নিপাহ ভাইরাস-মানুষ বাঁচুক, বাদুড়ও বাঁচুক

য়েক বছর পর দেশে ফের নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ এবং এর ফলে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে উত্তরাঞ্চলে অন্তত পাঁচ শিশুর মৃত্যু আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। আমাদের মনে আছে, সর্বশেষ ২০০৭ সালের গোড়ার চার মাসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। এবার তা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী হয়ে ফিরেছে মনে হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বরাতে এও জানা যায় যে, সতর্ক থাকলে এই ভাইরাস ঠেকানো মোটেও কঠিন নয়। সামান্য সতর্ক থাকলেই সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।


এর উৎস হচ্ছে বাদুড়ের লালা। খেজুর রস ফুটিয়ে পান করলে এবং ফল সাবান দিয়ে ধুয়ে খেলেই ভয় থাকে না। তারপরও পাঁচ শিশুর মৃত্যু আমাদের চরম অসতর্কতাই নির্দেশ করে। হাসপাতালে ভর্তির পর তাদের চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবায় অবহেলা হয়েছিল কি-না, খতিয়ে দেখতে বলব আমরা। আমরা আশা করব, ভাইরাসটি যাতে আর কারও প্রাণ ছিনিয়ে নিতে না পারে, বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চল থেকে অন্যখানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা আমরা কমবেশি জানি। ইতিমধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থাই প্রত্যাশিত। আইসিডিডিআরবিসহ যে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে ও গবেষণাগারে এই ভাইরাস নিয়ে কাজ করছে, সরকারের উচিত হবে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করা। আমরা জোর দিতে চাই সচেতনতামূলক কর্মসূচির ওপর। এ ক্ষেত্রে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে কাজ করে না, এমন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন সংগঠনও এগিয়ে আসতে পারে। এগিয়ে আসতে হবে সংবাদমাধ্যমকেও। আবার নিপাহ ভাইরাসবিরোধী প্রচারণা যেন বাদুড় নিধনে উৎসাহ না জোগায়, সেদিকে কড়া নজরদারি জরুরি। ওই পাখির প্রতিবেশগত গুরুত্ব কোনোভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। গাছপালা কমে যাওয়াও বাদুড়ের লোকালয়ে যাতায়াত বাড়ার একটি কারণ। এখন সড়ক ও অন্যান্য পতিত স্থানে সামাজিক বনায়ন হচ্ছে। এর বেশিরভাগই কেবল কাঠ হিসেবে প্রয়োজনীয়। এমন বৃক্ষ রোপণ উৎসাহিত করা প্রয়োজন, যেগুলোর ফল মূলত পশুপাখির ভোজে লাগে। বস্তুত সর্বাত্মক সতর্কতাই নিপাহ ভাইরাসের সর্বোত্তম জবাব। সবাই আন্তরিক হলে বাঁচবে মানুষ, বাঁচবে বাদুড়ও।

No comments

Powered by Blogger.