গণসমাবেশে খালেদা জিয়া-ঈদের পর হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আরও সময় দিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এ জন্য এখনই কঠোর কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে ঈদুল ফিতরের পর হরতাল, অবরোধ ও ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি পুনর্বহালে সরকারকে বেঁধে দেওয়া ৯০ দিনের সময় শেষ হওয়ার পর গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কঠোর কর্মসূচি দেননি। তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলব দাবি মেনে নিন। আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’ তিনি বলেন, দাবি আদায় না হলে আন্দোলন ক্রমান্বয়ে জোরদার হবে। অপ্রতিরোধ্য করতে আন্দোলন বিস্তৃত করা হবে।
গত ১২ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন দাবি আদায়ে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন। দাবি আদায় না হলে ১১ জুন কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু গতকাল খালেদা জিয়া ঈদের পর কর্মসূচি দেওয়ার কথা বললেন।
বেলা সোয়া দুইটা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হলেও সকাল ১০টার পর থেকেই মিছিল নিয়ে সামবেশস্থলে আসতে থাকেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। দুপুরের দিকে মিছিলসহ পৌঁছায় ছাত্রদল।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও জোটের শরিক দলের নেতা-কর্মীরা একের পর এক মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসেন। বেলা তিনটার দিকে পশ্চিম দিক কাকরাইল মোড় থেকে পূর্বে ফকিরের পুল কাঁচাবাজার পর্যন্ত ভরে যায়। কিছু মানুষ নাইটিংগেল মোড় থেকে পুরানা পল্টনের বিজয়নগর পানির ট্যাংকি পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয়। ওফকিরের পুল মোড় থেকে দৈনিক বাংলা সড়কেও কিছু নেতা-কর্মী ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবক দল মাথায় হলুদ ক্যাপ আর ছাত্রদল তারেক রহমানের ছবি-সংবলিত সাদা টি-শার্ট পরে সমাবেশে অংশ নেয়। জাময়াত ও ছাত্রশিবিরের কর্মীরা সাদা ক্যাপ পরে সমাবেশ মঞ্চের উল্টো দিকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে পশ্চিম দিকে অবস্থান নেন। এর পাশে ছিল যুবদল।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা তারেক রহমানের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার বহন করেন। আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি জামায়াতের ছয় নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার ছবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের মুক্তির দাবিতে মিছিল করেন।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন করে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সবার জন্য সমান সুযোগ দেন। আমরা-আপনারা লড়ব। দেখা যাবে কাদের জনপ্রিয়তা বেশি। নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ পরাজিত হবে।’ তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় কেন? নির্বাচন দিন, জিতলে আবার ক্ষমতায় আসবেন। আগের সময়ের চেয়ে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক বেশি প্রয়োজন। ক্ষমতা ছেড়ে সরকার নির্বাচন দিতে ভয় পায়। কেননা, ওই সময় কোনো জায়গায় গেলে জনগণের ধোলাই খেতে হবে।’
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘বিডিআরের ঘটনার সময় তিনি খুনিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি খুনিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, অথচ বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চান না।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। নইলে দেশ বাঁচবে না। অত্যাচার সহ্য করা আর চোখের পানি ফেলার সময় নয়। যারা অত্যাচার করছে, তারাই চোখের পানি ফেলবে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘সরকারের এখন দুটো টার্গেট। এক. বিরোধী দল এবং দুই. সাংবাদিক। এরা সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতিকে হত্যা করেছে। সাগর-রুনির কাছে সরকারের দুর্নীতির তথ্য ছিল। ক্যাসেট ছিল। কিন্তু তারা যে টেলিভিশনে কাজ করে, তার মালিক সরকারের পা-চাটা লোক। সে প্রকাশ করতে রাজি না হওয়ায় তারা অন্যত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ জন্য তাদের হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, বিএনপির ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু তা হবে না। এক-এগারোতে হয়নি। বেইমান দিয়ে দল হয় না। যারা বেইমানি করেছে, তারা শেষ হয়ে গেছে। নেতৃত্ব আসে পর্যায়ক্রমে।
