পবিত্র কোরআনের আলো-দরিদ্র ও ধর্মপ্রাণ সৎ লোকদের অবজ্ঞা না করার নির্দেশ
৫২. ওয়ালা তাত্বরুদিল্লাযীনা ইয়াদঊ'না রাব্বাহুম বিলগাদা-তি ওয়ালআ'শিয়্যি ইউরীদূনা ওয়াজ্হাহূ; মা আ'লাইকা মিন হিছা-বিহিম্ মিন শাইয়িন ফাতাত্বরুদাহুম ফাতাকূনা মিনায্ যা-লিমীন। ৫৩. ওয়া কাযা-লিকা ফাতান্না বা'দ্বুহুম বিবা'দ্বিন লিইয়াকূলূ আহা-উলা-য়ি মান্নাল্লাহু আ'লাইহিম্ মিম বাইনিনা আলাইছাল্লাহু বিআ'লামা বিশ্শা-কিরীন।
৫৪. ওয়া ইযা জা-আকাল্লাযীনা ইউ'মিনূনা বিআয়া-তিনা ফাক্বুল ছালা-মুন আ'লাইকুম কাতাবা রাব্বুকুম আ'লা নাফছিহির রাহমাতা আন্নাহূ মান আ'মিলা মিনকুম ছূআম্ বিজাহা-লাতিন ছুম্মা তা-বা মিম্ বা'দিহি ওয়া আসলাহা ফাইন্নাহূ গাফূরুর রাহীম।
৫৫. ওয়া কাযা-লিকা নুফাস্সিলুল আয়া-তি ওয়া লিতাছতাবীনা ছাবীলুল মুজরিমীন।
[সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৫২-৫৫]
অনুবাদ : ৫২. এসব লোককে আপনি আপনার মজলিস থেকে বের করে দেবেন না, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রভুর ইবাদত করে এবং তাঁরই সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের কাজকর্মের জবাবদিহিতার কোনো দায়িত্বই আপনার ওপরে নেই। আবার আপনার কাজকর্মের হিসাব-নিকাশের কোনো দায়িত্বও তাদের ওপরে নেই। এর পরও যদি আপনার কাছ থেকে তাদের আপনি দূরে সরিয়ে দেন তাহলে তো আপনিও অত্যাচারীদের দলভুক্ত হয়ে যাবেন।
৫৩. আর এভাবেই আমি তাদের একদল দিয়ে অন্য দলের পরীক্ষা নিচ্ছি, যেন তারা এ কথা বলতে পারে যে এরাই কি আমাদের মধ্যকার সেই সব লোক, যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন? আল্লাহ তায়ালা তো কৃতজ্ঞ বান্দাদের খুব ভালো করেই জানেন।
৫৪. যখন এসব ইমানদার লোক আপনার কাছে আসে তখন আপনি তাদের বলে দিন, 'তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করাটা তোমাদের প্রভু নিজের কর্তব্য বলে স্থির করে নিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কখনো অজ্ঞতাবশত কোনো অন্যায় কাজ করে বসে এবং পরক্ষণেই তওবা করে ও নিজেকে শুধরে নেয় তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, তিনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৫৫. আর এভাবেই আমি আমার আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে অপরাধীদের পথ পরিহার করে চলার জন্য পরিষ্কার হয়ে যায়।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর শানে নুজুল এ রকম : একবার মক্কার কাফের কোরাইশ নেতারা রাসুলের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসার প্রস্তাব পেশ করে তাতে শর্ত আরোপ করে যে এ বৈঠকে যেন দরিদ্র ও নিম্নশ্রেণীর মুসলমানরা উপস্থিত না থাকে। উল্লেখ্য, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কায় যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন, তাঁদের অনেকেই ছিলেন ক্রীতদাস ও আফ্রিকান নিগ্রো। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন রাসুলের (সা.) অত্যন্ত প্রিয় সাহাবি ও আত্মনিবেদিত মুসলমান ছিলেন। যেমন তাঁদের মধ্যে হজরত বেলাল, খাব্বাব, আম্মার ও সালাম (রা.)-এর নাম উল্লেখ করা যায়। কাফের কোরাইশ নেতাদের দৃষ্টিতে তাঁরা ছিলেন নীচ ও ইতর শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এবং রাসুলের কাছে তাঁরা ছিলেন সম্মানিত মানুষ। দরিদ্র শ্রেণীর এসব সম্মানিত সাহাবি প্রায় সব সময়ই রাসুলের দরবারে উপস্থিত থাকতেন। কাফের কোরাইশ নেতারা নিজেদের দাম্ভিকতার কারণে এসব সম্মানিত সাহাবির সঙ্গে এক বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.) কী সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা ছিল তাঁর কাছে একটা কঠিন বিষয়। তখন এই আয়াতগুলো নাজিল হয়। এখানে দরিদ্র এসব সাহাবির উচ্চ মর্যাদা স্বীকার করা হয়েছে এবং কাফের কোরাইশ নেতাদের কথায় কর্ণপাত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে এটা পরিষ্কার করা হয়েছে যে কাফের কোরাইশ নেতাদের তথাকথিত উচ্চ মর্যাদার কোনো মূল্যই নেই আল্লাহর কাছে। বরং দরিদ্র এসব মুমেন লোক আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। কাফের কোরাইশদের চেয়ে এসব দরিদ্র মুমেন লোক প্রকৃত অর্থেই অধিক মর্যাদাবান মানুষ। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে এ কথাও পরিষ্কার হয়েছে যে এসব দরিদ্র মুসলমানই প্রকৃত অর্থে সৌভাগ্যবান। আর দাম্ভিক কোরাইশ নেতারা দুর্ভাগা। সত্যকে গ্রহণ করার সৌভাগ্য তাদের হয়নি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৫৫. ওয়া কাযা-লিকা নুফাস্সিলুল আয়া-তি ওয়া লিতাছতাবীনা ছাবীলুল মুজরিমীন।
[সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৫২-৫৫]
অনুবাদ : ৫২. এসব লোককে আপনি আপনার মজলিস থেকে বের করে দেবেন না, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রভুর ইবাদত করে এবং তাঁরই সন্তুষ্টি কামনা করে। তাদের কাজকর্মের জবাবদিহিতার কোনো দায়িত্বই আপনার ওপরে নেই। আবার আপনার কাজকর্মের হিসাব-নিকাশের কোনো দায়িত্বও তাদের ওপরে নেই। এর পরও যদি আপনার কাছ থেকে তাদের আপনি দূরে সরিয়ে দেন তাহলে তো আপনিও অত্যাচারীদের দলভুক্ত হয়ে যাবেন।
৫৩. আর এভাবেই আমি তাদের একদল দিয়ে অন্য দলের পরীক্ষা নিচ্ছি, যেন তারা এ কথা বলতে পারে যে এরাই কি আমাদের মধ্যকার সেই সব লোক, যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন? আল্লাহ তায়ালা তো কৃতজ্ঞ বান্দাদের খুব ভালো করেই জানেন।
৫৪. যখন এসব ইমানদার লোক আপনার কাছে আসে তখন আপনি তাদের বলে দিন, 'তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করাটা তোমাদের প্রভু নিজের কর্তব্য বলে স্থির করে নিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কখনো অজ্ঞতাবশত কোনো অন্যায় কাজ করে বসে এবং পরক্ষণেই তওবা করে ও নিজেকে শুধরে নেয় তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, তিনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৫৫. আর এভাবেই আমি আমার আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে অপরাধীদের পথ পরিহার করে চলার জন্য পরিষ্কার হয়ে যায়।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর শানে নুজুল এ রকম : একবার মক্কার কাফের কোরাইশ নেতারা রাসুলের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসার প্রস্তাব পেশ করে তাতে শর্ত আরোপ করে যে এ বৈঠকে যেন দরিদ্র ও নিম্নশ্রেণীর মুসলমানরা উপস্থিত না থাকে। উল্লেখ্য, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কায় যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন, তাঁদের অনেকেই ছিলেন ক্রীতদাস ও আফ্রিকান নিগ্রো। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন রাসুলের (সা.) অত্যন্ত প্রিয় সাহাবি ও আত্মনিবেদিত মুসলমান ছিলেন। যেমন তাঁদের মধ্যে হজরত বেলাল, খাব্বাব, আম্মার ও সালাম (রা.)-এর নাম উল্লেখ করা যায়। কাফের কোরাইশ নেতাদের দৃষ্টিতে তাঁরা ছিলেন নীচ ও ইতর শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এবং রাসুলের কাছে তাঁরা ছিলেন সম্মানিত মানুষ। দরিদ্র শ্রেণীর এসব সম্মানিত সাহাবি প্রায় সব সময়ই রাসুলের দরবারে উপস্থিত থাকতেন। কাফের কোরাইশ নেতারা নিজেদের দাম্ভিকতার কারণে এসব সম্মানিত সাহাবির সঙ্গে এক বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.) কী সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা ছিল তাঁর কাছে একটা কঠিন বিষয়। তখন এই আয়াতগুলো নাজিল হয়। এখানে দরিদ্র এসব সাহাবির উচ্চ মর্যাদা স্বীকার করা হয়েছে এবং কাফের কোরাইশ নেতাদের কথায় কর্ণপাত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে এটা পরিষ্কার করা হয়েছে যে কাফের কোরাইশ নেতাদের তথাকথিত উচ্চ মর্যাদার কোনো মূল্যই নেই আল্লাহর কাছে। বরং দরিদ্র এসব মুমেন লোক আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। কাফের কোরাইশদের চেয়ে এসব দরিদ্র মুমেন লোক প্রকৃত অর্থেই অধিক মর্যাদাবান মানুষ। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে এ কথাও পরিষ্কার হয়েছে যে এসব দরিদ্র মুসলমানই প্রকৃত অর্থে সৌভাগ্যবান। আর দাম্ভিক কোরাইশ নেতারা দুর্ভাগা। সত্যকে গ্রহণ করার সৌভাগ্য তাদের হয়নি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments