'মরা পদ্মায় ইলিশ অ্যাসবে কোথ্যাকে' by রফিকুল ইসলাম
'এই পদ্মা এখন মর্যা গ্যাছে। আগের মতো আর পানি থাকে না। পানি না থ্যাকলে মরা পদ্মায় ইলিশ আসবে কোথ্যাকে।' পদ্মার ইলিশ নিয়ে এভাবেই কথা বললেন রাজশাহীর পদ্মাতীরবর্তী শ্রীরামপুর মহল্লার বাসিন্দা আবু জাফর।
তিনি জানান, এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই তাঁরা তিনজন জেলে একটি নৌকা নিয়ে পদ্মায় প্রতিদিন মাছ ধরতে যান। গত প্রায় দুই মাসে তাঁদের জালে একদিনই কেবল সর্বোচ্চ দুটি জাটকা ধরা পড়েছে। গত বছর এই সময়েও ঠিক একই অবস্থা ছিল। জেলেদের দেওয়া তথ্যমতে, শুধু এই দুই বছরেই নয়, ১৯৮৮ সালের পর এভাবেই প্রতিবছর ইলিশবিহীন মৌসুম পার করতে হচ্ছে রাজশাহীর জেলেদের। অথচ একসময় এই পদ্মায় ইলিশ মাছ শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করত কয়েক হাজার জেলে পরিবার। ক্রমে ক্রমে ইলিশ প্রায় হারিয়ে যাওয়ায় এবং অন্যান্য মাছের পরিমাণও কমে যাওয়ায় জেলেদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্দিন। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও পদ্মায় ইলিশের চরম আকাল। এবারের বর্ষা মৌসুমে এখন পর্যন্ত রাজশাহীর পদ্মা থেকে সব মিলিয়ে ১০ কেজি ইলিশও ধরা পড়েনি বলে দাবি করেছেন জেলেরা। তাঁদের ভাষায়, 'হবেই বা কী করে, এবার এখন পর্যন্ত পদ্মার চরই ডোবেনি। গত বছরও বেশির ভাগ সময় পদ্মায় পানি ছিল না। গত বর্ষা মৌসুমে বড়জোর দেড়-দুই মাস পদ্মায় পানি ছিল। এরপর পদ্মা ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছিল। মূল পদ্মায় (সরু খালের মতো) পানি থাকলেও তা ইলিশ বসবাসের উপযোগী নয়। যার কারণে এ বছরও পদ্মায় ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।'
তবে এত কিছুর মধ্যেও জেলেরা আশা করছেন, বর্ষা শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিকে কিছু ইলিশের দেখা মিলবে। ওই সময় পদ্মার পানি কমে যেতে থাকলে একেবারে মূল পদ্মার গভীরে কিছু ইলিশ মাঝে-মধ্যে ধরা পড়বে।
রাজশাহীর পদ্মাতীরের ঘোষপাড়া এলাকার জেলে রতন হালদার (৫০) জানান, এখন পদ্মার বুকে ইলিশ ধরার জন্য নৌকা-জাল নিয়ে রাত-দিন চষে বেড়ালেও মাছের রাজার দেখা পাওয়া যাবে কি না তার ভরসা নেই। তাই তাঁরা এখন আর শুধু ইলিশ ধরতে নদীতে যান না। বরং তাঁরা একটি নৌকায় তিনজন করে বাউলি, ছাকনি, সটকা ও সাজি জাল নিয়ে পদ্মায় যান পিওলি, বাঁশপাতা, চিংড়ি, গুচি, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতে। ওই মাছ ধরতে গিয়েই বর্ষা মৌসুমে মাঝে-মধ্যে তাঁদের জালে ধরা পড়ে একটি-দুটি ইলিশও।
এ বছর বর্ষা মৌসুমে জেলেদের জালে এখন পর্যন্ত মোট তিনটি ইলিশ ধরা পড়েছে জানিয়ে রতন হালদার বলেন, ওই ইলিশের ওজন বড়জোর ৪০০ গ্রাম করে হবে। বাজারে না নিয়ে ওই ইলিশ বাড়িতে নিয়ে নিজেরাই খেয়েছেন।
সানোয়ার হোসেন নামে এক জেলে বলেন, ফারাক্কা বাঁধ হওয়ার পর পদ্মায় আর ইলিশ পাওয়া যায় না। বাপ-দাদার মুখ থেকে শুনেছি, একসময় পদ্মায় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর পরই টানা প্রায় চার মাস ইলিশ পাওয়া যেত পদ্মার বুকে। ওই ইলিশ শিকার করেই সারা বছরের উপার্জন চলে আসত জেলেদের।
