পদ্মা-মেঘনার মাছ নেই চাঁদপুরে by ফারুক আহম্মদ
চাঁদপুরের বিভিন্ন মোকামে যেটুকু ইলিশের দেখা মেলে সেখানে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ নেই বললেই চলে। এখানকার মাছের সবচেয়ে বড় বাজার শহরের বড় স্টেশনে যে ইলিশ আসছে, তা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাগরের উপকূলীয় এলাকা থেকে ধরা।
উপকূল থেকে দিনের মধ্যভাগে বেশ কিছু ট্রলার চেপে চাঁদপুরের মোকামগুলোতে পৌঁছে যাচ্ছে এসব ইলিশ। ভোলার মনপুরা থেকে সবচেয়ে বড় চালান আসে। অন্যদিকে গত কয়েক দিনের বৃষ্টির ফলে এবং নদীতে উজানে ঢলের চাপ থাকায় পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের বিচরণ কিছুটা বেড়েছে। জেলেদের জালেও ধরা পড়তে শুরু করেছে। তবে এসব ইলিশ আকারে তেমন বড় নয়। এদিকে চাঁদপুরে ইলিশের আমদানি বাড়তে থাকায় আড়তদাররা বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের বাইরে মাছ রপ্তানি শুরু করেছেন। দেশের বাজারে ইলিশের সংকট চললেও ব্যবসায়ীরা জানান, জেলেদের রক্ষার জন্যই বাইরে মাছ রপ্তানি করছেন তাঁরা। গত রবিবার চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছের আড়ত ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চাঁদপুরে সাগরের যে ইলিশ মিলছে, তা এক কেজির ওপরে এখন প্রতি মণ ৪৪ হাজার, এক কেজির নিচে ৩৪-৩৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুর কান্ট্রিবোট মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম মলি্লক বলেন, বিশাল পদ্মা-মেঘনার জলরাশিতে আগের মতো মাছ মিলছে না। মাঝেমধ্যে কিছু পাওয়া গেলেও তা আকারে তেমন বড় নয়। এতে নৌকার জ্বালানি, জাল ও জেলের খরচ তুলে আনা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকায় যেটুকু ইলিশ ধরা পড়ছে, এর একটা অংশ চাঁদপুরের মোকামগুলোতে নিয়ে আসা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান এবং বিদেশে রপ্তানি করা হয়। স্থানীয় মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন গাজী জানান, অন্য বছর এই সময় যে পরিমাণ ইলিশ মোকামে নিয়ে আসা হতো, এ বছর তা অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কিছু মাছের আমদানি লক্ষ করা গেছে। তবে এসব মাছ রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানিকারক মাসুদ খান গত রবিবার জানান, চাঁদপুর থেকে চলতি মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ২০০ মণ ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। বরফ দিয়ে প্যাকিং করে ট্রাক এবং রেলের ওয়াগনে করে প্রথমে বেনাপোলে, পরে ওপারে অন্য পরিবহনে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মৎস্য বণিক সমিতির পরিচালক মো. মাঈনউদ্দিন জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যে মাছ ধরা পড়ে, তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলে জেলেদের পোষাবে না। মাছ ধরতে তাঁদের যে খরচ হয়, তাও উঠে আসবে না। এ কারণে মাছ রপ্তানি করতে হচ্ছে।
শুধু চাঁদপুর বড় স্টেশনই নয়, জেলার হাইমচরের কিছু আড়ত থেকেও ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। নদী থেকে সরাসরি ইলিশের চালান বাইরে চলে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে মাছ তেমন মিলছে না। চাঁদপুর শহরের খুচরা বাজারের মধ্যে পালবাজার ও বিপনীবাগে এখন যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে, তা সাগরের।
মেঘনার আলুর বাজার এলাকার জেলে হাবিব গাজী (৫০) জানান, গত রবিবার ভোর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলে মাত্র ছয় হালি ইলিশ ধরা পড়েছে। তাও আকারে তেমন বড় নয়। জাল, নৌকার জ্বালানি আর ৮-১০ জন জেলের জন্য এটা কিছুই না। একই কথা বললেন, হরিণাঘাটের জহির শেখ (৪৫)। দুই দিন ধরে নদীতে মাছ ধরার পর তা বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু খরচ গুনতে হয়েছে সাত হাজার টাকার মতো। ভরা মৌসুমে নদীতে মাছ না পেয়ে অনেক জেলে এখন জাল বুনে সময় পার করছেন।
