বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
২৯৩ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। মহসীন আলী সরদার, বীর প্রতীক মুক্তির অদম্য এক সৈনিক কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ চালালেন সীমান্ত বিওপিতে (বর্ডার আউট পোস্ট বা সীমান্ত চৌকি)। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্বে মহসীন আলী সরদার। আকস্মিক আক্রমণে হকচকিত পাকিস্তানি সেনারা।
মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে করতে বিওপি লক্ষ্য করে এগোতে থাকলেন। তখন পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। তুমুল লড়াই চলতে থাকল। হঠাৎ পাকিস্তানিদের আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে গেল। এমন সময় গুলিতে শহীদ হলেন তাঁর এক সহযোদ্ধা (সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া, বীর বিক্রম)। আহত হলেন কয়েকজন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নিলেন পশ্চাদপসরণের। কিন্তু তিনি দমে গেলেন না। আরও কিছুক্ষণ সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করলেন। এ ঘটনা বনতারায়। ১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট।
বনতারা বিওপি দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত। দিনাজপুর-ফুলবাড়ী সড়কের মোহনপুর সেতুর পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে। বনতারা বিওপির অদূরেই ভারতের সমজিয়া বিওপি। বনতারায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল। তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল বেশ সুরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধকালে এই এলাকা ছিল মুক্তিবাহিনীর ৭ নম্বর সেক্টরের আঙ্গিনাবাদ সাবসেক্টরভুক্ত। পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে ১২ আগস্ট রাতে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে অতর্কিতে আক্রমণ চালান। পাঁচ দলে বিভক্ত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন মোট ৫০ জন। চার দলে ১১ জন করে এবং বিস্ফোরক দলে ছয়জন। ১১ জনের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মহসীন আলী সরদার। অপর একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নায়েব সুবেদার সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া।
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে হকচকিত পাকিস্তানিরা প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে কিছুক্ষণ পর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। ক্রমেই পাকিস্তানি আক্রমণের তীব্রতা বাড়তে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। এমন সময় সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া পাকিস্তানিদের গুলিতে শহীদ হন। আহত হন কয়েকজন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে চেষ্টা করেন শহীদ সহযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধারে। সে দিন যুদ্ধে পাকিস্তানিদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
মহসীন আলী সরদার ১৯৭১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসসির ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই যুদ্ধে। সে সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তিনি ভারতে গিয়ে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে সংযুক্ত হন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণে যান। প্রশিক্ষণ শেষে আঙ্গিনাবাদ সাবসেক্টরে যোগ দেন। এখানে তিনি ক্যাম্প অ্যাডজুটেন্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মহসীন আলী সরদারকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৬৫।
মহসীন আলী সরদারের পৈতৃক বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মন্থথপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে। বর্তমানে বাস করেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাঁদ হাউজিংয়ে (সড়ক ৩/৩)। স্বাধীনতার পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে অবসরজীবন যাপন করছেন। তাঁর বাবার নাম মো. আমিরউদ্দিন সরদার। মা মফিজন নেছা। স্ত্রী খাদিজা খানম। তাঁদের চার ছেলে, এক মেয়ে।
মহসীন আলী সরদার বললেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম শোষণহীন সুন্দর সমাজব্যবস্থার জন্য। সবার প্রচেষ্টায় একদিন বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী দেশ হবে।’
সূত্র: মহসীন আলী সরদার, বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৭।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
বনতারা বিওপি দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত। দিনাজপুর-ফুলবাড়ী সড়কের মোহনপুর সেতুর পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে। বনতারা বিওপির অদূরেই ভারতের সমজিয়া বিওপি। বনতারায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল। তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল বেশ সুরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধকালে এই এলাকা ছিল মুক্তিবাহিনীর ৭ নম্বর সেক্টরের আঙ্গিনাবাদ সাবসেক্টরভুক্ত। পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে ১২ আগস্ট রাতে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে অতর্কিতে আক্রমণ চালান। পাঁচ দলে বিভক্ত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন মোট ৫০ জন। চার দলে ১১ জন করে এবং বিস্ফোরক দলে ছয়জন। ১১ জনের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মহসীন আলী সরদার। অপর একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নায়েব সুবেদার সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া।
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে হকচকিত পাকিস্তানিরা প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে কিছুক্ষণ পর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। ক্রমেই পাকিস্তানি আক্রমণের তীব্রতা বাড়তে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। এমন সময় সহিদ উল্লাহ ভূঁইয়া পাকিস্তানিদের গুলিতে শহীদ হন। আহত হন কয়েকজন। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে চেষ্টা করেন শহীদ সহযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধারে। সে দিন যুদ্ধে পাকিস্তানিদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
মহসীন আলী সরদার ১৯৭১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসসির ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই যুদ্ধে। সে সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তিনি ভারতে গিয়ে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে সংযুক্ত হন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশ নেন। পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণে যান। প্রশিক্ষণ শেষে আঙ্গিনাবাদ সাবসেক্টরে যোগ দেন। এখানে তিনি ক্যাম্প অ্যাডজুটেন্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মহসীন আলী সরদারকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৬৫।
মহসীন আলী সরদারের পৈতৃক বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মন্থথপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামে। বর্তমানে বাস করেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাঁদ হাউজিংয়ে (সড়ক ৩/৩)। স্বাধীনতার পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে অবসরজীবন যাপন করছেন। তাঁর বাবার নাম মো. আমিরউদ্দিন সরদার। মা মফিজন নেছা। স্ত্রী খাদিজা খানম। তাঁদের চার ছেলে, এক মেয়ে।
মহসীন আলী সরদার বললেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম শোষণহীন সুন্দর সমাজব্যবস্থার জন্য। সবার প্রচেষ্টায় একদিন বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী দেশ হবে।’
সূত্র: মহসীন আলী সরদার, বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৭।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments