সদরে অন্দরে-ভুল চিকিৎসায় আর কত মারা যাবে মানুষ by মোস্তফা হোসেইন
ভারতীয় চিকিৎসক দেবী শেঠির বিষয় দিয়েই শুরু করা যাক। বাংলাদেশের এক শিশুর মা-বাবা অতিকষ্টে এক শিশুকে নিয়ে গিয়েছেন বেঙ্গালুরুতে তাঁর কাছে। সাড়ে তিন বছরের শিশুটি হৃদরোগে আক্রান্ত। সংগত কারণেই মা-বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। মা তো একেবারে মানসিক রোগী যেন। চিকিৎসা শুরুর আগেই নাকি চিকিৎসা হতে শুরু করেছে সেই দম্পতি ও রোগীর। ফলটাও অতিদ্রুত এল।
মায়ের মানসিক অবস্থা ফুরফুরে প্রায়। কারণ ডাক্তারের ব্যক্তিগত আচরণ। শিশুটি হাসতে শুরু করে, কারণ চিকিৎসক তাকে অল্প সময়ের মধ্যেই এতটা আপন করে নিয়েছেন যে সে বুঝতেই পারছে না তার সামনে কত বড় একটি অপারেশন অপেক্ষা করছে। অতঃপর অত্যন্ত যত্ন নিয়ে চিকিৎসা শেষে সুস্থ সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেছেন কুমিল্লা রেসকোর্সের আনজু-শিখা দম্পতি। এখন শিশুটি নিয়মিত স্কুলে যায়। মা-বাবা চিরকৃতজ্ঞ সেই চিকিৎসকের কাছে। তাঁদেরই কথা_এর আগে বাংলাদেশে অন্তত ১০ জন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন তাঁরা। এদিক-সেদিক কত যে পথ দেখিয়েছেন তার ঠিক নেই। ব্যক্তিগত আচরণ তুলনা করলে দেবী শেঠির ধারেকাছেও ছিল না কারো। ব্যক্তিগত আচরণই যদি চিকিৎসার প্রতিকূলে থাকত, তাহলেও বোধ হয় এতটা বিপজ্জনক হতো না বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসকের অবহেলা এতই মারাত্মক আকার ধারণ করে কখনো কখনো, যা রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করে দেয়। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হয় না। চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর পরও মনে হয় এ যেন স্বাভাবিক পরিণতি। যদি কোথাও চিকিৎসকের ভুলের কারণে, ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালের অবহেলার কারণে কারো মৃত্যু হয়, তাহলেও কোনো বিচার হয় না। অন্তত আজ পর্যন্ত এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি যে কারো শাস্তি হয়েছে।
হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকগুলোর ব্যাপারে দেখা যায়, কখনো যদি কোথাও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, তাহলে দেখা যাবে সেই পর্যন্ত শেষ। কখনো তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তা আলোর মুখ দেখে না। আবার কোথাও হয়তো দেখা যাবে যে আদৌ সেই প্রতিবেদনই তৈরি হয় না। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেখানে চিকিৎসকই হন সদস্য, যিনি স্বগোত্রীয়ের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেন না।
এই যেমন ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতাল নিয়ে এত লেখালেখি হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক মৃদুল বাবুর মৃত্যু ও তাদের অবহেলার কারণে তাদের কি কোনো শাস্তি হয়েছে? এমন কোনো সংবাদ কোথাও চোখে পড়েনি। এই হাসপাতাল সম্পর্কে আগেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সাবেক ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যুবরণ করলেন এখানে। তাঁর মৃত্যুও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সাংবাদিক ও ক্রীড়া ভাষ্যকার তওফিক আজীজ খানের চিকিৎসা বিষয়েও তাঁর পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে। অনেক দিন আগের ঘটনা হলেও আজ অবধি এ বিষয় তওফিক আজীজ খানের সন্তানদের ব্যথিত করে, ক্ষুব্ধ করে। তাদের কথা_হাসপাতালের ভুলের কারণে তাদের বাবার সুষ্ঠু চিকিৎসা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, তওফিক আজীজ খানের স্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগমও মৃত্যুবরণ করেন চিকিৎসালয়ের অবহেলার কারণে। ঢাকার বিখ্যাত একটি চিকিৎসালয়ে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর। সেখানে তাঁকে ইসিজি করতে নেওয়া হলে দেখা গেল পেপার নেই। পেপার আনা হলো স্টোর থেকে। তারপর ইসিজি করা শুরু করা হবে। এমন সময় দেখা গেল মেশিনের কর্ড অকেজো। রোগীর অবস্থার অবনতি হতে দেখে ডাকা হলো চিকিৎসক। কিন্তু দক্ষ কোনো চিকিৎসককে পাওয়া গেল না সেখানে। ইতিমধ্যে রোগীর অবস্থা খুবই খারাপের দিকে মোড় নেয়। ওখান থেকে বের করে আনার কিছু সময় পরই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন প্রায় বিনা চিকিৎসায়। কোনো দক্ষ চিকিৎসকই তাঁকে চিকিৎসাসেবা দেননি সর্বাধিক সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত এই চিকিৎসালয়টিতে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত আমার মাকে রীতিমতো টানাহেঁচড়া করেছে গ্রিনরোডের একটি বড় ক্লিনিক। কোলোনস্কপি করার জন্য তিনবার স্যাম্পল কালেকশন করেছে তারা। দুবারই ভুল করেছে স্যাম্পল নিতে। প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ আমার মায়ের শরীর থেকে মাংস কেটে (স্যাম্পল) আনতে গিয়ে তাঁকে যে কষ্ট দেওয়া হয়েছিল, সেই কষ্টের কথা কি আমাদের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব? আমার মাকে হারিয়ে আমরা যে ব্যথা পেয়েছি, তা বাড়িয়ে দিয়েছে চিকিৎসকের সেই ভুল। আমার মাকে কোনো দিনও ফিরে পাব না। কিন্তু সেই চিকিৎসককে কি কখনো শ্রদ্ধা জানাতে পারব?
অথচ এই হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকগুলোর কাছেই আমাদের যেতে হয় বারবার। যেন আমরা জিম্মি হয়ে আছি। সরকারি হাসপাতালগুলোর কথা না বলাই ভালো। সেখানে কোনো ভুলভ্রান্তি হলে কিংবা অবহেলার কারণে কোনো রোগী মারা গেলে তার নিকটজন যদি প্রতিবাদ করে, তাহলে প্রতিবাদের পরিণতি যে কী ভয়াবহ হয়, তা দেখা যায় প্রায়ই পত্রিকার পাতায়। সেসব স্থানে প্রায়ই মারমুখী হয়ে থাকে তাদের স্টাফরা। কখনো বা লাশের কাছেই পড়ে থাকতে হয় আহত কোনো স্বজনকে। এমনটা হয় মূলত সেসব স্থানের কর্মচারীদের ইউনিয়নের দাপটে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ইউনিয়নের দাপটের ব্যাপারে প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হতে দেখা যায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা রোগীদের হয়রানি করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
চিকিৎসাকে শুধুই টাকা বানানোর হাতিয়ার হিসেবে যারা ব্যবহার করে, তাদের কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে? ঢাকার বাইরেও যে কত অবহেলা করা হয়, আর টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়! তেমনি একটি উদাহরণ পাবনার চাটমোহর এলাকার এক গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা। ঈশ্বরদী এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আনা হয় আইরিন খাতুন ( ২৪) নামের এক গৃহবধূকে। প্রসূতি আইরিনের সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করার ব্যবস্থা করা হয়। অ্যানেসথেটিস্ট তাঁকে অবশ করানোর পর একপর্যায়ে রোগিণী ও তাঁর গর্ভের শিশুটি মৃত্যুবরণ করে। বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সিজারিয়ান করার আগে রোগিণীর অন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করা হয়নি। সেখানে ক্লিনিক মালিককে পুলিশ ধরেছে। তার আগেও ওই ক্লিনিকে গত ছয় বছরে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে ১০ জন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।
এসব ভুল চিকিৎসা এবং অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হওয়ার পরও সেখানে মামলা হওয়ার উদাহরণ খুবই কম। কারণ স্বজনের মৃত্যুর পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার মতো মানসিকতা সাধারণত কারো থাকে না। আবার সরকারের পক্ষ থেকেও এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মান যাচাইয়ের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। ফলে চিকিৎসা খাতের এই দিকটি ক্রমে অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। একাধিকবার সরকার ভিজিল্যান্স টিমের মাধ্যমে কিছু তৎপরতা দেখিয়েছে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়তেও দেখা গেছে। তাই মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজনে বিষয়টি সরকারের তলিয়ে দেখা উচিত। যেসব চিকিৎসাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসুবিধা নেই কিংবা যেখানে অবহেলা বিদ্যমান সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
mhussain_71@yahoo.com
হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকগুলোর ব্যাপারে দেখা যায়, কখনো যদি কোথাও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, তাহলে দেখা যাবে সেই পর্যন্ত শেষ। কখনো তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তা আলোর মুখ দেখে না। আবার কোথাও হয়তো দেখা যাবে যে আদৌ সেই প্রতিবেদনই তৈরি হয় না। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেখানে চিকিৎসকই হন সদস্য, যিনি স্বগোত্রীয়ের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেন না।
এই যেমন ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতাল নিয়ে এত লেখালেখি হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক মৃদুল বাবুর মৃত্যু ও তাদের অবহেলার কারণে তাদের কি কোনো শাস্তি হয়েছে? এমন কোনো সংবাদ কোথাও চোখে পড়েনি। এই হাসপাতাল সম্পর্কে আগেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সাবেক ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যুবরণ করলেন এখানে। তাঁর মৃত্যুও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সাংবাদিক ও ক্রীড়া ভাষ্যকার তওফিক আজীজ খানের চিকিৎসা বিষয়েও তাঁর পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে। অনেক দিন আগের ঘটনা হলেও আজ অবধি এ বিষয় তওফিক আজীজ খানের সন্তানদের ব্যথিত করে, ক্ষুব্ধ করে। তাদের কথা_হাসপাতালের ভুলের কারণে তাদের বাবার সুষ্ঠু চিকিৎসা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, তওফিক আজীজ খানের