অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ-ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতেই হবে
মাত্র কয়েকদিন আগে ১৮ জানুয়ারি 'মূল্যস্ফীতি ও সুদহার : আমজনতার স্বার্থহানি ঘটাবেন না' শীর্ষক সমকালের সম্পাদকীয়তে লেখা হয় : 'আমজনতা কেমন আছে, এমন প্রশ্ন করা হলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দ্বিধায় না পড়েই উত্তর দেবে_ মোটেই ভালো নেই। সরকার হয়তো দাবি করবে_ কৃষি ও শিল্প উৎপাদন, রফতানি আয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদসহ ম্যাক্রো অর্থনীতির অনেক সূচক উৎসাহব্যঞ্জক।
তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবিত্ত, দরিদ্র ও হতদরিদ্ররা এসব তাত্তি্বক বিষয় নিয়ে কোনো আমলেই তেমন মাথা ঘামাতে রাজি থাকে না। তাদের প্রধান দুশ্চিন্তা নিত্যদিনের বাজারদর নিয়ে।' ২২ জানুয়ারি সমকাল আয়োজিত 'বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের পথ' শীর্ষক আলোচনায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা আমজনতার ভালো না থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে পড়াকে দায়ী করেছেন। তারা বাজার অর্থনীতির যুগেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরকারের ভূমিকা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতির প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জ_ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও কর্মস্থানে স্থবিরতা, টাকার মূল্যমান ক্রমাগত কমে যাওয়া, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ছাড়ে নিম্নগতি। তারা ধনী-দরিদ্র বৈষম্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, সম্পদ কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া শুভ লক্ষণ নয়। এতে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ উদ্যম হারিয়ে ফেলে। পরিণতিতে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা সৃষ্টি হয়। সমকালের আলোচনায় বিশিষ্টজনরা উত্তরণের অর্থাৎ সমাধানের পথও তুলে ধরেছেন। মোটা দাগে এগুলো হচ্ছে : প্রবৃদ্ধির হার যেন ৬ শতাংশের নিচে না নামে সে জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণ। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে উৎপাদনশীল খাতগুলো, যেমন_ কৃষি ও শিল্পের প্রতি। ডলার ও টাকার বিনিময় হার এখন যে পর্যায়ে রয়েছে সেটা ধরে রাখতে হবে। এ জন্য রফতানি বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার পাশাপাশি জনশক্তি রফতানি খাতকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। এ দুটি খাত বিশ্ব অর্থনীতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। উন্নত দেশগুলোতে মন্দা চলছে এবং তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ছে। এর সঙ্গে মানিয়ে চলা কঠিন, কিন্তু বিকল্প নেই। প্রবাসে কাজের জন্য যাওয়া কর্মীদের ব্যয় কমাতে পারলে সেটাও হবে বড় অর্জন। সরকারের আরেকটি জরুরি কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ জন্য সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই। মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার থেকে সুফল ভোগ করে এবং বঞ্চিত করে উৎপাদকদের। এবারে আমন ধান এবং শীতকালীন সবজি বাজারে আসায় ক্রেতারা কিছুটা সন্তুষ্ট। কিন্তু উৎপাদক কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশ সৃষ্টি না করতে পারলে সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমান সরকারের তিন বছরের সাফল্যের তালিকায় বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় কৃষির কথা। সরকারকে কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ ভুললে চলবে না। দরিদ্র-হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থের কথাও ভাবতে হবে। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন হয়ে পড়লে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উন্নয়নের সুফল তাদের ঘরে আপনাআপনি পেঁৗছায় না, বরং বিদ্যমান ব্যবস্থায় দেখা যায়_ যত বেশি উন্নয়ন, মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে তত বেশি সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে সরকারের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অর্থনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন সাধন। সেটা করতে পারাও বড় চ্যালেঞ্জ এবং এ জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার অপরিহার্য শর্ত।
No comments