ইউজিন রবিনসন-অনেক আগেই যুদ্ধাবস্থার অবসান হওয়া উচিত ছিল

ত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। সন্দেহ আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে এক দশক কেটে গেছে। অনেক আগেই আমাদের সেই যুদ্ধের বিজয় হয়েছে বলে ঘোষণা করতে পারতাম। এত দিন গত হওয়ার পর হলেও যুদ্ধপরবর্তী প্রাপ্তি এবং প্রয়োজনের নিরিখে বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে বিশ্লেষণ হওয়ার দাবি রাখে। আসলে আমরা যে যুদ্ধ চালিয়েছিলাম, তা কিন্তু সর্বতোভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিল না।


সত্যি করে বলতে গেলে সেই মঙ্গলবার সকালে যা ঘটেছিল, তাকে শুধু সন্ত্রাসবাদ বলারও সুযোগ কম। ওটা ছিল স্পষ্টত হত্যাকাণ্ড। আল-কায়েদা নামের সন্ত্রাসী সংগঠনের ১৯ জনের একটি হত্যাকারী দল সেদিন ওই ভবনে আক্রমণ পরিচালনা করেছিল, যে সন্ত্রাসী দল তালেবান অধ্যুষিত আফগানিস্তানে অবস্থান করছিল। আজকে অবশ্য বলা যায়, আমাদের যুদ্ধ ছিল আল-কায়েদার বিরুদ্ধে এবং আমরা সেই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি।
মাত্র চার মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা চারদিকে থাকা তালেবানকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়। আমি মনে করি, আমাদের তখনই বিজয়ের ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। সম্ভবত এটা ছিল ২০০৩ সালের ১ মার্চের কথা_যখন ৯/১১-এর পরিকল্পনাকারী এবং ৯/১১-এর জন্য দায়ী প্রধান ব্যক্তি খালিদ শেখ মোহাম্মদ ধরা পড়ে। অথবা ২০০৪ সালে যখন আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, তখনো সেই যুদ্ধের সমাপ্তি হওয়া উচিত ছিল। দশকের মাঝামাঝি এসে ৯/১১-তে শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রতিটি স্তরই প্রায় শেষ হয়ে যায়। আমরা সেখানে বিজয়ও অর্জন করি, যদিও আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন তখনো অনেক শক্তিশালী। তবে আমাদেরও ব্যক্তিকে পাকড়াও করার ব্যাপারেই বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। আসলে আমরা তা হতে পারিনি। কারণ জর্জ ডাবি্লউ বুশ এবং ডিক চেনি ইরাকে সাদ্দাম হোসেনবিরোধী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকেন, যা ছিল আমার ধারণায়, অপ্রয়োজনীয়ও বটে। আমার মনে হয়, দুনিয়ার মধ্যে ক্ষমতা লাভের জন্য সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী একটা যুদ্ধ হয়েছিল সেটা। সাদ্দামের কাছে বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে এমন কোনো মারণাস্ত্র ছিল না। আর যদি থাকতও, তিনি কখনো সেই অস্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানার চিন্তা করতেন না।
যুদ্ধ শেষ করার চেয়ে শুরু করাটা খুবই সহজ। আমরা এখনো আফগানিস্তানে আছি, আমরা এখনো ইরাকে আছি। আর ৯/১১-এ শুরু হওয়া যুদ্ধের যে বিজয় সূচিত হয়েছিল, তাকে স্বীকার না করার পরিণতি হিসেবে আমাদের বিরাট মূল্য দিতে হচ্ছে।
আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ছয় সহস্রাধিক সদস্যের মৃত্যু এবং হাজার হাজার সেনার মারাত্মক আহত হওয়ার মতো ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আরো সেনা নিয়োগ করতে হয়েছে। বিনিময়ে আমাদের এখানে কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে, এমনকি গৃহহীনও হতে শুরু করেছে অনেকে। শত শত বিলিয়ন ডলার জলে মিশে গেছে শুধু যুদ্ধব্যয় পরিচালনার জন্য। জাতিকে বাজেটের আকার বাড়াতে বাধ্য করছে। আমাদের এখন একমত হতে হবে, আমাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কী করা দরকার সেই বিষয়ে। আমাদের স্কুলগুলোর উন্নয়ন প্রয়োজন, আমাদের অবকাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। আমাদের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থনীতিকে আরো চাঙ্গা করা দরকার। আমাদের রাজনৈতিক যুক্তিতর্ক প্রয়োগ করে একটা সমাধানের পথ বের করা দরকার। জাতীয়ভাবে আমাদের অর্জনগুলোকে সুসংহত করার ব্যাপারে একমত হওয়ার প্রয়োজন আছে। আমাদের ভোটারদের মধ্যে যেন অস্থিরতা এসেছে। সেদিন যারা বাঁয়ে গেছে, দুই বছর পরে তাদের দেখা যাচ্ছে তারা ডানে চলে গেছে। আমি নিশ্চিত, তাদের এই পরিবর্তন কিন্তু সব সময় ভালোর দিকে নয়। আমার তো মনে হয়, এখন যদি নির্বাচন হতো, তাহলে তারা কংগ্রেসের প্রত্যেক মেম্বারকেই ছুড়ে ফেলে দিত এবং নতুন নির্বাচন করত।
৯/১১ যেভাবে জাতিকে উদ্বেগের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, সেই উদ্বেগ আজকে শুধু সন্ত্রাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, সেটা এখন জাতির ভবিষ্যতেও গিয়ে বিদ্ধ হচ্ছে। আজকে এই উদ্বেগ দেশপ্রেমের ব্যাপারেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আমাদের ভাবতে হবে, ওসামা বিন লাদেন মারা গেছেন, ৯/১১-তে আমাদের যে আল-কায়েদা আক্রমণ করেছিল, সেই আল-কায়েদার পরাজয় হয়েছে। কিন্তু এমন ভাবার কারণ নেই যে আমরা আর আক্রান্ত হব না। এমনকি এমনো হতে পারে, কোনো দুষ্কৃতকারী আক্রমণ করে আল-কায়েদার নাম দিয়ে দিতে পারে। ভবিষ্যতে যে সময় আসছে, তাতে আমাদের গোয়েন্দাদের শক্তিশালী করতে হবে, যাতে এমন কোনো আশঙ্কা দেখা দিলে তা সহজেই নিবৃত্ত করা যায়। এর কোনো আলাদা নাম থাকারও প্রয়োজন নেই। যখন এমন হবে, তখনই যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তেমন সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। ৯/১১-তে যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা বছরকাল আগেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। চলুন, এখনই এটাকে শেষ করে দিই। এখন ভাবতে হবে_আমরা বিজয়ী। আমাদের বিজয় হয়েছে।

লেখক : কলাম লেখক
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.