স্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগমও মৃত্যুবরণ করেন চিকিৎসালয়ের অবহেলার কারণে। ঢাকার বিখ্যাত একটি চিকিৎসালয়ে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর। সেখানে তাঁকে ইসিজি করতে নেওয়া হলে দেখা গেল পেপার নেই। পেপার আনা হলো স্টোর থেকে। তারপর ইসিজি করা শুরু করা হবে। এমন সময় দেখা গেল মেশিনের কর্ড অকেজো। রোগীর অবস্থার অবনতি হতে দেখে ডাকা হলো চিকিৎসক। কিন্তু দক্ষ কোনো চিকিৎসককে পাওয়া গেল না সেখানে। ইতিমধ্যে রোগীর অবস্থা খুবই খারাপের দিকে মোড় নেয়। ওখান থেকে বের করে আনার কিছু সময় পরই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন প্রায় বিনা চিকিৎসায়। কোনো দক্ষ চিকিৎসকই তাঁকে চিকিৎসাসেবা দেননি সর্বাধিক সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত এই চিকিৎসালয়টিতে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত আমার মাকে রীতিমতো টানাহেঁচড়া করেছে গ্রিনরোডের একটি বড় ক্লিনিক। কোলোনস্কপি করার জন্য তিনবার স্যাম্পল কালেকশন করেছে তারা। দুবারই ভুল করেছে স্যাম্পল নিতে। প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ আমার মায়ের শরীর থেকে মাংস কেটে (স্যাম্পল) আনতে গিয়ে তাঁকে যে কষ্ট দেওয়া হয়েছিল, সেই কষ্টের কথা কি আমাদের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব? আমার মাকে হারিয়ে আমরা যে ব্যথা পেয়েছি, তা বাড়িয়ে দিয়েছে চিকিৎসকের সেই ভুল। আমার মাকে কোনো দিনও ফিরে পাব না। কিন্তু সেই চিকিৎসককে কি কখনো শ্রদ্ধা জানাতে পারব?
অথচ এই হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকগুলোর কাছেই আমাদের যেতে হয় বারবার। যেন আমরা জিম্মি হয়ে আছি। সরকারি হাসপাতালগুলোর কথা না বলাই ভালো। সেখানে কোনো ভুলভ্রান্তি হলে কিংবা অবহেলার কারণে কোনো রোগী মারা গেলে তার নিকটজন যদি প্রতিবাদ করে, তাহলে প্রতিবাদের পরিণতি যে কী ভয়াবহ হয়, তা দেখা যায় প্রায়ই পত্রিকার পাতায়। সেসব স্থানে প্রায়ই মারমুখী হয়ে থাকে তাদের স্টাফরা। কখনো বা লাশের কাছেই পড়ে থাকতে হয় আহত কোনো স্বজনকে। এমনটা হয় মূলত সেসব স্থানের কর্মচারীদের ইউনিয়নের দাপটে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ইউনিয়নের দাপটের ব্যাপারে প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হতে দেখা যায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা রোগীদের হয়রানি করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
চিকিৎসাকে শুধুই টাকা বানানোর হাতিয়ার হিসেবে যারা ব্যবহার করে, তাদের কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে? ঢাকার বাইরেও যে কত অবহেলা করা হয়, আর টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়! তেমনি একটি উদাহরণ পাবনার চাটমোহর এলাকার এক গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা। ঈশ্বরদী এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আনা হয় আইরিন খাতুন ( ২৪) নামের এক গৃহবধূকে। প্রসূতি আইরিনের সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করার ব্যবস্থা করা হয়। অ্যানেসথেটিস্ট তাঁকে অবশ করানোর পর একপর্যায়ে রোগিণী ও তাঁর গর্ভের শিশুটি মৃত্যুবরণ করে। বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সিজারিয়ান করার আগে রোগিণীর অন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করা হয়নি। সেখানে ক্লিনিক মালিককে পুলিশ ধরেছে। তার আগেও ওই ক্লিনিকে গত ছয় বছরে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে ১০ জন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।
এসব ভুল চিকিৎসা এবং অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু হওয়ার পরও সেখানে মামলা হওয়ার উদাহরণ খুবই কম। কারণ স্বজনের মৃত্যুর পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার মতো মানসিকতা সাধারণত কারো থাকে না। আবার সরকারের পক্ষ থেকেও এসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মান যাচাইয়ের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। ফলে চিকিৎসা খাতের এই দিকটি ক্রমে অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। একাধিকবার সরকার ভিজিল্যান্স টিমের মাধ্যমে কিছু তৎপরতা দেখিয়েছে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়তেও দেখা গেছে। তাই মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজনে বিষয়টি সরকারের তলিয়ে দেখা উচিত। যেসব চিকিৎসাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসুবিধা নেই কিংবা যেখানে অবহেলা বিদ্যমান সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
mhussain_71@yahoo.com
No comments