ইলিশ গবেষক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরে কর্মরত ড. আনিসুর রহমান বলেন, চাঁদপুর অঞ্চলে নির্বিচারে জাটকা নিধন, নদীর নাব্যতা সংকট এবং পানিদূষণের কারণে ইলিশের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। অন্যদিকে সমুদ্র এলাকা ও সমুদ্রতীরবর্তী নদ-নদীতে ইলিশের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ইলিশ মাছের ডিম থেকে প্রায় এক লাখ রেণু পোনা উৎপন্ন হয়। আশ্বিনের পূর্ণিমায় ইলিশ মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। ফলে প্রতিবছরের ৬ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সাত হাজার বর্গকিলোমিটার নদী এলাকায় জাল দিয়ে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়েছে। এই সময়ে যদি জেলেরা নদীতে ডিমওয়ালা ইলিশ না ধরেন, তাহলে নদীতে জাটকার পরিমাণ বহুগুণে বাড়বে। বাড়বে ইলিশের আহরণও। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত জানান, এখন ইলিশের মৌসুম চলছে। এটা আরো তিন মাস অব্যাহত থাকবে। ওই সময় পর্যন্ত জেলেদের অপেক্ষায় থাকার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
এদিকে চাঁদপুর, শরীয়তপুরের পদ্মা-মেঘনা, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও বরিশালের নদীতে ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে শুরু হয় জাটকা প্রজনন মৌসুম। জাটকা বেড়ে ওঠার সময় হচ্ছে মার্চ ও এপ্রিল। এই দুই মাস নদীতে জাল দিয়ে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও এক শ্রেণীর জেলে তা মানছেন না। তাঁরা বিপুল পরিমাণ জাটকা নির্বিচারে নিধন করে চলেন। মৎস্য বিভাগ বলেছে, শুধু কারেন্ট জাল দিয়ে বছরে গড়ে ১৪ হাজার ১৫০ টন জাটকা শিকার করা হয়। এই জাটকার যদি ২০ ভাগও রক্ষা করা যেত, তাহলে এক লাখ ৭০ হাজার টন অতিরিক্ত ইলিশ উৎপাদিত হতো, যার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকার মতো। মৎস্য বিভাগের হিসাবে গত বছর ইলিশ রপ্তানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৩৩৪ কোটি টাকা। অথচ ইলিশ রক্ষায় সরকারের বরাদ্দ একেবারেই নগণ্য। মা ইলিশ রক্ষার কার্যক্রম সফল করতে পারলে বছরে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি টাকার ইলিশ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন।
চাঁদপুরে সাগরের যে ইলিশ মিলছে, তা এক কেজির ওপরে এখন প্রতি মণ ৪৪ হাজার, এক কেজির নিচে ৩৪-৩৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুর কান্ট্রিবোট মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম মলি্লক বলেন, বিশাল পদ্মা-মেঘনার জলরাশিতে আগের মতো মাছ মিলছে না। মাঝেমধ্যে কিছু পাওয়া গেলেও তা আকারে তেমন বড় নয়। এতে নৌকার জ্বালানি, জাল ও জেলের খরচ তুলে আনা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকায় যেটুকু ইলিশ ধরা পড়ছে, এর একটা অংশ চাঁদপুরের মোকামগুলোতে নিয়ে আসা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান এবং বিদেশে রপ্তানি করা হয়। স্থানীয় মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন গাজী জানান, অন্য বছর এই সময় যে পরিমাণ ইলিশ মোকামে নিয়ে আসা হতো, এ বছর তা অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কিছু মাছের আমদানি লক্ষ করা গেছে। তবে এসব মাছ রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানিকারক মাসুদ খান গত রবিবার জানান, চাঁদপুর থেকে চলতি মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ২০০ মণ ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। বরফ দিয়ে প্যাকিং করে ট্রাক এবং রেলের ওয়াগনে করে প্রথমে বেনাপোলে, পরে ওপারে অন্য পরিবহনে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মৎস্য বণিক সমিতির পরিচালক মো. মাঈনউদ্দিন জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যে মাছ ধরা পড়ে, তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলে জেলেদের পোষাবে না। মাছ ধরতে তাঁদের যে খরচ হয়, তাও উঠে আসবে না। এ কারণে মাছ রপ্তানি করতে হচ্ছে।
