রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা-যত দ্রুত সমাধান হবে ততই মঙ্গল

০০৯ সালে কঙ্বাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ১২টি উপজেলার ৪৮ হাজার ৬৭৩ জন রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পর মনে করা হয়েছিল, আর বোধ হয় এমন চেষ্টা করবে না রোহিঙ্গারা। কিন্তু ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি যাঁদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে এমন নাগরিকদের তালিকাভুক্ত করার জন্য এবার যখন নির্বাচন কমিশন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলো তখনো এমন অভিযোগ পাওয়া গেল।


যেমন_কঙ্বাজার জেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে নতুন ভোটারের জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে বিরাট অংশই রোহিঙ্গা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সাধারণ হিসেবে কোনো এলাকার পুরনো ভোটারের সংখ্যার তুলনায় সর্বাধিক ১০ শতাংশ পর্যন্ত নতুন ভোটার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু কঙ্বাজারের সেই ইউনিয়নে ১৫ শতাংশ নতুন ভোটার হওয়ার ফরম পূরণ করার কারণেই এ সন্দেহ তৈরি হয় এবং তা প্রশাসনের গোচরে আসে। এ তথ্য বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। কারণ ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি যেখানে ওই অঞ্চলের আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে নাজুক করে দেওয়ার মতো হয়েছে, সেই পরিবেশে তাদের এ ধরনের অপচেষ্টা বাংলাদেশের ক্ষতিকে আরেক ধাপ বাড়িয়ে দেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমে এই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলোর যোগসাজশের কথা জানা যায়। উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যে জানা যায়, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গাদের যাওয়া এবং বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়াই শুধু নয়; কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও তা হুমকি হিসেবে গণ্য। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও ক্রমেই হুমকি হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আর্থসামাজিক পরিবেশও বিঘি্নত হচ্ছে। সেখানে তাদের সংঘবদ্ধ হয়ে মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধ করার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের নিজস্ব জনসংখ্যাই যেখানে অস্বাভাবিক বেশি, সেখানে বাড়তি এই জনসংখ্যার চাপ নেওয়া এ দেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে নানা ক্ষেত্রে। তারা গত আদমশুমারিতেও অনেকেই নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পেরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার নানা কৌশল তারা অবলম্বন করছে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে বলে জানা যায়, যা বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘস্থায়ী একটি সমস্যার জন্ম দেবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রয়োজনেই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.