পদ্মা সেতু প্রকল্প-বিশ্বব্যাংকের সাড়া পেয়েই চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে এডিবি ও জাইকা! by আবুল কাশেম

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণচুক্তি কার্যকরের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে 'গ্রিন সিগন্যাল' হিসেবেই দেখছে সরকার। নতুন উদ্যমে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।


গতকাল বুধবার তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর অবস্থান তুলে ধরেছেন।
এডিবি ও জাইকা ঋণচুক্তি কার্যকরের মেয়াদ এক মাস বাড়ানোর পরদিন গতকাল বুধবার দুপুরে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক সেরে অর্থমন্ত্রী গণভবনে গিয়ে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে চলমান পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশদভাবে তুলে ধরেন। পরে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর ইফতার মাহফিলেও যোগ দেন তিনি। আলাদাভাবে পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে আলাপ করার জন্যই অর্থমন্ত্রী দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছুটে যান। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান অর্থমন্ত্রী। দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কক্ষে ঢোকেন এবং প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠককালে তিনি পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরেন। আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এইচটি ইমামও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষ করে অর্থমন্ত্রী দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ে ফিরে যান।
এ প্রসঙ্গে জানতে অর্থমন্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিকেলে মন্ত্রণালয়ের অন্য একজন কর্মকর্তা মন্ত্রীর মোবাইল ফোন রিসিভ করে বলেন, 'স্যার ব্যস্ত আছেন।'
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, জাইকার প্রধান ওয়াশিংটনে গিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যে বৈঠক করেছেন সেখানে বিশ্বব্যাংক নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই জাইকা ও এডিবি ঋণচুক্তি কার্যকরের মেয়াদ এক মাস বাড়িয়েছে। সংস্থা দুটি মনে করছে, এই সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বাতিল করা চুক্তি নতুন করে স্বাক্ষরে রাজি হতে পারে। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে আজ বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিং করবেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় তিনি পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দিকেই অবস্থান নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা আর অর্থমন্ত্রীর পুনর্বিবেচনার অনুরোধ- বাহ্যিকভাবে পরস্পরবিরোধী অবস্থান বলে মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনেই অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকসহ অন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাংক ফিরে এলে সরকার দুর্নীতির অপবাদ ঘোচাতে পারবে। আর ফিরে না এলেও যাতে এ অপবাদ দূর করা যায় সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সমালোচনার কৌশল নিয়েছেন।
এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়নের উপায় নির্ধারণ করতে গত মঙ্গলবার সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক ও আমলাদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে রাজস্ব বোর্ড। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকটি আগামী সপ্তাহে হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.