রিহ্যাব মেলা ১৪ জুন শুরু-অনুমোদনহীন প্রকল্প এবারও আসছে by অরূপ দত্ত

অনুমোদনহীন আবাসন প্রকল্পগুলো এবারও রিহ্যাব মেলায় আসছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চার দিনব্যাপী রিহ্যাব মেলা শুরু হচ্ছে ১৪ জুন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রকল্পের অনুমোদন না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ৪৩টি আবাসন কোম্পানিকে নোটিশ ও তাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল।


গত বছরের ডিসেম্বরে রিহ্যাব মেলা চলাকালে এসব জিডি ও নোটিশ করা হয়। তবে বেশির ভাগ কোম্পানি নোটিশের জবাব দিলেও রাজউক আর কিছু করেনি।
রাজউকের পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজউকের নোটিশ পাওয়ার পর গত ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু আবাসন কোম্পানি লিখিত জবাবে জানিয়েছে, তাদের প্রকল্প রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপের বাইরে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা অনুমোদনপত্র নিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তাদের প্রকল্প এলাকা ৩০ বিঘা বা ১০ একরের নিচে। ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা অনুযায়ী তাদের রাজউকের অনুমোদন প্রয়োজন নেই। কিন্তু রাজউক ছয় মাসেও আবাসন কোম্পানিগুলোর এই বক্তব্য খতিয়ে দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি।
অনুমোদনহীন প্রকল্পের প্রচার বন্ধে হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ৪৩টি আবাসন কোম্পানির ৫৬টি প্রকল্পের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় জিডি করে। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ২১টি আবাসন কোম্পানির নিবন্ধনের কার্যকারিতা স্থগিত এবং ২২টি নিবন্ধনবিহীন কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
যোগাযোগ করা হলে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. নূরুল হুদা বলেন, রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় স্থগিতাদেশ থাকায় অনুমোদনহীন আবাসন কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তবে শিগগিরই রাজউক কোম্পানিগুলোর কাছে চিঠি পাঠাবে। ছয় মাসেও কেন করণীয় ঠিক করা হলো না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজউকের লোকবল কম। একদিক দেখলে অন্যদিক সামলানো যায় না।
রাজউকের ভূমিকা এবং এবারের মেলা সম্পর্কে পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অবৈধ আবাসন প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে এবং এভাবে বারবার মেলা করতে দিয়ে রাজউক তথা সরকার জনগণের কাছে এটাই পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তারা অবৈধ প্রকল্পগুলোর পক্ষে।
এবার রিহ্যাব মেলায় যেসব আবাসন কোম্পানি অংশ নিচ্ছে তাদের তালিকা ঘেঁটে জানা যায়, আগের অনুমোদনহীন প্রকল্পগুলোর জন্য স্টল বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু কোম্পানি নতুন প্রকল্প নিয়ে মেলায় আসছে, যেগুলোর অনুমোদন নেই।
যোগাযোগ করা হলে রিহ্যাবের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ ইকবাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব কোম্পানি রিহ্যাব মেলায় অংশ নিচ্ছে, আমরা তাদের সরাসরি বলে দিয়েছি, তারা যেন কোনো অনুমোদনহীন বা অবৈধ প্রকল্প নিয়ে মেলায় না আসে। তেমন হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সম্ভব: গত মার্চে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, জলাধার সংরক্ষণ আইনের অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু জলাধার সংরক্ষণ আইন প্রয়োগ করেই বন্যাপ্রবণ এলাকা বা খাল, নদীপাড় ও জলাভূমিতে গড়ে ওঠা আবাসন প্রকল্প এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো যায়। এতে ঢাকার চারপাশের অন্তত ৫০ শতাংশ অনুমোদনহীন প্রকল্পের বিরুদ্ধে এক সপ্তাহের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির পর রাজউক এই আইনের অধীনে একটি আদালতও পরিচালনা করেনি।

No comments

Powered by Blogger.