১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে খালেদা জিয়া-দাবি না মানলে ঈদের পর হরতাল-অবরোধ
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের জন্য সরকারকে আরো সময় দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, তাতেও এ দাবি মানা না হলে ঈদুল ফিতরের পর কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'ক্ষমতা ছেড়ে বাইরে আসুন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন।
সমানে সমানে লড়াই করি। আপনাদেরও জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।' এ সময় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন আয়োজন করতে দেওয়া হবে না বলেও ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করে দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'সরকার আমাদের দাবি না মানলে এ দেশে নির্বাচন হবে না।'
গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত জনসমাবেশে সরকারের প্রতি এসব হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম। খালেদা জিয়া মঞ্চে উপস্থিত হন সোয়া ৪টার দিকে। তিনি সন্ধ্যা ৬টায় শুরু করে ৪৫ মিনিটের বক্তব্যে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, 'সামনে রোজা ও ঈদের কারণে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আপাতত কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছি না। কিন্তু নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে না নিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। দেশের মা-বোনসহ দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের এই দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা হবে।' তবে তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রমজানের আগেই ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, মিথ্যা ও রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা এবং নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৭ জুন রবিবার সারা দেশের মহানগর ও জেলা-উপজেলা-পৌর এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ। গণবিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে ২৪ জুন রবিবার সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ। ইলিয়াস আলীসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী অপহরণ, সাংবাদিক সাগর-রুনি ও কূটনীতিক হত্যা এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ১ জুলাই রবিবার মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। সন্ত্রাস-দুর্নীতি, দুঃশাসন, বিদ্যুৎ, পানি সমস্যা, অসহনীয় যানজটের প্রতিবাদে ৮ জুলাই মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান। নিত্যপয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ জুলাই রবিবার সারা দেশে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই দুর্নীতি করছে। এ সরকার একটি দুর্নীতিবাজ সরকার। এটা জনগণের সরকার নয়। ঘাটতি বাজেটের টাকা কোথায় গেল? এসবই তাদের পকেটে চলে গেছে। এ সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের মানুষ না খেয়ে থাকে। অথচ মন্ত্রী-এমপিদের কাছ থেকে বস্তা ভরে টাকা উদ্ধার করা হয়।
দেশে গণতন্ত্র বা আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, পার্লামেন্টেও সংসদ সদস্যদের সম্মান দেওয়া হয় না। স্পিকারকে বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনে বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। গত ১২ মার্চের সফল মহাসমাবেশের কথা উল্লেখ তিনি বলেন, ওই মহাসমাবেশের আগে সরকার তিন দিন অঘোষিত হরতাল দিয়েছিল। বাস, লঞ্চসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার যে অঘোষিত হরতাল করল, তাতে কি দেশের ক্ষতি হয় না? আজকের সমাবেশেও যেন কেউ না আসতে পারে সে জন্য গতকালই (রবিবার) সারা দেশে যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমাবেশের মাইকের তার কেটে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গত তিন বছরে আপনারা শুধু মানুষ হত্যা করেছেন। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেছেন। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে এখন নিজের কাজে ব্যবহার করছেন। আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম আপনারা বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। জামায়াতে ইসলামী আপনাদের সঙ্গে ছিল। এখন তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তাহলে এখন এত আপত্তি কেন করছেন?
খালেদা জিয়া বলেন, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে লাভবান করাতে সাহারা গ্রুপকে নিয়ে এসেছে এই সরকার। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এই সাহারাকে একখণ্ড জমিও দেবে না। কারণ দেশীয় অনেক বিনিয়োগকারী আছেন এ ক্ষেত্রে যাঁরা অনেকে বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের বিপক্ষে নই। যেখানে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা সক্ষম, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ দরকার কেন?