শুধু চাঁদপুর বড় স্টেশনই নয়, জেলার হাইমচরের কিছু আড়ত থেকেও ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। নদী থেকে সরাসরি ইলিশের চালান বাইরে চলে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে মাছ তেমন মিলছে না। চাঁদপুর শহরের খুচরা বাজারের মধ্যে পালবাজার ও বিপনীবাগে এখন যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে, তা সাগরের।
মেঘনার আলুর বাজার এলাকার জেলে হাবিব গাজী (৫০) জানান, গত রবিবার ভোর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলে মাত্র ছয় হালি ইলিশ ধরা পড়েছে। তাও আকারে তেমন বড় নয়। জাল, নৌকার জ্বালানি আর ৮-১০ জন জেলের জন্য এটা কিছুই না। একই কথা বললেন, হরিণাঘাটের জহির শেখ (৪৫)। দুই দিন ধরে নদীতে মাছ ধরার পর তা বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু খরচ গুনতে হয়েছে সাত হাজার টাকার মতো। ভরা মৌসুমে নদীতে মাছ না পেয়ে অনেক জেলে এখন জাল বুনে সময় পার করছেন।
ইলিশ গবেষক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরে কর্মরত ড. আনিসুর রহমান বলেন, চাঁদপুর অঞ্চলে নির্বিচারে জাটকা নিধন, নদীর নাব্যতা সংকট এবং পানিদূষণের কারণে ইলিশের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। অন্যদিকে সমুদ্র এলাকা ও সমুদ্রতীরবর্তী নদ-নদীতে ইলিশের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ইলিশ মাছের ডিম থেকে প্রায় এক লাখ রেণু পোনা উৎপন্ন হয়। আশ্বিনের পূর্ণিমায় ইলিশ মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। ফলে প্রতিবছরের ৬ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সাত হাজার বর্গকিলোমিটার নদী এলাকায় জাল দিয়ে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়েছে। এই সময়ে যদি জেলেরা নদীতে ডিমওয়ালা ইলিশ না ধরেন, তাহলে নদীতে জাটকার পরিমাণ বহুগুণে বাড়বে। বাড়বে ইলিশের আহরণও। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন দত্ত জানান, এখন ইলিশের মৌসুম চলছে। এটা আরো তিন মাস অব্যাহত থাকবে। ওই সময় পর্যন্ত জেলেদের অপেক্ষায় থাকার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
এদিকে চাঁদপুর, শরীয়তপুরের পদ্মা-মেঘনা, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও বরিশালের নদীতে ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে শুরু হয় জাটকা প্রজনন মৌসুম। জাটকা বেড়ে ওঠার সময় হচ্ছে মার্চ ও এপ্রিল। এই দুই মাস নদীতে জাল দিয়ে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও এক শ্রেণীর জেলে তা মানছেন না। তাঁরা বিপুল পরিমাণ জাটকা নির্বিচারে নিধন করে চলেন। মৎস্য বিভাগ বলেছে, শুধু কারেন্ট জাল দিয়ে বছরে গড়ে ১৪ হাজার ১৫০ টন জাটকা শিকার করা হয়। এই জাটকার যদি ২০ ভাগও রক্ষা করা যেত, তাহলে এক লাখ ৭০ হাজার টন অতিরিক্ত ইলিশ উৎপাদিত হতো, যার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকার মতো। মৎস্য বিভাগের হিসাবে গত বছর ইলিশ রপ্তানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৩৩৪ কোটি টাকা। অথচ ইলিশ রক্ষায় সরকারের বরাদ্দ একেবারেই নগণ্য। মা ইলিশ রক্ষার কার্যক্রম সফল করতে পারলে বছরে অতিরিক্ত ৮০০ কোটি টাকার ইলিশ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন।
No comments