ঈদ উদযাপন-উৎসব শেষে জীবন-ছন্দে
পবিত্র ঈদ উৎসব শেষ হয়েছে। বরাবরের মতোই সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া এবং সম্প্রীতির বন্ধনে পরস্পরকে বেঁধে ফেলার জন্য আয়োজনের কমতি ছিল না। নতুন পোশাক, রকমারি খাবার, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ঘুরে বেড়ানো, টানা ছুটি সর্বোপরি শিকড়ের টানে গ্রামীণ জনপদে ছুটে যাওয়া_ আনন্দের ভাণ্ডারে সাজানো ছিল সবকিছুই।
সড়কপথের বেহাল দশার কারণে শঙ্কা ছিল, অনেক মানুষ হয়তো ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামে নিকটজনের সানি্নধ্যে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। কিন্তু সে বাধাও শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে ওঠা বহুলাংশে সম্ভব হয়েছে। কোথাও কোথাও মহাসড়ক এবং পার্শ্ববর্তী লিংক রোডগুলো যাত্রীদের অশেষ দুর্ভোগের কারণ হয়েছে বটে, কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে নানা পেশা ও শ্রেণীর নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে কয়েকটি দিনের জন্য জেগে উঠতে পেরেছিল গ্রামবাংলা। দুই ভুবনের বাসিন্দাদের এ মিলনমেলায় সুঃখ-দুঃখের জমানো কথা প্রকাশ পেয়েছে, এলাকার উন্নতির ছক কষা হয়েছে। রাজনীতি-অর্থনীতির গুরুগম্ভীর এজেন্ডাও বাদ যায়নি। মত-পথের ভিন্নতার মাঝেও নিশ্চিতভাবেই প্রশ্ন ছিল দেশ কোন পথে? জিনিসপত্রের দাম কি আদৌ কমবে? বিদ্যুতের যখন-তখন আসা-যাওয়া কি বন্ধ হবে? বিরোধীদের আন্দোলন কি সত্যিই দানা বাঁধবে? বিরোধীরা বলছে যে, ঈদের পর তারা সরকার পতনের জোরদার আন্দোলন শুরু করবে। তারা কি হরতাল-অবরোধ ডেকে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে থাকবে? সংঘাতের রাজনীতির ধারায় কি ফিরে যাবে প্রিয় স্বদেশ? সরকার কি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে? অনেক সুখস্মৃতির পাশাপাশি উদ্বেগ-শঙ্কা নিয়েই ফের যাত্রা শুরু হবে কর্মব্যস্ত ছকবাঁধা রুটিন_ অফিস কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটে চলা, ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকার পথে পথে যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগ, কাঁচাবাজারে গিয়ে সবজি-তরকারির চড়া দাম শুনে চোখ কপালে ওঠা। গ্রামের দিনগুলোর কথা তখন আরও বেশি করে মনে পড়তে থাকবে, আর এর টানেই তারা ফিরে যেতে চাইবে ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড়ে। কিন্তু সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও পূর্ণ দুটি মাস ও কয়েকটি দিন_ কোরবানির ঈদের জন্য। ততদিনে দেশের অবস্থা আরও ভালো হবে, সড়কপথের যথাযথ সংস্কারের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে_ এটা থাকবে প্রত্যাশা। সে জন্য সরকারকে আরও কোমর বেঁধে লাগতে হবে, কথা নয় বরং কাজের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগ ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকেও জনজীবনে অযথা দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। ঈদ উৎসব আনন্দময় করে তোলার জন্য যারা নিজেদের আনন্দ জলাঞ্জলি দিয়েছেন, পরিবারের সদস্য ও প্রিয়জনদের সানি্নধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, এমনকি কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়েছেন, তাদের প্রতি আসুন না সবাই মিলে একটু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। সড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস প্রভৃতি সেবা খাতসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এমনকি ঈদের দিনেও কাজ করতে হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে এমন অনেক কর্মী থাকে বলেই শত সমস্যা সত্ত্বেও আমরা প্রেরণা পাই এগিয়ে যাওয়ার, স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধ স্বদেশভূমি রচনার।
No comments