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু করা হবে। এর একটি হবে মাওয়া দিয়ে, অপরটি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দিয়ে। সরকার এখন আর দেশ চালাতে পারছে না। তারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে দেশ চালাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি নেতাদের ৪০ জনকে জেলে রেখে আন্দোলন ও জনসমাবেশ বন্ধ করা যাবে না। কারণ বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী। একদল জেলে যাবে আরেক দল নেতা হবে।
সমাবেশে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, আশা করেছিলাম, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সব কারাবন্দি নেতা এ সমাবেশে যোগ দেবেন। কিন্তু সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েও নেতারা মুক্তি পাননি। আমরা আগেই বলেছিলাম, এ মামলা মিথ্যা মামলা। উচ্চ আদালতেও তা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁদের জামিন দিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাঁদের মুক্তি দেয়নি।
জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলা আবার পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, এই সরকার শেখ হাসিনার ১০টি দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করেছে।
বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, জনগণের স্বার্থের পক্ষে কথা বলে জেলখানায় যেতে সমস্যা নেই। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে মাহবুব-উল আলম হানিফ ও কামরুল ইসলাম জেলখানার কোন সেলে থাকবেন তা ঠিক করে এসেছি।
বিকল্প ধারা রাজপথে সঙ্গী হবে বিএনপির : ১৮ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত না হলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে বিএনপির সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহী বি চৌধুরী গতকাল নয়াপল্টনে ১৮ দলীয় জোটের জনসভায় বক্তব্যে এই ঘোষণা দেন। মাহি বলেন, খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি সব সময় দেশের ক্রান্তিকালে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে সারা দেশের মানুষের দাবিতে তিনি আন্দোলনে নেমেছেন।
১৮ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মজিবুর রহমান ও মিয়া গোলাম পরওয়ার, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অব. অলি আহমেদ বীরবিক্রম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজা, পিপলস লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গরীব নেওয়াজ, জাগপা মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। এ ছাড়া ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এম মোরশেদ খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নান, ফজলুর রহমান পটল, আবদুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, মো. শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, হারুন অর রশীদ, মসিউর রহমান, মুজিবুর রহমান সারোয়ার প্রমুখ।
সমাবেশ ঘিরে উৎসবের আমেজ : ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশকে ঘিরে পুরো নয়াপল্টন এলাকায় উৎসবের আমেজ লক্ষ করা গেছে। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রবিবার রাত থেকেই ওই এলাকা ছিল নেতা-কর্মীদের ভিড়ে মুখর। সারা রাত ধরে চলে মাইক ও মঞ্চ নির্মাণের কাজ। মাইক লাগানো হয় দেড় শতাধিক। ওই সড়কে সকাল ৭টা থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফজর নামাজের পর থেকেই জামায়াতের কর্মীরা আসা শুরু করে। ছাত্রশিবিরের কর্মীরা সবুজ রঙের কাপড়ে ছাত্রশিবির লিখে মাথায় বেঁধে সমাবেশে আসে। জামায়াতের কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে তারা লিফলেটও বিতরণ করে।
বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কর্মীরা বিভিন্ন রঙের গেঞ্জি ও ক্যাপ মাথায় অংশ নেয়।
ছাত্রদল-শিবির মারামারি : সমাবেশে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে মারামারির ঘটনায় উভয় সংগঠনের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের সুজন, মঈন উদ্দিন ও ফারুক হোসেনকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মঞ্চের সামনে বসা নিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা মারামারিতে রূপ নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী জানায়, সকাল থেকে শিবিরের কর্মীরা মঞ্চের পশ্চিম পাশ থেকে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত অবস্থান নেয়। মঞ্চের সামনের দিকে মহিলা দলের জন্য নির্ধারিত জায়গায়ও তারা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে মহিলা দলের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে শিবিরের কর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। তাঁদের এ জায়গা ছাড়ার কথা বললেই ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মীর ওপর তাঁরা চড়াও হন। একপর্যায়ে শিবিরকর্মীরা ব্যানারের লাঠি-বাঁশ নিয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে পাল্টা হামলা চালায় ছাত্রদল। প্রায় ১৫ মিনিট সংঘর্ষ চলার পর শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল মাইকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের শান্ত হওয়ার কথা বললেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি ও জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ নিচে নেমে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
গরমে জ্ঞানহারা : সমাবেশে আসা বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপি ও জামায়াতের অন্তত আট কর্মী অজ্ঞান হয়ে পড়লে সমাবেশ এলাকায় স্থাপিত ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কয়েকজনকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত জনসমাবেশে সরকারের প্রতি এসব হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম। খালেদা জিয়া মঞ্চে উপস্থিত হন সোয়া ৪টার দিকে। তিনি সন্ধ্যা ৬টায় শুরু করে ৪৫ মিনিটের বক্তব্যে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, 'সামনে রোজা ও ঈদের কারণে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আপাতত কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছি না। কিন্তু নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে না নিলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। দেশের মা-বোনসহ দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের এই দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা হবে।' তবে তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রমজানের আগেই ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, মিথ্যা ও রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা এবং নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৭ জুন রবিবার সারা দেশের মহানগর ও জেলা-উপজেলা-পৌর এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ। গণবিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে ২৪ জুন রবিবার সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ। ইলিয়াস আলীসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী অপহরণ, সাংবাদিক সাগর-রুনি ও কূটনীতিক হত্যা এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ১ জুলাই রবিবার মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। সন্ত্রাস-দুর্নীতি, দুঃশাসন, বিদ্যুৎ, পানি সমস্যা, অসহনীয় যানজটের প্রতিবাদে ৮ জুলাই মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান। নিত্যপয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ জুলাই রবিবার সারা দেশে মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই দুর্নীতি করছে। এ সরকার একটি দুর্নীতিবাজ সরকার। এটা জনগণের সরকার নয়। ঘাটতি বাজেটের টাকা কোথায় গেল? এসবই তাদের পকেটে চলে গেছে। এ সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের মানুষ না খেয়ে থাকে। অথচ মন্ত্রী-এমপিদের কাছ থেকে বস্তা ভরে টাকা উদ্ধার করা হয়।
দেশে গণতন্ত্র বা আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, পার্লামেন্টেও সংসদ সদস্যদের সম্মান দেওয়া হয় না। স্পিকারকে বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনে বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। গত ১২ মার্চের সফল মহাসমাবেশের কথা উল্লেখ তিনি বলেন, ওই মহাসমাবেশের আগে সরকার তিন দিন অঘোষিত হরতাল দিয়েছিল। বাস, লঞ্চসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার যে অঘোষিত হরতাল করল, তাতে কি দেশের ক্ষতি হয় না? আজকের সমাবেশেও যেন কেউ না আসতে পারে সে জন্য গতকালই (রবিবার) সারা দেশে যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমাবেশের মাইকের তার কেটে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গত তিন বছরে আপনারা শুধু মানুষ হত্যা করেছেন। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেছেন। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে এখন নিজের কাজে ব্যবহার করছেন। আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম আপনারা বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। জামায়াতে ইসলামী আপনাদের সঙ্গে ছিল। এখন তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তাহলে এখন এত আপত্তি কেন করছেন?
খালেদা জিয়া বলেন, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে লাভবান করাতে সাহারা গ্রুপকে নিয়ে এসেছে এই সরকার। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এই সাহারাকে একখণ্ড জমিও দেবে না। কারণ দেশীয় অনেক বিনিয়োগকারী আছেন এ ক্ষেত্রে যাঁরা অনেকে বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের বিপক্ষে নই। যেখানে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা সক্ষম, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ দরকার কেন?
