নো ফ্লাই জোন পরিকল্পনা ভুল by আদেল সাফটি
একটি দেশের শাসনক্ষমতা পরিবর্তনের অধিকারী শুধু সে দেশের জনগণ, কোনো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নয়। আলজেরিয়া থেকে বাহরাইন, লিবিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত আরব ভূমির সর্বত্র স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অতি আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ করছে আরব জনগণের সংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবাদকারীদের বৈধ আন্দোলনের ব্যাপারে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে, তারা জনগণের জীবন রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদলের কথা বলেছে। কিন্তু আরবের শাসকরা সে আহ্বানে সাড়া দেননি। বরং নিজ দেশের জনগণের ওপর সহিংস দমন ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছেন। যে কারণে বিশ্বের সচেতন মহলের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে লিবিয়ার কথা বলা যায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ লিবিয়ার জনসাধারণকে রক্ষা করার উদ্দেশে লিবিয়ার আকাশে নো-ফ্লাই জোন কার্যকর করতে অনুমোদন দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী সেখানে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি ভুল নিহিত আছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ইস্যুটি অনেক নতুন সমস্যার জন্ম দিয়েছে। প্রথমত, লিবিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার নামে যে নো-ফ্লাই জোন কার্যকর হবে এমন ধারণা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের কারণ রয়েছে। কারণ, মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং তাঁর অনুসারীরা সরাসরি হত্যা ও দমননীতি গ্রহণ করেছে। তারা আর্টিলারি এবং হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করছে জনগণের বিরুদ্ধে। লক্ষণীয়, নো-ফ্লাই জোন কার্যকর হতে পারে একমাত্র উঁচু আকাশে বিমান চলাচল বাধাগ্রস্ত করার বেলায়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী যতক্ষণ গাদ্দাফির অনুসারী বাহিনীকে টার্গেট না করবে ততক্ষণ নো-ফ্লাই জোন কৌশল কোনো ফল অর্জন করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র নৌ-বাহিনীর অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল জে. লকলিয়ার তো স্বীকারই করেছেন, তিনি রিপোর্ট করেছেন, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বাহিনী ১৬২টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং নিখুঁতভাবে ১০০টি বোমা ফেলেও গাদ্দাফির সরকারি বাহিনীকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, এবার গাদ্দাফিকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কিন্তু এ ঘোষণার পর গাদ্দাফির তরফ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় তখন থেকেই বোমা হামলা চলছে ক্ষমতার পালাবদলের জন্য। এই নো-ফ্লাই জোন পলিসির মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের চেষ্টাও নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে আমাদের মধ্যে। এ ধরনের শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চাওয়াও একটি বেআইনি কাজ।
মানবাধিকারের নামে হস্তক্ষেপ
আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক কথা হলো, প্রতিটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। প্রকৃত অর্থে বলা যায়, মিউনিসিপাল আইন যেমন জনসাধারণের ওপর বর্তিত হয় তেমনি আন্তর্জাতিক আইন রাষ্ট্রের ওপর। জাতিসংঘের চার্টারে পরিষ্কার বলা আছে, জাতিসংঘের সদস্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। মানবাধিকার রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ এ আইনের ব্যতিক্রম। কোনটি মানবাধিকার রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ তার সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তাই মানবাধিকার প্রশ্নে হস্তক্ষেপ একটি ন্যায় ও মহত কাজ বলে বিবেচনা করা হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা এখন অনেক রাজনৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। অন্য কথায় বলা যায়, নিরাপত্তা পরিষদে যেসব দেশ অনুমোদন দিতে পারে এবং অনুমোদনে বাধা দিতে পারে সেসব সদস্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বার্থ এখানে বড় হয়ে উঠছে। এটাই আন্তর্জাতিক আইনকে দুর্ভাগা করে তুলেছে। যাকে বলে আইনের সিলেকটিভ প্রয়োগ। দুটি উদাহরণ মনে আসছে_২০০৬ সালে ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধে এবং সম্প্রতি গাজায় আক্রমণের ব্যাপারে ইসরায়েলের বোমা হামলা এবং বেসামরিক জনগণকে হত্যা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে গোল্ডস্টোন রিপোর্ট ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। জাতিসংঘের গোল্ডস্টোন কমিশন দেখতে পেয়েছে, ইসরায়েল পরিষ্কার যুদ্ধাপরাধ করেছে। আপনি কী ভাবতে পারেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বেসামরিক জনগণকে হত্যা ঠেকাতে সেখানে হস্তক্ষেপের অনুমোদন দেবে?
