পদ্মা সেতুর বিষয়ে একজনই কথা বলুন, বারোজন নয় by মুনতাসীর মামুন

সৈয়দ আবুল হোসেনকে আমার ভালই লাগে, যদিও আমার সঙ্গে তার তেমন পরিচয় নেই। ভিড়ের মাঝে হয়ত তিনি আমাকে চিনবেনও না। আর পরিচয় হওয়ার বা ঘনিষ্ঠ হওয়ার ক্ষেত্রও নেই। আমাদের জগত ভিন্ন। আমি সব সময় তার হাসিমুখ দেখি। গলার স্বর কখনও উঁচু হতে শুনিনি। এক ধরনের সারল্য আছে তার মধ্যে।


হয়ত এ কারণে সব সময় তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার পৃষ্ঠপোষকরা তাকে পছন্দ করেন। নিশ্চয় তার কোন না কোন গুণ আছে। আমাদেরকে তো নেতা-নেত্রীরা পছন্দ করেন না। স্বাধীন হওয়ার পর সামান্য সরকারী চাকরি করতেন। কী সব ঝামেলা হলো তাকে নিয়ে, চাকরি গেল। হঠাৎ স্বৈরাচারী, কবি, ধর্মব্যবসায়ী, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার জবরদস্ত খাতির হয়ে গেল। এরশাদ পতনের পর জানা গেল যে ক’জন ব্যবসায়ী এরশাদের নজর কেড়েছিলেন তার মধ্যে আবুল হোসেন একজন। এরশাদ যাদের খাতির করেছিলেন তাদের কেউ ছুঁতে পারেনি। কিন্তু তাকে জেল খাটতে হলো। ইতিহাসের ট্র্যাজেডি এখানেই। এক হিসেবে জানা যায়, এরশাদ তাকে ৫২৫ কোটি টাকার ব্যবসা দিয়েছিলেন। তার উত্থান মূলত সেখান থেকেই।
১৯৯০ সালের পর দেখা গেল তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তারপর থেকে আওয়ামী লীগেই আছেন। আরও ধনাঢ্য হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে মন্ত্রী হলেন। আবার কী এক কা- করলেন। শেখ হাসিনা বাধ্য হলেন তাকে খারিজ করতে। শেখ হাসিনা যখন বিপদাপন্ন তখন আমরা তার পক্ষ নিয়ে মাতামাতি করলেও আবুল হোসেন সোজা পদত্যাগ করলেন আওয়ামী লীগ থেকে, শেখ হাসিনাকে তিনি চেনেন না এমন একটা ভাবও এলো তার মধ্যে। শেখ হাসিনা তো শেখ হাসিনাই। ফের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন। আর আবুল হোসেন আরও বড় পদে ফিরে এলেন। এবং আবার গাড্ডায় পড়লেন। আবারও মন্ত্রিত্ব গেল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এখনও আবুল হোসেনের পক্ষে একাই লড়াই করছেন। তিনি তাকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলেছেন। কিন্তু এখনও তো পাঠ্য-পুস্তকে তার জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেননি। সুতরাং এই নিয়ে এত হইচইয়ের কী কারণ জানি না। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া তার পিছে যেভাবে লেগেছে, তাতে আবুল হোসেনের পক্ষে দেশে এখন বসবাস করাই মুশকিল হয়ে উঠেছে। আবুল হোসেন যে সরল তা বোঝা যায় তিনি কোন পত্রিকা ও টেলিভিশন করেননি। এটিই তার একমাত্র বোকামি। যারা আজ মিডিয়া কনট্রোল করছেন তারাও তো আবুল হোসেনের মতোই ব্যবসায়ী। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সমালোচকদের আপনার বন্ধু না মনে করলেও বলি, এই মন্তব্য দেশের মানুষজনকে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ করেছে।
এত বড় পটভূমি করতে হলো একটি কারণে। আমার বন্ধু শাহরিয়ারের ভাষায়, ইতিহাসের দর্শন বোঝাবার জন্য। এখান থেকে ইতিহাসের কি মাজেজা আমরা পাই? আবুল হোসেনদের জন্য শাসকরা গাড্ডায় পড়েন। কিন্তু আবুল হোসেনদের তারা ভালবাসেন। কেননা আবুল হোসেনরা প্রয়োজনে তাদের উপেক্ষা করতে পারে, ছেঁড়া জুতোর মতো ছুড়ে ফেলতে পারে। যারা তাদের জন্য জীবনবাজি রাখেন, ঝুঁকি নেন তাদের শাসকরা উপেক্ষা করেন, কারণ তারা তো শাসকদের কিনে নিতে পারেন না, ছুড়ে দিতে পারেন না। ইতিহাসের দর্শন বলে, আবুল হোসেনকে নিয়ে এত মাতামাতির দরকার নেই। তারা আছেন, থাকবেন এবং আবারও মন্ত্রী হবেন। এবং তখনই এই মিডিয়ার মালিকরাই তার কাছে গিয়ে বসে থাকবেন।
