ইসির জন্য সার্চ কমিটি-ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে হবে

তুন নির্বাচন কমিশনের জন্য সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে চার সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদের বিপরীতে দুজনের নাম সুপারিশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতে হবে।


নতুন নির্বাচন কমিশন এখন একেবারেই অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা রকম রাজনৈতিক সমীকরণ আছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব মত রয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগের এই বহুমুখী সমীকরণ মিলানোর জন্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ব্যাপারে ২২ দিন সংলাপ করেছেন। সেই সংলাপে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং জাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। সংলাপের ফলই হচ্ছে এই সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগ। আইনমন্ত্রী এই সার্চ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের পক্ষে যা বলেছেন, তাতে সরকারের মতই প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, 'সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, রাষ্ট্রপতি সেই ক্ষমতাকে আরো স্বচ্ছতর করার জন্য এই অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন।' এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। '১৯৭২ সাল থেকে এই সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করে আসছেন। কখনো কোনো সংলাপ বা সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের নিয়োগ অতীতে হয়নি। রাষ্ট্রপতির এই কাজ এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছতা দেবে।'
সার্চ কমিটির পক্ষে রাষ্ট্রপতির প্রস্তাব এর আগে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন, তেমনি দেশের বিশিষ্টজনদেরও নিজস্ব মত রয়েছে। বিশেষ করে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা এ উদ্যোগকে কেমন করে দেখছেন, তা অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করলে ভালো হতো। তবে এই প্রজ্ঞাপন সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন হিসেবে গণ্য হবে। কেননা, আইন অর্থ কোনো আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, বিজ্ঞপ্তি, অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশের আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন যেকোনো প্রথা এবং রীতিকে বোঝাবে। সে ক্ষেত্রে এ নিয়ে জটিলতা হওয়ার কোনো কারণ নেই। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া আর সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে করবেন। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতে হবে। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ রাষ্ট্রপতির একক এখতিয়ারে ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে সংবিধানে ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এরপর থেকে সব নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই রাষ্ট্রপতিকে করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ একটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই অনুচ্ছেদের এই ক্ষমতার কারণে প্রধানমন্ত্রী সার্চ কমিটির প্রস্তাব নাকচও করে দিতে পারেন; এবং প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে কী প্রস্তাব দেবেন, তা নিয়েও কোনো আদালত কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন না। সংবিধান এই সুরক্ষা তাঁদের দিয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী যদি সার্চ কমিটির প্রস্তাব নাকচ করেন, তাহলে এ নিয়ে জটিলতা এবং রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হবে। ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নাকচের এখতিয়ার রয়েছে।
ধরেই নেওয়া হচ্ছে, আগে থেকেই প্রত্যাখ্যানের কারণে বিরোধী দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে নাকচ করা হবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। প্রধান বিরোধী দল প্রত্যাখ্যান করলেও রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে। সেই সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি উদ্যোগটিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.