সফরকালীন রোজা by সৈয়দ গোলাম মোরশেদ
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'গণনার কয়েকটি দিনের জন্য। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে অথবা ভ্রমণে থাকবে, তার পক্ষে পরবর্তীকালে তা পূরণ করে নিতে হবে। আর যার জন্য এটা কষ্টদায়ক হয়, সে যেন এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করে।
যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে সৎকর্ম করে, সেটা তাঁর জন্য কল্যাণকর। আর যদি রোজা রাখো, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝে থাকো।' (সুরা আল-বাকারা, আয়াত-১৪৮)।
মুফাসসিরগণ উপরিউক্ত আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছেন। যেমন, 'গণনার কয়েকটি দিনের জন্য'- এই আয়াত দ্বারা পবিত্র রমজান মাসকে বুঝিয়েছেন। অসুস্থ ও ভ্রমণরত ব্যক্তির জন্য পরবর্তীকালে রোজা পূর্ণ করে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। রুগ্ণ ব্যক্তি বলতে যারা শারীরিকভাবে রোজা রাখতে অক্ষম, তাদের বোঝানো হয়েছে; এবং ভ্রমণরত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তারা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব ও সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। কোনো কোনো শাস্ত্রবিদ তিন মঞ্জিল তথা পায়ে হেঁটে তিন দিনে যতটুকু পথ অতিক্রম করা যায়, পরবর্তী সময়ে আলেমরা তা ৪৮ মাইল নির্ধারণ করেছেন। এর পরের আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা রোজা রাখতে যারা কষ্ট বোধ করে তাদের জন্য 'ফিদ্ইয়া' হিসেবে একজন মিসকিনকে আহার দানের অনুমতি দিয়েছেন। মুফাসসিরদের মতে, এর পরবর্তী আয়াতে 'তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন রোজা পালন করে।' ফিদ্ইয়া তাদের জন্য, যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে রোজা রাখতে অক্ষম। রোজা রাখতে সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফিদ্ইয়া উল্লিখিত আয়াতে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
গণনার কয়েকটি দিন বলতে ফিকাহ শাস্ত্রবিদরা রমজান মাসকে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, গণনাকৃত সময়গুলো হচ্ছে সিয়ামকাল। এ কথার মধ্যে সিয়ামের নিগূঢ় তথ্য নিহিত রয়েছে। বস্তুমোহের তেষ্টাগুলো ইন্দ্রিয়দ্বার দিয়ে অহরহ আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করছে এবং তাগুতের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। এসব মোহকে হিসাবমতো বর্জন বা প্রত্যাখ্যান করার পদ্ধতির নাম হচ্ছে সিয়াম সাধনা। তাই নফসের ওপর ২৪ ঘণ্টার তাকওয়ার এক পাহারা বসাতে হয়। অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়, যাতে ইন্দ্রিয়পথে অসতর্ক অবস্থায় কোনো মুহূর্তে শয়তানের আজ্ঞাবহ কোনো বিষয় প্রবেশ করতে না পারে।
অসুস্থ ও ভ্রমণরত অবস্থা বলতে এখানে মানসিক অসুস্থতা এবং বস্তু প্রাপ্তির অত্যধিক মনোবাসনাকে বোঝানো হয়েছে। তাকওয়া বা আল্লাহ্র ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা অর্জন করতে না পারলে মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে। আর সেই অবস্থায় ষড়রিপুর প্রলোভন বা প্রবঞ্চনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা কিছুতেই সম্ভব নয়। সুতরাং কোন কোন বিষয়বস্তু তার জন্য ইহ এবং পরকালীন মঙ্গল বয়ে আনবে অথবা তার আত্মার ক্ষতিসাধন করবে, সেসব বিষয়ে মানুষ সম্যক অবগত থাকে না। ফলে 'ফুরকান জ্ঞান' বা ভালো-মন্দের পৃথকীকরণ জ্ঞান ব্যতীত সিয়াম সাধনা সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয় (পবিত্র কোরআনের আরেক নাম ফুরকান)।
পবিত্র আয়াতের নিগূঢ় তত্ত্বের দিকে অগ্রসর হয়ে এর অর্থ এভাবেই বুঝে নেওয়া সমীচীন হবে বলে মনে হয়- প্রবৃত্তির লোভ-লালসার জগতে মানসিক ভ্রমণরত অবস্থায় সিয়াম সাধনা তার কার্যকারিতা হারাবে। সুতরাং মনোজগতে নফসানিয়াতের ভ্রমণ বন্ধ করা সিয়াম সাধনার পূর্বশর্ত।
আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাওয়াক্কুলকে দৃঢ় করে তাকওয়া অবলম্বন করে প্রত্যেককে সিয়াম সাধনা করতে হবে। তবেই তা হবে মানুষের জন্য কল্যাণকর। 'যদি তোমরা বুঝে থাক'- এ কথাটির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এ বিষয়ে তথা কল্যাণ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
মুফাসসিরগণ উপরিউক্ত আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছেন। যেমন, 'গণনার কয়েকটি দিনের জন্য'- এই আয়াত দ্বারা পবিত্র রমজান মাসকে বুঝিয়েছেন। অসুস্থ ও ভ্রমণরত ব্যক্তির জন্য পরবর্তীকালে রোজা পূর্ণ করে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। রুগ্ণ ব্যক্তি বলতে যারা শারীরিকভাবে রোজা রাখতে অক্ষম, তাদের বোঝানো হয়েছে; এবং ভ্রমণরত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তারা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব ও সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। কোনো কোনো শাস্ত্রবিদ তিন মঞ্জিল তথা পায়ে হেঁটে তিন দিনে যতটুকু পথ অতিক্রম করা যায়, পরবর্তী সময়ে আলেমরা তা ৪৮ মাইল নির্ধারণ করেছেন। এর পরের আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা রোজা রাখতে যারা কষ্ট বোধ করে তাদের জন্য 'ফিদ্ইয়া' হিসেবে একজন মিসকিনকে আহার দানের অনুমতি দিয়েছেন। মুফাসসিরদের মতে, এর পরবর্তী আয়াতে 'তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন রোজা পালন করে।' ফিদ্ইয়া তাদের জন্য, যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে রোজা রাখতে অক্ষম। রোজা রাখতে সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফিদ্ইয়া উল্লিখিত আয়াতে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
গণনার কয়েকটি দিন বলতে ফিকাহ শাস্ত্রবিদরা রমজান মাসকে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, গণনাকৃত সময়গুলো হচ্ছে সিয়ামকাল। এ কথার মধ্যে সিয়ামের নিগূঢ় তথ্য নিহিত রয়েছে। বস্তুমোহের তেষ্টাগুলো ইন্দ্রিয়দ্বার দিয়ে অহরহ আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করছে এবং তাগুতের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। এসব মোহকে হিসাবমতো বর্জন বা প্রত্যাখ্যান করার পদ্ধতির নাম হচ্ছে সিয়াম সাধনা। তাই নফসের ওপর ২৪ ঘণ্টার তাকওয়ার এক পাহারা বসাতে হয়। অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়, যাতে ইন্দ্রিয়পথে অসতর্ক অবস্থায় কোনো মুহূর্তে শয়তানের আজ্ঞাবহ কোনো বিষয় প্রবেশ করতে না পারে।
অসুস্থ ও ভ্রমণরত অবস্থা বলতে এখানে মানসিক অসুস্থতা এবং বস্তু প্রাপ্তির অত্যধিক মনোবাসনাকে বোঝানো হয়েছে। তাকওয়া বা আল্লাহ্র ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা অর্জন করতে না পারলে মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে। আর সেই অবস্থায় ষড়রিপুর প্রলোভন বা প্রবঞ্চনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা কিছুতেই সম্ভব নয়। সুতরাং কোন কোন বিষয়বস্তু তার জন্য ইহ এবং পরকালীন মঙ্গল বয়ে আনবে অথবা তার আত্মার ক্ষতিসাধন করবে, সেসব বিষয়ে মানুষ সম্যক অবগত থাকে না। ফলে 'ফুরকান জ্ঞান' বা ভালো-মন্দের পৃথকীকরণ জ্ঞান ব্যতীত সিয়াম সাধনা সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয় (পবিত্র কোরআনের আরেক নাম ফুরকান)।
পবিত্র আয়াতের নিগূঢ় তত্ত্বের দিকে অগ্রসর হয়ে এর অর্থ এভাবেই বুঝে নেওয়া সমীচীন হবে বলে মনে হয়- প্রবৃত্তির লোভ-লালসার জগতে মানসিক ভ্রমণরত অবস্থায় সিয়াম সাধনা তার কার্যকারিতা হারাবে। সুতরাং মনোজগতে নফসানিয়াতের ভ্রমণ বন্ধ করা সিয়াম সাধনার পূর্বশর্ত।
আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাওয়াক্কুলকে দৃঢ় করে তাকওয়া অবলম্বন করে প্রত্যেককে সিয়াম সাধনা করতে হবে। তবেই তা হবে মানুষের জন্য কল্যাণকর। 'যদি তোমরা বুঝে থাক'- এ কথাটির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এ বিষয়ে তথা কল্যাণ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
No comments