পাঁচ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি: গতকালের গণসমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া পাঁচ দিন দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন। গতকাল ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে আছে: নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় আটক রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে ১৭ জুন সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ; জনগণের ওপর নতুন করের বোঝা চাপানো, কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাস, রপ্তানি পণ্যের উৎসে কর বৃদ্ধি, ঋণনির্ভর ও গণবিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে ২৪ জুন; ইলিয়াস আলীসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী-ব্যবসায়ী অপহরণ, সাংবাদিক সাগর-রুনি ও কূটনৈতিক হত্যা এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন এবং আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ১ জুলাই; সন্ত্রাস-দুর্নীতি, দুঃশাসন, বিদ্যুৎ-পানির সমস্যা, অসহনীয় যানজটের প্রতিবাদে ৮ জুলাই এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ জুলাই সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ জুলাইয়ের কর্মসূচি থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হবে। তবে প্রয়োজনে ঈদের আগে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া বন্ধ করুন। নইলে এর দায় আপনাদের বহন করতে হবে।’
আরও যাঁরা বক্তব্য দিলেন: সমাবেশে জামায়াতের নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ বলেন, একসময় তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা বলত, এখন বলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। গত সাড়ে তিন বছরে ২০০ হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এই তাজা মানবতাবিরোধী হত্যার বিচার আগে করুন।
এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ সরকারের উদ্দেশে বলেন, আলোচনায় আসুন, আলোচনা ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, দলীয় সরকারের অধীন কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেন, এখন থেকে বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে তাঁর দল। বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ডিজিটাল দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেওয়া যাবে না। হানিফ-কামরুলের জন্য জেলখানায় রুম ঠিক করে এসেছি। আপনি কিন্তু ছাড় দিতে পারবেন না।’
বিএনপির ঢাকা মহানগরের সদস্যসচিব আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের আমির মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
‘পলাতক’ তিন জামায়াত নেতা সমাবেশে: পুলিশের দৃষ্টিতে পলাতক জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের তিন নেতা গতকাল সমাবেশে আসেন, বক্তব্যও দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় এঁরা আসামি। এদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এই তিন নেতা হলেন: জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল ও ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কঠোর কর্মসূচি দেননি। তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলব দাবি মেনে নিন। আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আশা করি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’ তিনি বলেন, দাবি আদায় না হলে আন্দোলন ক্রমান্বয়ে জোরদার হবে। অপ্রতিরোধ্য করতে আন্দোলন বিস্তৃত করা হবে।
গত ১২ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন দাবি আদায়ে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন। দাবি আদায় না হলে ১১ জুন কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু গতকাল খালেদা জিয়া ঈদের পর কর্মসূচি দেওয়ার কথা বললেন।
বেলা সোয়া দুইটা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হলেও সকাল ১০টার পর থেকেই মিছিল নিয়ে সামবেশস্থলে আসতে থাকেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। দুপুরের দিকে মিছিলসহ পৌঁছায় ছাত্রদল।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও জোটের শরিক দলের নেতা-কর্মীরা একের পর এক মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসেন। বেলা তিনটার দিকে পশ্চিম দিক কাকরাইল মোড় থেকে পূর্বে ফকিরের পুল কাঁচাবাজার পর্যন্ত ভরে যায়। কিছু মানুষ নাইটিংগেল মোড় থেকে পুরানা পল্টনের বিজয়নগর পানির ট্যাংকি পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয়। ওফকিরের পুল মোড় থেকে দৈনিক বাংলা সড়কেও কিছু নেতা-কর্মী ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবক দল মাথায় হলুদ ক্যাপ আর ছাত্রদল তারেক রহমানের ছবি-সংবলিত সাদা টি-শার্ট পরে সমাবেশে অংশ নেয়। জাময়াত ও ছাত্রশিবিরের কর্মীরা সাদা ক্যাপ পরে সমাবেশ মঞ্চের উল্টো দিকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে পশ্চিম দিকে অবস্থান নেন। এর পাশে ছিল যুবদল।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা তারেক রহমানের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার বহন করেন। আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি জামায়াতের ছয় নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার ছবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের মুক্তির দাবিতে মিছিল করেন।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন করে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সবার জন্য সমান সুযোগ দেন। আমরা-আপনারা লড়ব। দেখা যাবে কাদের জনপ্রিয়তা বেশি। নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ পরাজিত হবে।’ তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় কেন? নির্বাচন দিন, জিতলে আবার ক্ষমতায় আসবেন। আগের সময়ের চেয়ে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক বেশি প্রয়োজন। ক্ষমতা ছেড়ে সরকার নির্বাচন দিতে ভয় পায়। কেননা, ওই সময় কোনো জায়গায় গেলে জনগণের ধোলাই খেতে হবে।’
