বিরোধী দলের অনুপস্থিতি অগ্রহণযোগ্য-সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশন

কার্যকর সংসদের আশা যেন দুরাশাই রয়ে গেল। এক-এগারোর ঘটনার দুই বছর পর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদও যে আগের মতোই চলবে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের সেই পুরোনো ধারাবাহিকতাই বজায় রয়েছে।


গতকাল শুরু হওয়া নবম সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে বিরোধী দল ছিল যথারীতি অনুপস্থিত। সাংসদ হিসেবে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা সংসদে যাচ্ছেন না—এই দায় প্রধানত বিরোধী দলকেই নিতে হবে। সংসদে বিরোধী দলের এই অনুপস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে বিরোধী দলের সংসদে অনুপস্থিতির ব্যাপারে সরকারি দলও নিজেদের দায়মুক্ত ভাবতে পারে না। সরকারি দল সংসদে বিরোধী দলকে রাখতে পারছে না, এটাকে তাদের ব্যর্থতা হিসেবেই গণ্য করতে হবে।
যে দল সংসদে বিরোধী দলে থাকে, সেই দলের নেতা সংসদে উপস্থিত থাকেন কম—এই পুরোনো ঐতিহ্যও বর্তমান সংসদ বজায় রেখেছে। বর্তমান সংসদের ১৫৮ কার্যদিবসে সংসদে বিরোধী দলের নেতা উপস্থিত ছিলেন মাত্র পাঁচ দিন। বর্তমান বিরোধী দল বিএনপি সংসদের এই শরৎকালীন অধিবেশনে যোগ দেবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে আজ মঙ্গলবার, দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার দিনটি অনেক আগেই নির্ধারিত ছিল। সংসদ বসার আগেই দলটির স্থায়ী কমিটি এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে পারত। কিন্তু বিষয়টিকে তারা ঝুলিয়ে রাখল সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়া পর্যন্ত। সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে দলটির মধ্যেও যে মতভেদ আছে, তা স্পষ্ট। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনের তথ্য ও পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী দলটির স্থায়ী কমিটির ১৮ জন সদস্যের মধ্যে সাংসদ আছেন মাত্র চারজন। স্থায়ী কমিটির যেসব সদস্য সাংসদ নন, তাঁরা সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহী বলে জানা গেছে। এটাই যদি বাস্তবতা হয়, তবে বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।
এটা ঠিক যে স্থায়ী কমিটি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি। কিন্তু সংসদে যাওয়া না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত দলের সংসদীয় কমিটিতে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ, সাংসদেরা একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন এবং জনগণ ভোট দিয়ে সাংসদদের সংসদে পাঠিয়েছেন তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। সাংসদদের তাই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা স্বাভাবিক। সংসদে যাওয়ার পক্ষে দলটির কয়েকজন সাংসদ বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
সংসদীয় গণতান্ত্রিকব্যবস্থায় সরকারি দলের কর্মকাণ্ড বা দেশ পরিচালনার ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করার জায়গা সংসদ এবং এই কাজটি সঠিকভাবে পালন করা বিরোধী দলের দায়িত্ব। সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে রাজপথে আন্দোলন করার চেষ্টার চেয়ে সংসদে এসে মতামত তুলে ধরলে দেশবাসীর কাছে পৌঁছানো বরং অনেক সহজ হবে। আমরা আশা করব, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সংসদে যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সরকারি দলের আচার-আচরণের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিরোধী দলকে সংসদের আসনসংখ্যা দিয়ে বিবেচনা না করার মানসিকতার প্রতিফলন থাকতে হবে। বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরকারি দল তা রক্ষা করেনি। এসব বিষয় অনাস্থা ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়, যা সরকারি দল এড়াতে পারত। সরকারি ও বিরোধী দলের আন্তরিক উদ্যোগ না থাকলে একটি কার্যকর সংসদের প্রত্যাশা দুরাশাই থেকে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.