দক্ষিণখানে সস্ত্রীক সেনা কর্মকর্তা খুনের মোটিভ মেলেনি- তদন্ত কর্মকর্তারা জমিজমা নিয়ে বিরোধসহ নানা ইস্যু নিয়ে এগোচ্ছেন by নিয়াজ আহমেদ লাবু

বাড়ির রাস্তা নিয়ে বিরোধ ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই কি রাজধানীর দক্ষিণখানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন (৬৩) ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মুক্তা (৫৬) খুন হয়েছেন। জমিজমা বিরোধসহ নানা দিক সামনে নিয়ে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।


ঘটনার পর আটককৃত গৃহকর্মী আয়েশা বেগমকে (৪৩) জিজ্ঞাসাবাদের পর কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে র‌্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। হত্যাকা-ের ১২ ঘণ্টা পর বুধবার ভোরে নিহত দম্পতির ছোট ছেলে সেনাবাহিনীর মেজর মোসলেমউদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের আসামি করে দক্ষিণখান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে ২৪ ঘণ্টা পার হলে জোড়া খুনের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার কিংবা হত্যাকা-ের কোন কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। পরে মেজর মোসলেমউদ্দিন বাবা-মায়ের মৃতদেহ বুঝে নেন। মোসলেমউদ্দিন জানান, বুধবার সাড়ে ৩টায় সৈয়দনগরে প্রথম ও বাদ আছর বনানীতে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে বনানী কররস্থানে দাফন করা হবে। এদিকে ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মোস্তাক আহমেদ জানিয়েছিলেন, ঘরের মধ্যে কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে, যেগুলো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লেখা। ওই কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছে, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এই দম্পতি খুন হয়ে থাকতে পারে। তবে নিহতের ভাই মোঃ ওলি উদ্দিন জানান, তার ভাইয়ের তেমন কোন শত্রু ছিল না। এমনকি জমিজমা বা সম্পত্তি নিয়েও কারও সঙ্গে কোন ঝামেলা ছিল না।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দক্ষিণখানের শহীদনগরের ১৭ নম্বর ‘মুক্তানীড়’ বাসায় খুন হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার নাসির উদ্দিন (৬৩) ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মুক্তা (৫৬)। নাসিরের মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাঁর স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সেকশন এসে ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত বঁটি, গজারি কাঠের লাঠিসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। পুলিশের ধারণা, দুর্বৃত্তরা প্রথমে নাসির উদ্দিনের স্ত্রীকে হত্যা করে। নাসির বাজার থেকে ফেরার পর তাকেও খুন করে তারা পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে উত্তরা ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ জানান, এ হত্যাকা-ের মোটিভ আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। থানা পুলিশের একাধিক দল আসামি গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও র‌্যাবের একাধিক দল ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। অচিরেই হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও হত্যাকা-ের মূল রহস্য উদঘাটন হবে। দক্ষিণখান থানার ওসি মোঃ লোকমান হেকিম জনকণ্ঠকে জানান, কী কারণে সেনা কর্মকর্তা দম্পতিকে খুন করা হয়েছে, তার কূলকিনারা পাওয়া যায়নি। তবে হত্যার মোটিভ উদ্ধারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী জানান, গৃহকর্মী আয়েশাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর র‌্যাব-১ এর একটি দল আয়েশাকে নিয়ে গেছে। ঘটনার সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধের কথাটিও চিন্তা করে তদন্ত এগোচ্ছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর কায়কোবাদ। তিনি জানান, বাসার মালামাল ওলটপালট থাকলেও কিছু খোয়া যায়নি।
জানা গেছে, নিহত দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সালাউদ্দিন উত্তরায় থাকেন। তিনি পেশায় শিক্ষক। মেজ ছেলে মোসলেউদ্দিন সেনাবাহিনীর মেজর, থাকেন সেখানে। মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে থাকেন। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত। প্রতিবেশীরা জানান, নাসির ও মুক্তা প্রায় ১৫ বছর ধরে ওই বাড়িতে বসবাস করছিলেন। নামাজের সময় ছাড়া নাসির উদ্দিন বাড়ি থেকে খুব একটা বের হতেন না। ঘটনার সময় গৃহপরিচারিকা আয়েশা বাইরে ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে আয়েশা এসে দরজায় ধাক্কা দিয়ে রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে আসে। পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.