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘বিডিআরের ঘটনার সময় তিনি খুনিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি খুনিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, অথচ বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চান না।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। নইলে দেশ বাঁচবে না। অত্যাচার সহ্য করা আর চোখের পানি ফেলার সময় নয়। যারা অত্যাচার করছে, তারাই চোখের পানি ফেলবে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘সরকারের এখন দুটো টার্গেট। এক. বিরোধী দল এবং দুই. সাংবাদিক। এরা সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতিকে হত্যা করেছে। সাগর-রুনির কাছে সরকারের দুর্নীতির তথ্য ছিল। ক্যাসেট ছিল। কিন্তু তারা যে টেলিভিশনে কাজ করে, তার মালিক সরকারের পা-চাটা লোক। সে প্রকাশ করতে রাজি না হওয়ায় তারা অন্যত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ জন্য তাদের হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, বিএনপির ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু তা হবে না। এক-এগারোতে হয়নি। বেইমান দিয়ে দল হয় না। যারা বেইমানি করেছে, তারা শেষ হয়ে গেছে। নেতৃত্ব আসে পর্যায়ক্রমে।
পাঁচ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি: গতকালের গণসমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া পাঁচ দিন দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন। গতকাল ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে আছে: নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় আটক রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে ১৭ জুন সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ; জনগণের ওপর নতুন করের বোঝা চাপানো, কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাস, রপ্তানি পণ্যের উৎসে কর বৃদ্ধি, ঋণনির্ভর ও গণবিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে ২৪ জুন; ইলিয়াস আলীসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী-ব্যবসায়ী অপহরণ, সাংবাদিক সাগর-রুনি ও কূটনৈতিক হত্যা এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন এবং আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ১ জুলাই; সন্ত্রাস-দুর্নীতি, দুঃশাসন, বিদ্যুৎ-পানির সমস্যা, অসহনীয় যানজটের প্রতিবাদে ৮ জুলাই এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ জুলাই সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৫ জুলাইয়ের কর্মসূচি থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হবে। তবে প্রয়োজনে ঈদের আগে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া বন্ধ করুন। নইলে এর দায় আপনাদের বহন করতে হবে।’
আরও যাঁরা বক্তব্য দিলেন: সমাবেশে জামায়াতের নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ বলেন, একসময় তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা বলত, এখন বলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। গত সাড়ে তিন বছরে ২০০ হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এই তাজা মানবতাবিরোধী হত্যার বিচার আগে করুন।
এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ সরকারের উদ্দেশে বলেন, আলোচনায় আসুন, আলোচনা ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, দলীয় সরকারের অধীন কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেন, এখন থেকে বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে তাঁর দল। বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ডিজিটাল দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেওয়া যাবে না। হানিফ-কামরুলের জন্য জেলখানায় রুম ঠিক করে এসেছি। আপনি কিন্তু ছাড় দিতে পারবেন না।’
বিএনপির ঢাকা মহানগরের সদস্যসচিব আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের আমির মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
‘পলাতক’ তিন জামায়াত নেতা সমাবেশে: পুলিশের দৃষ্টিতে পলাতক জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের তিন নেতা গতকাল সমাবেশে আসেন, বক্তব্যও দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় এঁরা আসামি। এদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এই তিন নেতা হলেন: জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল ও ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী।
No comments