ছিটমহলে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া-সবাই কবে উল্লসিত হবে
১৯৪৭-এর দেশ বিভাজনের পর থেকে ১৬২টি ছিটমহলের অধিবাসীদের অনিশ্চিত অবস্থায় কাটাতে হচ্ছে। তাদের নাগরিক পরিচিতি এবং নাগরিক সুবিধা নিয়ে দোলাচলে থাকতে হচ্ছে সেই থেকে। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির সুবাদে বেরুবাড়ীর বিনিময়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশভুক্ত হওয়ার পরও সেই ভূখণ্ডের মানুষ বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে প্রবেশ করতে পারছিল না।
দহগ্রামের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল তিনবিঘা করিডর। এই করিডর দিয়ে প্রথম অবস্থায় দৈনিক এক ঘণ্টা এবং পরবর্তীকালে ১২ ঘণ্টা করে স্বাধীনভাবে চলাচলের সুবিধা পেয়েছে দহগ্রামের মানুষ। এবার থেকে সেই প্রতিবন্ধকতা উঠে যাওয়ায় দহগ্রামের মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টাই পথ খোলা থাকবে। অর্থাৎ এই তিনবিঘা করিডর দিয়ে দহগ্রামের মানুষের আসা-যাওয়ার যে বাধা ছিল, তা অপসারণ হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের ফলে বড় অর্জন হিসেবে এই সুবিধাকে উল্লেখ করতে হবে। স্বাভাবিক কারণেই এই এলাকার মানুষ উল্লাস প্রকাশ করছে। তাদের উল্লাসে বেরিয়ে আসছে স্বাধীনতার কথা। তারা মনে করছে, তারা প্রকৃত অর্থে এখন থেকে স্বাধীন হয়েছে। দহগ্রামের মতো বাকি ১৬১টি ছিটমহলের অবস্থা নয়। তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে এত দিন অপেক্ষা করছিল, সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। শুধু তা-ই নয়, কবে যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, তারও কোনো ইঙ্গিত নেই তাদের সামনে। সংগত কারণেই তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাদের এই ক্ষোভ এবং হতাশার মধ্যে অবশ্যই যুক্তি আছে। কারণ ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বন্ধুরাষ্ট্রের কাছ থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে বর্তমান সরকারকেও তারা মনে করে, প্রগতিশীল এবং ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক উন্নয়ন প্রত্যাশী। সংগত কারণেই দুটি দেশের সব সমস্যা সমাধানে তারা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু বন্ধুপ্রতিম দেশ দুটি এবারও যখন তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হলো, তখন ৫৫ হাজার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আর সেই হতাশা প্রকাশ করতে তারা গণ-অনশন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকেও যৌক্তিক বলেই মনে করা যায়। আমরা মনে করি, অর্ধলক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান করতে অন্তত মানবিক কারণে হলেও ছিটমহল সমস্যা সমাধান করে দিতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে সমস্যাটির সমাধান হয়নি বলে কখনো হবে না_এমন নয়। এ সফরের মাধ্যমে অর্জিত ইতিবাচক ফলের দ্রুত বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা দরকার। আর এই কাজে বাংলাদেশকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
No comments