হজযাত্রী পরিবহন-অভিজ্ঞতা কিছুই শেখাবে না?

সৌদি আরবে প্রতি বছর পবিত্র হজ উপলক্ষে যাত্রী পরিবহনের জন্য বিপুল আয়োজন করতে হয়। হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়ার কারণে প্রতি বছরই এ জন্য আগের বছরের চেয়ে বাড়তি কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়। এর সঙ্গে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি যেমন জড়িত, একই সঙ্গে থাকে অনেক প্রতিষ্ঠান ও লোকের সংশ্লিষ্টতা।


সঙ্গত কারণেই আবশ্যক হয় যথাযথ পূর্ব পরিকল্পনার। এক বছরে কোনো ভুল হলে পরবর্তী বছরে যেন তা সংশোধন করা যায়, অপূর্ণতা থাকলে যেন দূর করার উদ্যোগ থাকে সেটাও প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু এমনটি হতে নেই, সেটাই যেন নিয়তি। সোমবার সমকালে 'হজ ফ্লাইটে এবারও বিপর্যয়ের আশঙ্কা' প্রতিবেদনেও সেই পুরনো শঙ্কার প্রতিফলন। আর চার মাস পর ১ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি নারী-পুরুষ এই পবিত্র অনুষ্ঠানে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করবে সৌদি এয়ারলাইন্স। বাকি অর্ধেক যাবেন বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনায়। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের বহরে থাকা ১২টি এয়ারক্র্যাফটের মাত্র ৪টি সচল এবং ৮টিই উড্ডয়নে অক্ষম। তাই হজের সময় বিমান ভাড়া করার বিকল্প নেই। এ কাজটি করতে হবে স্বল্প সময়ে এবং এ সিদ্ধান্তও অনেক আগেই সরকার নিয়ে রেখেছে। তাহলে কেন বিমান কর্তৃপক্ষ আগেভাগে বিমান ভাড়ার ব্যবস্থা করছে না? অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী তাতেই আর্থিক সাশ্রয় হওয়ার কথা। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি সিন্ডিকেট এ সুযোগে 'কমিশন বাণিজ্যে' নেমে পড়েছে। তারা মাত্র তিন মাসের জন্য বিমান ভাড়া করতে চাইছে। কিন্তু নিজস্ব এয়ারক্র্যাফট সংকটের সময়ে এক বছরের জন্য বিমান ভাড়া করলে সুবিধা বেশি, কারণ হজের পরও কয়েক মাস এটি ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। আমরা আশা করব, সরকার দ্রুত এ বিষয়টির সুরাহা করবে। ফটকা ব্যবসা করার অনেক সুযোগ দেশে রয়েছে। পবিত্র হজ পালনের সময়টিকে কি রেহাই দেওয়া চলে না? এ বিষয়ে প্রয়োজনে উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কাঙ্ক্ষিত। কেউ কেউ মনে করছেন, অব্যবস্থাপনার পেছনে অন্তর্ঘাতের পরিকল্পনা থাকতে পারে। এ নিয়ে তদন্ত হতেই পারে। তবে এটাও মনে রাখা দরকার, ফটকা লাভের মনোবৃত্তিও কিন্তু কম বিপজ্জনক নয়।
বিমান কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে, এবার তিনটি সুপরিসর এয়ারক্র্যাফট ভাড়া করা হবে এবং ফ্লাইটের সিডিউল আগেই দিয়ে দেওয়া হবে। বিমান ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক কাজে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা চাই। হজের সময়টিতে কারা সংকট সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করে, সেটা সরকারের অজানা নয়। তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। হজ উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিককে সৌদি আরবে অবস্থান করতে হয়। বিমানের নিজস্ব কিংবা ভাড়া করা এয়ারক্র্যাফটের কারণে সিডিউল সমস্যা দেখা দিলে সৌদি আরবে অবস্থানের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। হজ এজেন্সি সূত্র বলছে, তারা সৌদি আরবে এক মাস অবস্থানের জন্য প্যাকেজ করে। সেভাবে ঘর ভাড়া ও অন্যান্য আয়োজন করা হয়। বিমানের ফ্লাইটে সমস্যার কারণে অবস্থানের মেয়াদ বাড়াতে হলে জটিলতার শঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু একই প্রশ্ন_ প্রতি বছরই এ ধরনের সমস্যা আলোচনায় আসে। তাহলে আমরা কি অভিজ্ঞতা থেকে কিছুই শিখব না?
 

No comments

Powered by Blogger.