না, র‌্যাগস টু রিচেস স্টোরি লেখার জন্য বসিনি। আলোচনার প্রসঙ্গ ভিন্ন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে সাধারণ মানুষের জন্য আকর্ষণীয় ছিল দুটি প্রতিশ্রুতিÑযুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও পদ্মা সেতু নির্মাণ। এই দুই প্রতিশ্রুতির কারণে, তাদের ভোটের বাক্স ভরে উঠেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সব সময়ে সমস্যা হচ্ছে ভোটের বাক্সটা বেশিদিন তারা ভরে রাখতে ইচ্ছুক নয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হলে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দ্রুত বিচার চালানোর জন্য যা করা দরকার তা করা হচ্ছে না। যে সব মন্ত্রী প্রায় এ বিষয়ে উপদেশ দেন তাদের কোন জ্ঞানই নেই বিচার পদ্ধতি ও কাঠামো সম্পর্কে। দায়িত্ব নিয়েই এ কথা বলছি। ট্রাইব্যুনাল হওয়ার আগে থেকে আমরা বলেছি অবকাঠামোর নিতান্ত অভাব। ট্রাইব্যুনালকে স্বাধীন করুন। আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীন থেকে তাদের মুক্ত করুন। আর যদি রাখতেই চান অর্থমন্ত্রীর অধীনে রাখুন। বাইরের মানুষের কথাবার্তা তিনি শোনেন এবং গুরুত্ব দেন। কে শোনে কার কথা! শাহরিয়ার কবিরও লিখেছেন, “সরকার পক্ষ থেকে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, মামলা ও ট্রাইব্যুনাল পরিচালনার জন্য এ পর্যন্ত দুই ট্রাইব্যুনালে ৬ জন বিচারক, ১৫ জন আইনজীবী ও ১৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা এবং সাধারণ বিভাগে ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।” ১৩ জন কর্মচারী দিয়ে দুটি ট্রাইব্যুনাল! এ রকম চিন্তা আওয়ামী মন্ত্রীদের পক্ষেই করা সম্ভব। আর এ সব কথা বলার কারণে আইনমন্ত্রী [যিনি নির্মূল কমিটির একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন] মনে করেন আমরা তার বিরোধী। এবং আওয়ামী লীগারদের ধারণা, অপ্রয়োজনে আমরা সরকারের সমালোচনা করছি। তারা যদি জানতেন হতাশার মেঘ কিভাবে আচ্ছন্ন করছে মানুষকে, তাহলেও হয়ত একটু সতর্ক হতেন।
পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা জবর উল্লসিত হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু করেছিলেন যমুনা সেতু, তাঁর কন্যা করবেন পদ্মা সেতু! বিশ্বব্যাংকও রাজি। প্রধানমন্ত্রীর বৃহস্পতি তখন তুঙ্গে। তারপরই হলো শনির দশা। বিশ্বব্যাংক রাজি নয়, কারণ দুর্নীতির গন্ধ পেয়েছে তারা। এই নিয়ে প্রায় একটি বছর বিতর্ক চলল এবং চলছে। একটি রাজনৈতিক সরকারকে একটি ব্যাংক দুর্নীতিবাজ বলবে, এটি কোন রাজনৈতিক সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে নাÑসেটি আমাদের বুঝতে হবে। ধরা যাক, সরকার ছাগল চরাচ্ছে, ছাগল আমার সব কাঁঠাল চারা খেয়ে ফেলেছে। আমার দাবি ছাগল কতল করতে হবে। কিন্তু সরকার কি তখনই তা কতল করবে, না টালবাহানা করবে? কারণ ছাগল তো তার। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক হম্বিতম্বি হলো। আসল ইস্যু হারিয়ে গেল।
এখন সমস্যাটা কি? বিশ্বব্যাংক বলেছে টাকা দেবে না। শেখ হাসিনা বলছেন, কুছ পরোয়া নেই। আমরাই করব। জাতীয়তাবাদী প্রেরণা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। তারপর শুনি বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে আবুল হোসেনকে যেতে হলো। অর্থমন্ত্রী বললেন, বিশ্বব্যাংক ফিরবে। অন্য দাতাদের কাছে তদবির চলল। প্রধানমন্ত্রী এখনও বার বার বলছেন, আমরা পদ্মা সেতু করব। দোষ বিশ্বব্যাংকের। যেখানে টাকা দেয়া হয়নি সেখানে দুর্নীতি হলো কিভাবে? লন্ডনে তিনি এই ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে, বিশ্বব্যাংকের পছন্দসই ফার্মকে অনুমোদন না