দ্বিতীয় উদাহরণ হলো_রুয়ান্ডার গণহত্যা। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার আট লাখ মানুষ গণহত্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাশে দাঁড়িয়ে সে হত্যা প্রত্যক্ষ করেছে। স্বাধীন জাতিসংঘ কমিশন দেখতে পেয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘের সিস্টেমের ভেতর দায়িত্ব পালনে লজ্জাজনক অপারগতা নিহিত আছে।
লিবিয়ার সরকারি বাহিনীর নিষ্ঠুরতা থেকে বেসামরিক নাগরিকরা রক্ষা পাবে এমন বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্তু এখানে অন্য একটি পন্থা অবলম্বন করা হবে; যে পন্থায় লিবিয়ার সংঘাত ঠেকাতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
লেখক : রাশিয়ার সাইবেরিয়ান একাডেমী অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক।
গালফ নিউজ থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, এবার গাদ্দাফিকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কিন্তু এ ঘোষণার পর গাদ্দাফির তরফ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় তখন থেকেই বোমা হামলা চলছে ক্ষমতার পালাবদলের জন্য। এই নো-ফ্লাই জোন পলিসির মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের চেষ্টাও নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে আমাদের মধ্যে। এ ধরনের শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চাওয়াও একটি বেআইনি কাজ।
মানবাধিকারের নামে হস্তক্ষেপ
আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক কথা হলো, প্রতিটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। প্রকৃত অর্থে বলা যায়, মিউনিসিপাল আইন যেমন জনসাধারণের ওপর বর্তিত হয় তেমনি আন্তর্জাতিক আইন রাষ্ট্রের ওপর। জাতিসংঘের চার্টারে পরিষ্কার বলা আছে, জাতিসংঘের সদস্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। মানবাধিকার রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ এ আইনের ব্যতিক্রম। কোনটি মানবাধিকার রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ তার সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তাই মানবাধিকার প্রশ্নে হস্তক্ষেপ একটি ন্যায় ও মহত কাজ বলে বিবেচনা করা হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা এখন অনেক রাজনৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। অন্য কথায় বলা যায়, নিরাপত্তা পরিষদে যেসব দেশ অনুমোদন দিতে পারে এবং অনুমোদনে বাধা দিতে পারে সেসব সদস্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বার্থ এখানে বড় হয়ে উঠছে। এটাই আন্তর্জাতিক আইনকে দুর্ভাগা করে তুলেছে। যাকে বলে আইনের সিলেকটিভ প্রয়োগ। দুটি উদাহরণ মনে আসছে_২০০৬ সালে ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধে এবং সম্প্রতি গাজায় আক্রমণের ব্যাপারে ইসরায়েলের বোমা হামলা এবং বেসামরিক জনগণকে হত্যা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে গোল্ডস্টোন রিপোর্ট ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। জাতিসংঘের গোল্ডস্টোন কমিশন দেখতে পেয়েছে, ইসরায়েল পরিষ্কার যুদ্ধাপরাধ করেছে। আপনি কী ভাবতে পারেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বেসামরিক জনগণকে হত্যা ঠেকাতে সেখানে হস্তক্ষেপের অনুমোদন দেবে?
দ্বিতীয় উদাহরণ হলো_রুয়ান্ডার গণহত্যা। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার আট লাখ মানুষ গণহত্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাশে দাঁড়িয়ে সে হত্যা প্রত্যক্ষ করেছে। স্বাধীন জাতিসংঘ কমিশন দেখতে পেয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘের সিস্টেমের ভেতর দায়িত্ব পালনে লজ্জাজনক অপারগতা নিহিত আছে।
লিবিয়ার সরকারি বাহিনীর নিষ্ঠুরতা থেকে বেসামরিক নাগরিকরা রক্ষা পাবে এমন বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্তু এখানে অন্য একটি পন্থা অবলম্বন করা হবে; যে পন্থায় লিবিয়ার সংঘাত ঠেকাতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
লেখক : রাশিয়ার সাইবেরিয়ান একাডেমী অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক।
গালফ নিউজ থেকে ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments