বিশেষ সাক্ষাৎকার-সরকারের নীতি না বদলালে সংসদ কার্যকর হবে না by এম কে আনোয়ার
আগামীকাল শুরু হচ্ছে জাতীয় সংসদের অধিবেশন। এরই মধ্যে দুই দলের চিফ হুইপের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বিরোধী দল সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে। সরকারি দল বলছে, তাঁরা যেকোনো বিষয়ে সংসদে এসে কথা বলতে পারে। তা সত্ত্বেও অনিশ্চয়তা কাটছে না।
এই প্রেক্ষাপটে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম ও তানভীর সোহেল
প্রথম আলো সংসদের আগামী অধিবেশনে বিএনপি যোগ দিচ্ছে কি না।
এম কে আনোয়ার আমরা যখন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি, তখন আমাদের প্রধান দায়িত্ব সংসদে যোগ দেওয়া এবং এর কার্যপ্রণালিতে সক্রিয় অংশ নেওয়া। এ বিবেচনায়ই আমরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দিই; যার নজির অতীতে নেই। যদিও নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির যথেষ্ট আপত্তি ছিল। শুরু থেকে সরকারি দল বিএনপির প্রতি বৈরী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। অন্য সব দলের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সরাসরি বিটিভি প্রচার করলেও বিএনপির ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে।
সংসদের প্রথম অধিবেশনে স্পিকার যে প্যানেল অব চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন, তাতেও বিএনপির কোনো সদস্যের নাম ছিল না। বরাবর সংসদের বাঁ দিকের প্রথম সারির আসনগুলো বিরোধী দলের জন্য সংরক্ষিত থাকে। আমাদের সময়েও ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনই প্রথম সারির চারটি আসন কেড়ে নেওয়া হলো। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকারের পদটি দেওয়া হবে। নানা বাহানায় তা থেকেও বঞ্চিত রাখা হলো।
এসব সত্ত্বেও আমরা সংসদে গেলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংসদ নেত্রীর বক্তব্যের ৭০ শতাংশই ছিল জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গালাগাল ও বিষোদ্গার। সরকারি দলের পক্ষ থেকে আরেকটি অভিযোগ করা হয়, বিএনপির আমলে দেশের কোনো কাজ করা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের মাইলফলক রচিত হয়েছে বিএনপির আমলেই, বিদেশি বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি, প্রবৃদ্ধি—সব ক্ষেত্রেই। সেসব তথ্য আমাদের কাছে আছে।
সরকারি দল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএনপি সরকার বিদ্যুৎ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। অথচ পাঁচ বছরে এই খাতে বরাদ্দই ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। জিনিসপত্রের দামের ব্যাপারেও তাঁরা অসত্য প্রচার চালাচ্ছেন। দুর্ভাগ্য, সরকারি দলের এসব অসত্য প্রচারণার সুযোগ আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। আমরা কথা বলতে গেলেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সংসদে গিয়ে গালাগাল শোনা ছাড়া আমাদের কোনো কাজ থাকে না। আর ইদানীং সংসদের কাজ তো মহামান্য হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টই করে দিচ্ছেন। আমি আইনজ্ঞ নই। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বুঝি, সুপ্রিম কোর্টের কাজ হচ্ছে সংসদে যেসব আইন প্রণীত হবে, সেগুলো ঠিক হচ্ছে কি না, সেটি দেখা। কিন্তু কী আইন হবে, সেটি করার দায়িত্ব আদালতের নয়।
প্রথম আলো যেকোনো সমস্যা সমাধানে সরকার ও বিরোধী দলকে তো আলোচনায় বসতে হবে।
এম কে আনোয়ার কয়েক দিন আগেও বিএনপির চেয়ারপারসন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বরং আলোচনার কথা বললেই তাঁরা বলেন, বিরোধী দল দুর্বল হয়ে গেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময়ও খালেদা জিয়া আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সরকারি দল আমলে নেয়নি। এমনকি সংসদে গৃহীত শোক প্রস্তাবের ওপর সব সাংসদের বক্তব্য সরাসরি টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু যখনই বিরোধীদলীয় নেত্রী বক্তৃতা শুরু করলেন, তখন প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হলো।
প্রথম আলো সংসদে যাওয়ার পরিবেশ নেই বলে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। কীভাবে পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে?