করায় এই বিপত্তি। বিশ্বব্যাংকের চিঠি তিনি বিশ্বব্যাংককে প্রকাশ করতে বলেছেন, তিনি করবেন না। অর্থমন্ত্রী বলছেন “দুর্নীতির কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ না থাকলেও বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ না থাকলেও আবুল হোসেনকে এ পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তবে এ ধরনের ঘটনা সচরাচর ঘটে না। সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রীর পদ ছাড়ায় এবং একজন ‘উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা’ ছুটিতে যাওয়ায় বিশ্বব্যাংক আবার পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। [জনকণ্ঠ ২৫.৭.১২]
অর্থমন্ত্রীর স্থান সবাই ধরে নেন প্রধানমন্ত্রীর পরেই। যার অধীনে পদ্মা সেতু হবে, সেই যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কি বলেনÑ“পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন নিয়ে অর্থমন্ত্রী বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিলেও অর্থমন্ত্রী এখনও বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে সকাল-বিকেল একেকবার একেক রকম কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এভাবেই অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে তাঁকে পদ্মা সেতু নিয়ে ‘ইঁদুর-বেড়াল’ খেলা বন্ধ করার পরামর্শ দেয়া হয়। বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রী সংসদীয় কমিটির সঙ্গে একমত পোষণ করে জানান, পদ্মা সেতু বিষয়ে অর্থমন্ত্রী তাঁকে কোন তথ্য দেন না।” [ঐ]
যে সরকারের কোন দিকনির্দেশনা থাকে না সে সরকারের পক্ষ থেকেই এ ধরনের বক্তব্য দেয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, এর আগে ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতু মালয়েশীয় সাহায্যে করে ফেলেছিলেন। অর্থমন্ত্রী তাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাননি। এরপর শুনেছি, চীনারা এগিয়ে এসেছে। সে সম্পর্কেও এখন উচ্চবাচ্য নেই। অর্থমন্ত্রী এ রকম ইঙ্গিত দিয়েছেন বিভিন্ন মন্তব্যে যে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ নিয়ে না করলে পদ্মা সেতু লাভজনক হবে না।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিন ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়, অনেকে পৌঁছেছেনও-
১. বিশ্বব্যাংকের ঋণ নিয়ে সরকার দু’ভাগে বিভক্ত। প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে আগ্রহী, অর্থমন্ত্রী নন।
মন্তব্য : এ ধরনের ইঙ্গিত সরকার সমর্থকদের হতাশ ও বিরোধীদের উল্লসিত করবে।
২. সরকারী স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে বলবেন। অর্থমন্ত্রী পক্ষে শুধু বলবেন না যাতে বিশ্বব্যাক ঋণ দেয় তার জন্যও সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
মন্তব্য : এই স্ট্র্যাটেজি কার্যকর হবে না। বিশ্বব্যাংক ও তার সমর্থকরা এই মন্তব্যই করবে, দেশের প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন সেটিই সরকারী বক্তব্য। এবং এ সরকারের কোন দিকনির্দেশনা নেই। এটি কার্যকর সরকার নয়।
৩. যে সরকারের সব মন্ত্রীর কোন একটি বিষয়ে নিজস্ব বক্তব্য থাকে সে সরকার সম্পর্কে কেউ উচ্চ ধারণা পোষণ করে না।
মন্তব্য : ধরে নেয়া হয় মন্ত্রীরা অর্থাৎ সরকারের ওপর প্রধানমন্ত্রীর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এবং তারা থোড়াই কেয়ার করেন প্রধানমন্ত্রীকে।