রাজশাহী নগরীর কেশবপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার রেজাউল করিম বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমেও তাঁদের জালে কোনো ইলিশ ধরা পড়েনি।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা হলো ১৮.৫০ মিটার। কিন্তু গত সাত বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি কখনোই বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। ফলে বন্যাও হয়নি। বন্যা হলে তবুও পদ্মায় কিছু ইলিশের দেখা মেলে। বন্যার সঙ্গে পদ্মার ইলিশও হারিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শ্রীরামপুর এলাকার জেলে খোস মোহাম্মদ জানান, বর্ষা মৌসুমে যে দুই-চারটি ইলিশ পাওয়া যায়, বেশির ভাগ সময় সেগুলো বাজারে বিক্রি করাও হয় না। বাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ তাঁর বাপ-দাদারা একসময় ইলিশ শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন। ওই সময় এই এলাকায় কয়েক শ জেলে পরিবার ছিল। এখন হাতেগোনা মাত্র ৮-১০ জন জেলে পদ্মায় মাছ ধরে সংসার চালান। রাজশাহীর নিউ মার্কেট এলাকার পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী আবদুস সবুর সালেক জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল থেকে রাজশাহীর বাজারে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে। এর আগে পদ্মার ইলিশেই রাজশাহীর বাজার চলত। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর থেকে রাজশাহীতে ইলিশ হারিয়ে যেতে থাকে। এখন আর পাইকারিভাবে পদ্মার ইলিশ বিক্রিই হয় না। এ বছর গড়ে প্রতিদিন রাজশাহীতে পাঁচ-ছয় মণ করে ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে। অথচ গত বছর এই সময়ে অন্তত ২০-২৫ মণ করে ইলিশ আসত। গত বছর এই সময়ে ইলিশের দামও কিছুটা কম ছিল।
রাজশাহী সাহেববাজার এলাকার খুচরা মাছ ব্যবসায়ী হযরত আলী (৫৫) জানান, তিনি একসময় বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে রাজশাহীর ইলিশ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত তিনি মাত্র দুটি ইলিশ বিক্রি করতে পেরেছেন। একজন জেলের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ গ্রাম ওজনের ওই দুটি ইলিশ কেনেন তিনি।
পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও পদ্মায় ইলিশের চরম আকাল। এবারের বর্ষা মৌসুমে এখন পর্যন্ত রাজশাহীর পদ্মা থেকে সব মিলিয়ে ১০ কেজি ইলিশও ধরা পড়েনি বলে দাবি করেছেন জেলেরা। তাঁদের ভাষায়, 'হবেই বা কী করে, এবার এখন পর্যন্ত পদ্মার চরই ডোবেনি। গত বছরও বেশির ভাগ সময় পদ্মায় পানি ছিল না। গত বর্ষা মৌসুমে বড়জোর দেড়-দুই মাস পদ্মায় পানি ছিল। এরপর পদ্মা ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছিল। মূল পদ্মায় (সরু খালের মতো) পানি থাকলেও তা ইলিশ বসবাসের উপযোগী নয়। যার কারণে এ বছরও পদ্মায় ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।'
তবে এত কিছুর মধ্যেও জেলেরা আশা করছেন, বর্ষা শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিকে কিছু ইলিশের দেখা মিলবে। ওই সময় পদ্মার পানি কমে যেতে থাকলে একেবারে মূল পদ্মার গভীরে কিছু ইলিশ মাঝে-মধ্যে ধরা পড়বে।
