যাটি রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে অসচেতনতা ও অসাবধানতা। আগে আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা ছিল, 'যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই'। সচেতনতামূলক প্রচারের দৌলতে এখন সকলেই জানেন, যক্ষ্মা হলে রক্ষা নেই কথাটি আর সত্য নয়। বরং যক্ষ্মা নিরাময়যোগ্য একটি অসুখ। কিন্তু এ রোগ প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্তই নিরাময়যোগ্য। প্রাথমিক পর্যায় অতিক্রম করে রোগ যখন মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্স টিউবারকুলোসিসে (এমডিআর-টিবি) রূপান্তরিত হয় তখন এর নিরাময় সহজ নয়। এমডিআর রোগীদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় রেখে দীর্ঘমেয়াদে ব্যয়বহুল চিকিৎসা দিতে হয়। এ চিকিৎসাতেও ফল লাভ অনিশ্চিত। সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হলো, এমডিআর রোগীদের ছড়ানো জীবাণু থেকে এমডিআর জীবাণুই নতুন রোগীদের আক্রান্ত করে। বাংলাদেশে প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা ও নিরাময়ের উদাহরণ আছে। অনেকেই চিকিৎসা গ্রহণের পর স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। কিন্তু বহু রোগী প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এমডিআরে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের অনেকেই নিরাময় অযোগ্য পর্যায়ে পেঁৗছে গেছেন এবং দ্রুত এ সংক্রামক রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। একটি সক্রিয় রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম থাকার পরও রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা সংশ্লিষ্টদের উৎকণ্ঠিত করে তুলেছে। এক্ষেত্রে অসচেতনতাই প্রধান বাধা। সাধারণ গ্রামবাসীর অসাবধানতা ও অসচেতনতা তাদের পতনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কখনও ওষুধ নিয়ে অনিয়মিত সেবন রোগ নিরাময়ে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রচার বা সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা যেমন গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছে, তেমনি গ্রামের অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে সচেতনতা কার্যক্রম বিশেষভাবে পেঁৗছে দেওয়ার উপায়ও ভাবতে হবে। শুধু সচেতনতা কার্যক্রমই যথেষ্ট নয়, মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের দায়িত্ব আরও বড়। জরিপের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করে আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনার পথও খুঁজতে হবে। সারাদেশে যক্ষ্মাবিরোধী কার্যক্রম আছে সত্য। কিন্তু এর সীমাবদ্ধতাও আছে। দেখা যাচ্ছে, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য অবকাঠামো থাকলেও গুরুতর আক্রান্তদের সেবার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। শুধু তা-ই নয়, রাজধানী ও বিভাগীয় শহরে গুরুতর সংক্রমণের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ পরিস্থিতিতে অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো দরকার। সাধারণ আক্রান্তদের জন্য ওষুধ সরবরাহ যাতে কোনোভাবে অনিয়মিত না হয়ে পড়ে সেদিকেও তদারকি থাকা দরকার। এর পাশাপাশি আক্রান্তদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় এনে ওষুধ সেবন নিশ্চিত করা দরকার। যক্ষ্মা নিরাময়ের জন্য যে কার্যক্রম চলছে তা থেকে সাফল্য আসা উচিত। এ জন্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগটাই জরুরি। সংশ্লিষ্টরা সমস্যা সমাধানের জন্য তৎপর হলে সাফল্য আসবেই। জটিল ও সংক্রামক এ রোগের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে সকলের আন্তরিক উদ্যোগ আসুক_ সেটিই প্রত্যাশিত।
No comments