এম কে অনোয়ার সংসদে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন হলো, সেখানে গিয়ে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারব কি না? সে ক্ষেত্রে সরকারি দল যদি বলে, এভাবে আমরা সংসদ চালাব না, স্পিকার যদি বলেন, সংসদে গালাগাল হবে না। তাহলেই সংসদে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
প্রথম আলো বিরোধীদলীয় সাংসদেরা অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলেও কমিটিগুলোতে সক্রিয় আছেন। কমিটির কাজকর্ম সম্পর্কে আপনার মত কী?
এম কে আনোয়ার কমিটিগুলো বেশ সক্রিয়। তবে তাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। কমিটির কাজ প্রধানত পরামর্শমূলক। অনেকের ধারণা, এটি সিদ্ধান্ত। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের বিরোধও হচ্ছে। আবার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর অনীহাও আছে। তার পরও বলব, কমিটির কাজে খুব একটা দলীয় মনোভাব লক্ষ করা যায় না। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কমিটির বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রধানমন্ত্রী তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন।
প্রথম আলো দুই চিফ হুইপের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠক কোনো ইতিবাচক ফল দেবে বলে মনে করেন?
এম কে আনোয়ার ঠিক বলতে পারব না। তবে আমি মনে করি, যদি সরকারের নীতি না বদলায়, সংসদ নেত্রী যদি কথাবার্তায় সংযত না হন, তাহলে সংসদ কার্যকর হবে না। সরকারের একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির আরেকটি উদাহরণ দিই। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা ছিল। ১২টি মামলা আইন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশে বাতিল করা হয়েছে। তিনটি মামলা প্রত্যাহার করেছে বাদীপক্ষ। প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের মামলা প্রত্যাহার করার জন্য তো তাঁরা কমিটি গঠন করেননি। এ থেকেই তাঁদের মনোভাবটি স্পষ্ট।
প্রথম আলো সংসদ কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলেরও ভূমিকা আছে। সে ক্ষেত্রে আপনাদের করণীয় কী হবে?
এম কে আনোয়ার সরকার নীতি না বদলালে আমাদের কিছুই করার নেই। সংসদের ভেতরে ও বাইরে আমরা অনেকবার বলেছি, আসুন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন। তার জবাবে তাঁরা বিএনপিকে চোর-ডাকাত বলে গালাগাল করেন। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। অথচ তাঁরা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটিও নির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে পারেননি। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, তাঁরা তথ্যভিত্তিক কথা বলবেন। অযথা গালাগাল পরিহার করবেন।
প্রথম আলো সাংসদ হিসেবে পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন, না আপনাদের ওপর বৈষম্য করা হচ্ছে?
এম কে আনোয়ার একজন সাংসদ হিসেবে ব্যক্তিগত যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তা থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই। কিন্তু এলাকার বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হচ্ছে। এ বছর ঈদের সময় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে যে শাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে, তা সরকারি দলের সব সাংসদ পেলেও আমাদের দেওয়া হয়নি। উন্নয়ন বরাদ্দেও বৈষম্য করা হচ্ছে।
প্রথম আলো এ বৈষম্যের বিষয়টিও তো আপনারা সংসদে গিয়ে বলতে পারেন।
এম কে আনোয়ার এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চয়ই। কিন্তু যেখানে তাঁরা আমাদের দল হিসেবেই স্বীকার করছেন না, কথায় কথায় চোর-ডাকাত বলে গালাগাল করছেন, সেখানে এসব নিয়ে কথা বলার সুযোগ কোথায়? গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলতে যা বোঝায়, তার কিছুই নেই। সংসদে গেলেও তো আমরা কথা বলতে পারব না। কথা বলতে দেওয়া হবে না। সংসদের বাইরে আমরা প্রতিবাদ করছি। জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয়, সে জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি নিয়েছি—সরকার তাতেও বাধা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি?