রাজশাহীর পদ্মাতীরের ঘোষপাড়া এলাকার জেলে রতন হালদার (৫০) জানান, এখন পদ্মার বুকে ইলিশ ধরার জন্য নৌকা-জাল নিয়ে রাত-দিন চষে বেড়ালেও মাছের রাজার দেখা পাওয়া যাবে কি না তার ভরসা নেই। তাই তাঁরা এখন আর শুধু ইলিশ ধরতে নদীতে যান না। বরং তাঁরা একটি নৌকায় তিনজন করে বাউলি, ছাকনি, সটকা ও সাজি জাল নিয়ে পদ্মায় যান পিওলি, বাঁশপাতা, চিংড়ি, গুচি, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতে। ওই মাছ ধরতে গিয়েই বর্ষা মৌসুমে মাঝে-মধ্যে তাঁদের জালে ধরা পড়ে একটি-দুটি ইলিশও।
এ বছর বর্ষা মৌসুমে জেলেদের জালে এখন পর্যন্ত মোট তিনটি ইলিশ ধরা পড়েছে জানিয়ে রতন হালদার বলেন, ওই ইলিশের ওজন বড়জোর ৪০০ গ্রাম করে হবে। বাজারে না নিয়ে ওই ইলিশ বাড়িতে নিয়ে নিজেরাই খেয়েছেন।
সানোয়ার হোসেন নামে এক জেলে বলেন, ফারাক্কা বাঁধ হওয়ার পর পদ্মায় আর ইলিশ পাওয়া যায় না। বাপ-দাদার মুখ থেকে শুনেছি, একসময় পদ্মায় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর পরই টানা প্রায় চার মাস ইলিশ পাওয়া যেত পদ্মার বুকে। ওই ইলিশ শিকার করেই সারা বছরের উপার্জন চলে আসত জেলেদের।
রাজশাহী নগরীর কেশবপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার রেজাউল করিম বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমেও তাঁদের জালে কোনো ইলিশ ধরা পড়েনি।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা হলো ১৮.৫০ মিটার। কিন্তু গত সাত বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি কখনোই বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। ফলে বন্যাও হয়নি। বন্যা হলে তবুও পদ্মায় কিছু ইলিশের দেখা মেলে। বন্যার সঙ্গে পদ্মার ইলিশও হারিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শ্রীরামপুর এলাকার জেলে খোস মোহাম্মদ জানান, বর্ষা মৌসুমে যে দুই-চারটি ইলিশ পাওয়া যায়, বেশির ভাগ সময় সেগুলো বাজারে বিক্রি করাও হয় না। বাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ তাঁর বাপ-দাদারা একসময় ইলিশ শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন। ওই সময় এই এলাকায় কয়েক শ জেলে পরিবার ছিল। এখন হাতেগোনা মাত্র ৮-১০ জন জেলে পদ্মায় মাছ ধরে সংসার চালান। রাজশাহীর নিউ মার্কেট এলাকার পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী আবদুস সবুর সালেক জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল থেকে রাজশাহীর বাজারে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে। এর আগে পদ্মার ইলিশেই রাজশাহীর বাজার চলত। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর থেকে রাজশাহীতে ইলিশ হারিয়ে যেতে থাকে। এখন আর পাইকারিভাবে পদ্মার ইলিশ বিক্রিই হয় না। এ বছর গড়ে প্রতিদিন রাজশাহীতে পাঁচ-ছয় মণ করে ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে। অথচ গত বছর এই সময়ে অন্তত ২০-২৫ মণ করে ইলিশ আসত। গত বছর এই সময়ে ইলিশের দামও কিছুটা কম ছিল।
রাজশাহী সাহেববাজার এলাকার খুচরা মাছ ব্যবসায়ী হযরত আলী (৫৫) জানান, তিনি একসময় বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে রাজশাহীর ইলিশ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত তিনি মাত্র দুটি ইলিশ বিক্রি করতে পেরেছেন। একজন জেলের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ গ্রাম ওজনের ওই দুটি ইলিশ কেনেন তিনি।
No comments