তা হলে, বিষয়টা কি দাঁড়াচ্ছে? পদ্মা সেতুর বিষয়টি সরকার জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছে। সরকার নিজেই ঠিক করতে পারছে না কি করবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে এক ধরনের অনীহা, আর পদ্মা সেতুর ব্যাপারে উদ্ভ্রান্ত। দু’টি ভাইটাল ইস্যুতে সরকারের অবস্থান এই। ভোটের বাক্স ভরবে কিভাবে। পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে দিতে পারে। পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিতে পারে। আবুল হোসেন নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে এখন এ বিষয়ে মাথা ঘামানো উচিত। জিতলে, আবুল হোসেনকে আবার মন্ত্রী করা যাবে। পরাজিত হলে আবুল আবার নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেন অথবা আওয়ামী লীগের কপালে ঝাড়ু মারবেন যেমন গতবার মেরেছিলেন।
ইস্যু হচ্ছে আওয়ামী লীগকে জিততে হবে, কারণ আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিলাম। আওয়ামী লীগের [এবং বিএনপিরও] ওপরের দিকের সন্তান/পরিজনরা বিদেশে। পরাজিত হলে তারা সেখানে চলে যাবেন এবং আমাদের ওপর দোজখ বর্তাবে। সে জন্য আমরা চাই আওয়ামী লীগ জিতুক। তবে এ কারণে যে আমরা খুব চিন্তিত তা নই। আমরা জানি খোদা এভাবেই বান্দাদের সততার পরীক্ষা করেন। আওয়ামী লীগ জিতুক প্রধানমন্ত্রীও তাই চান নিশ্চয়, কিন্তু তার মন্ত্রী ও চামচাদের অনেকের ধারণা বিএনপিই আসবে। এটাই নাকি প্যাটার্ন। প্রধানমন্ত্রী প্যাটার্নের বাইরে আগেও কাজ করেছেন। এখনও করবেন ইনশাল্লাহ।
জিততে হলে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও মিডিয়া বিশ্বব্যাংকের পক্ষে, আমলারাও। কারণ কখনও না কখনও তারা বিশ্বব্যাংকের দ্বারা উপকৃত। আর বিশ্বব্যাংকের ঋণে ঝামেলা কম। বিশ্বব্যাংকের ঋণ চাইলে, বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত মানতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয়তাবাদী প্রেরণামূলক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকতে হবে। একমাত্র অর্থমন্ত্রীকেই এ বিষয়ে কথা বলতে দিতে হবে, তবে সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। বিশ্বব্যাংক এখন হয়ত একটু নমনীয়। আইটি খাতে যে ঋণ তারা স্থগিত করেছিল তা আবার দেয়া হয়েছে আবুলের পদত্যাগের পর।
বিশ্বব্যাংকের শর্তাবলী পছন্দ না হলে, অর্থমন্ত্রীকে কথা বলা থেকে বিরত রাখতে হবে। ব্যাংককে জানিয়ে দিতে হবে, পদ্মা সেতুর জন্য আমরা ঋণ নেব না। অন্যান্য খাতে যেমন আছে তেমনই চলবে। তা বাড়িয়ে কারও সঙ্গে ঝগড়া করে লাভ নেই। এবং নিজস্ব অর্থায়নের উপায় ভেবে জাতীয়তাবোধে অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে। সেটি প্রধানমন্ত্রী পারবেন। বিবিসি ও আল জাজিরার তিনি যেভাবে মুখোমুখি হয়েছেন তা প্রশংসিত হয়েছে। লন্ডনে প্রবাসীদের যে বলেছেন পদ্মা সেতুর জন্য চাঁদা না তুলে, সাহায্য না তুলে, একটু রেমিট্যান্স বাড়াতে হবেÑসে বক্তব্য ভাল লেগেছে। এখন সবাইকে শুধু উজ্জীবিত করতে হবে এবং এটি নির্বাচনী মবিলাইজেশনেও কাজ করবে। এবং নিজস্ব অর্থায়নে হলে শুধু প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন, অন্য কেউ নয়।
এর আর কোন বিকল্প আছে বলে আমাদের মনে হয় না। এ দু’টি বিকল্পের যে কোন একটি অতিদ্রুত গ্রহণ করতে হবে। সময় নেই। প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা ভাববেন না, দেশের অবস্থা খালি তারাই বোঝেন। আমরাও বুঝি। এবং সেই অনুভব থেকে বলছি সবকিছু সরকারের পক্ষে নেই। আর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা সংস্থাকে চটিয়ে বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশ খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না এটিও মনে রাখা বাঞ্ছনীয়।

No comments

Powered by Blogger.