আমরা এক কঠিন ও সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ থেকে উত্তরণ দরকার। আশা করছি, সরকার দেয়ালের লিখন পড়বে, দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হবে। সংসদ কার্যকর হোক, বিএনপি তা চায়। কিন্তু সরকারী দলের সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। বিরোধী দলকে সরকারের অংশ হিসেবে না দেখে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখলে তো সংসদে যাওয়া না-যাওয়া সমান।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম ও তানভীর সোহেল
প্রথম আলো সংসদের আগামী অধিবেশনে বিএনপি যোগ দিচ্ছে কি না।
এম কে আনোয়ার আমরা যখন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি, তখন আমাদের প্রধান দায়িত্ব সংসদে যোগ দেওয়া এবং এর কার্যপ্রণালিতে সক্রিয় অংশ নেওয়া। এ বিবেচনায়ই আমরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দিই; যার নজির অতীতে নেই। যদিও নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির যথেষ্ট আপত্তি ছিল। শুরু থেকে সরকারি দল বিএনপির প্রতি বৈরী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। অন্য সব দলের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সরাসরি বিটিভি প্রচার করলেও বিএনপির ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে।
সংসদের প্রথম অধিবেশনে স্পিকার যে প্যানেল অব চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন, তাতেও বিএনপির কোনো সদস্যের নাম ছিল না। বরাবর সংসদের বাঁ দিকের প্রথম সারির আসনগুলো বিরোধী দলের জন্য সংরক্ষিত থাকে। আমাদের সময়েও ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনই প্রথম সারির চারটি আসন কেড়ে নেওয়া হলো। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকারের পদটি দেওয়া হবে। নানা বাহানায় তা থেকেও বঞ্চিত রাখা হলো।
এসব সত্ত্বেও আমরা সংসদে গেলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংসদ নেত্রীর বক্তব্যের ৭০ শতাংশই ছিল জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গালাগাল ও বিষোদ্গার। সরকারি দলের পক্ষ থেকে আরেকটি অভিযোগ করা হয়, বিএনপির আমলে দেশের কোনো কাজ করা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নের মাইলফলক রচিত হয়েছে বিএনপির আমলেই, বিদেশি বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি, প্রবৃদ্ধি—সব ক্ষেত্রেই। সেসব তথ্য আমাদের কাছে আছে।
সরকারি দল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএনপি সরকার বিদ্যুৎ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। অথচ পাঁচ বছরে এই খাতে বরাদ্দই ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। জিনিসপত্রের দামের ব্যাপারেও তাঁরা অসত্য প্রচার চালাচ্ছেন। দুর্ভাগ্য, সরকারি দলের এসব অসত্য প্রচারণার সুযোগ আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। আমরা কথা বলতে গেলেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সংসদে গিয়ে গালাগাল শোনা ছাড়া আমাদের কোনো কাজ থাকে না। আর ইদানীং সংসদের কাজ তো মহামান্য হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টই করে দিচ্ছেন। আমি আইনজ্ঞ নই। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বুঝি, সুপ্রিম কোর্টের কাজ হচ্ছে সংসদে যেসব আইন প্রণীত হবে, সেগুলো ঠিক হচ্ছে কি না, সেটি দেখা। কিন্তু কী আইন হবে, সেটি করার দায়িত্ব আদালতের নয়।
প্রথম আলো যেকোনো সমস্যা সমাধানে সরকার ও বিরোধী দলকে তো আলোচনায় বসতে হবে।
এম কে আনোয়ার কয়েক দিন আগেও বিএনপির চেয়ারপারসন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বরং আলোচনার কথা বললেই তাঁরা বলেন, বিরোধী দল দুর্বল হয়ে গেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময়ও খালেদা জিয়া আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সরকারি দল আমলে নেয়নি। এমনকি সংসদে গৃহীত শোক প্রস্তাবের ওপর সব সাংসদের বক্তব্য সরাসরি টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু যখনই বিরোধীদলীয় নেত্রী বক্তৃতা শুরু করলেন, তখন প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হলো।
প্রথম আলো সংসদে যাওয়ার পরিবেশ নেই বলে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। কীভাবে পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে?