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু করা হবে। এর একটি হবে মাওয়া দিয়ে, অপরটি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দিয়ে। সরকার এখন আর দেশ চালাতে পারছে না। তারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে দেশ চালাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি নেতাদের ৪০ জনকে জেলে রেখে আন্দোলন ও জনসমাবেশ বন্ধ করা যাবে না। কারণ বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী। একদল জেলে যাবে আরেক দল নেতা হবে।
সমাবেশে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, আশা করেছিলাম, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সব কারাবন্দি নেতা এ সমাবেশে যোগ দেবেন। কিন্তু সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েও নেতারা মুক্তি পাননি। আমরা আগেই বলেছিলাম, এ মামলা মিথ্যা মামলা। উচ্চ আদালতেও তা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁদের জামিন দিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাঁদের মুক্তি দেয়নি।
জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলা আবার পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, এই সরকার শেখ হাসিনার ১০টি দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করেছে।
বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, জনগণের স্বার্থের পক্ষে কথা বলে জেলখানায় যেতে সমস্যা নেই। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে মাহবুব-উল আলম হানিফ ও কামরুল ইসলাম জেলখানার কোন সেলে থাকবেন তা ঠিক করে এসেছি।
বিকল্প ধারা রাজপথে সঙ্গী হবে বিএনপির : ১৮ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত না হলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে বিএনপির সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহী বি চৌধুরী গতকাল নয়াপল্টনে ১৮ দলীয় জোটের জনসভায় বক্তব্যে এই ঘোষণা দেন। মাহি বলেন, খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি সব সময় দেশের ক্রান্তিকালে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে সারা দেশের মানুষের দাবিতে তিনি আন্দোলনে নেমেছেন।
১৮ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মজিবুর রহমান ও মিয়া গোলাম পরওয়ার, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অব. অলি আহমেদ বীরবিক্রম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, মুসলিম লীগের নির্বাহী সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজা, পিপলস লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গরীব নেওয়াজ, জাগপা মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। এ ছাড়া ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এম মোরশেদ খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নান, ফজলুর রহমান পটল, আবদুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, মো. শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, হারুন অর রশীদ, মসিউর রহমান, মুজিবুর রহমান সারোয়ার প্রমুখ।
সমাবেশ ঘিরে উৎসবের আমেজ : ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশকে ঘিরে পুরো নয়াপল্টন এলাকায় উৎসবের আমেজ লক্ষ করা গেছে। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রবিবার রাত থেকেই ওই এলাকা ছিল নেতা-কর্মীদের ভিড়ে মুখর। সারা রাত ধরে চলে মাইক ও মঞ্চ নির্মাণের কাজ। মাইক লাগানো হয় দেড় শতাধিক। ওই সড়কে সকাল ৭টা থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফজর নামাজের পর থেকেই জামায়াতের কর্মীরা আসা শুরু করে। ছাত্রশিবিরের কর্মীরা সবুজ রঙের কাপড়ে ছাত্রশিবির লিখে মাথায় বেঁধে সমাবেশে আসে। জামায়াতের কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে তারা লিফলেটও বিতরণ করে।
বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কর্মীরা বিভিন্ন রঙের গেঞ্জি ও ক্যাপ মাথায় অংশ নেয়।
ছাত্রদল-শিবির মারামারি : সমাবেশে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে মারামারির ঘটনায় উভয় সংগঠনের কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের সুজন, মঈন উদ্দিন ও ফারুক হোসেনকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মঞ্চের সামনে বসা নিয়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা মারামারিতে রূপ নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী জানায়, সকাল থেকে শিবিরের কর্মীরা মঞ্চের পশ্চিম পাশ থেকে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত অবস্থান নেয়। মঞ্চের সামনের দিকে মহিলা দলের জন্য নির্ধারিত জায়গায়ও তারা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে মহিলা দলের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে শিবিরের কর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। তাঁদের এ জায়গা ছাড়ার কথা বললেই ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মীর ওপর তাঁরা চড়াও হন। একপর্যায়ে শিবিরকর্মীরা ব্যানারের লাঠি-বাঁশ নিয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে পাল্টা হামলা চালায় ছাত্রদল। প্রায় ১৫ মিনিট সংঘর্ষ চলার পর শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল মাইকে তাঁদের নেতা-কর্মীদের শান্ত হওয়ার কথা বললেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি ও জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ নিচে নেমে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
গরমে জ্ঞানহারা : সমাবেশে আসা বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপি ও জামায়াতের অন্তত আট কর্মী অজ্ঞান হয়ে পড়লে সমাবেশ এলাকায় স্থাপিত ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কয়েকজনকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
No comments