এম কে অনোয়ার সংসদে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন হলো, সেখানে গিয়ে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারব কি না? সে ক্ষেত্রে সরকারি দল যদি বলে, এভাবে আমরা সংসদ চালাব না, স্পিকার যদি বলেন, সংসদে গালাগাল হবে না। তাহলেই সংসদে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
প্রথম আলো বিরোধীদলীয় সাংসদেরা অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলেও কমিটিগুলোতে সক্রিয় আছেন। কমিটির কাজকর্ম সম্পর্কে আপনার মত কী?
এম কে আনোয়ার কমিটিগুলো বেশ সক্রিয়। তবে তাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। কমিটির কাজ প্রধানত পরামর্শমূলক। অনেকের ধারণা, এটি সিদ্ধান্ত। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের বিরোধও হচ্ছে। আবার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর অনীহাও আছে। তার পরও বলব, কমিটির কাজে খুব একটা দলীয় মনোভাব লক্ষ করা যায় না। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কমিটির বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রধানমন্ত্রী তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন।
প্রথম আলো দুই চিফ হুইপের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠক কোনো ইতিবাচক ফল দেবে বলে মনে করেন?
এম কে আনোয়ার ঠিক বলতে পারব না। তবে আমি মনে করি, যদি সরকারের নীতি না বদলায়, সংসদ নেত্রী যদি কথাবার্তায় সংযত না হন, তাহলে সংসদ কার্যকর হবে না। সরকারের একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির আরেকটি উদাহরণ দিই। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা ছিল। ১২টি মামলা আইন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশে বাতিল করা হয়েছে। তিনটি মামলা প্রত্যাহার করেছে বাদীপক্ষ। প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের মামলা প্রত্যাহার করার জন্য তো তাঁরা কমিটি গঠন করেননি। এ থেকেই তাঁদের মনোভাবটি স্পষ্ট।
প্রথম আলো সংসদ কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলেরও ভূমিকা আছে। সে ক্ষেত্রে আপনাদের করণীয় কী হবে?
এম কে আনোয়ার সরকার নীতি না বদলালে আমাদের কিছুই করার নেই। সংসদের ভেতরে ও বাইরে আমরা অনেকবার বলেছি, আসুন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন। তার জবাবে তাঁরা বিএনপিকে চোর-ডাকাত বলে গালাগাল করেন। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। অথচ তাঁরা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটিও নির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে পারেননি। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, তাঁরা তথ্যভিত্তিক কথা বলবেন। অযথা গালাগাল পরিহার করবেন।
প্রথম আলো সাংসদ হিসেবে পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন, না আপনাদের ওপর বৈষম্য করা হচ্ছে?
এম কে আনোয়ার একজন সাংসদ হিসেবে ব্যক্তিগত যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তা থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই। কিন্তু এলাকার বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হচ্ছে। এ বছর ঈদের সময় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে যে শাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে, তা সরকারি দলের সব সাংসদ পেলেও আমাদের দেওয়া হয়নি। উন্নয়ন বরাদ্দেও বৈষম্য করা হচ্ছে।
প্রথম আলো এ বৈষম্যের বিষয়টিও তো আপনারা সংসদে গিয়ে বলতে পারেন।
এম কে আনোয়ার এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চয়ই। কিন্তু যেখানে তাঁরা আমাদের দল হিসেবেই স্বীকার করছেন না, কথায় কথায় চোর-ডাকাত বলে গালাগাল করছেন, সেখানে এসব নিয়ে কথা বলার সুযোগ কোথায়? গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলতে যা বোঝায়, তার কিছুই নেই। সংসদে গেলেও তো আমরা কথা বলতে পারব না। কথা বলতে দেওয়া হবে না। সংসদের বাইরে আমরা প্রতিবাদ করছি। জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয়, সে জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি নিয়েছি—সরকার তাতেও বাধা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি?
আমরা এক কঠিন ও সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ থেকে উত্তরণ দরকার। আশা করছি, সরকার দেয়ালের লিখন পড়বে, দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হবে। সংসদ কার্যকর হোক, বিএনপি তা চায়। কিন্তু সরকারী দলের সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। বিরোধী দলকে সরকারের অংশ হিসেবে না দেখে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখলে তো সংসদে যাওয়া না-যাওয়া সমান।
No comments