পবিত্র কোরআনের আলো-কাফেররা চলে শয়তানের প্ররোচনায় এবং মুমিনরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে

৮. ওয়া ইয জাইয়্যিনা লাহুমুশ শাইত্বানু আ'মালাহুম ওয়া ক্বালা লা গালিবা লাকুমুল ইয়াওমা মিনান নাসি ওয়া ইনি্ন জারুল্লাকুম, ফালাম্মা তারা আকিল ফি আতানি নাকাসা আলা আকিবাইহি ওয়া কালা ইনি্ন বারিয়্যুম মিনকুম ইনি্ন আরা মা-লা তারাওনা ইনি্ন আখাকুল্লাহা। ওয়াল্লাহু শাদিদুল ইক্বাব। ৫৯. ইয ইয়াক্বুলুল মুনাফিক্বুনা ওয়াল্লাযিনা ফি ক্বুলুবিহিম মারাদুন গার্রা হাউলায়ি দিনুহুম। ওয়া মাইঁ ইয়াতাওয়াক্কাল আলাল্লাহি ওয়া ইন্নাল্লাহা আযীযুন হাকীম।


৫০. ওয়া লাও তারা ইয ইয়া তাওফ্ফাল্লাযিনা কাফারুল মালায়িকাতুহ্ ইয়াদ্বরিবুনা উজুহাহুম ওয়া আদবারাহুম; ওয়া জুকু আযাবাল হারিক। ৫১. জালিকা বিমা ক্বাদ্দামাত আইদিকুম ওয়া আন্নাল্লাহা লাইসা বিজল্লামিল লিলআবিদ।
[সুরা আল-আনফাল, আয়াত ৪৮-৫১]

অনুবাদ
৪৮. আর যখন শয়তান তাদের এ কাজের (যুদ্ধযাত্রার) ব্যাপারে বাহবা দিচ্ছিল এবং বলছিল যে আজ এমন কোনো মানুষ নেই, যারা তোমাদের ওপর বিজয়ী হতে পারে। আর আমি তো তোমাদের পাশে আছি। এরপর যখন উভয় দল সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তখন সে পেছন থেকে কেটে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাও না। আমি অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করি। কারণ আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।
৪৯. মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা যখন বলছিল, এদের (মুসলমানদের) নতুন ধর্ম তাদের প্রতারণায় ফেলবে। অথচ যখন কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে (তখন বুঝতে হবে সে ঠিক কাজটি করেছে, কারণ) আল্লাহই পরম পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।
৫০. তুমি যদি সেই অবস্থা দেখতে পেতে, যখন আল্লাহর ফেরেশতারা কাফিরদের মুখমণ্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে করে রুহ বের করে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, (তারা বলছিল) তোমরা এবার আগুনের শাস্তি ভোগ করো।
৫১. এটা হচ্ছে তোমাদের দুই হাতের কামাই, যা তোমরা ভবিষ্যতের জন্য করে রেখেছ। আল্লাহ কখনো তাঁর বান্দার ওপর অবিচার
করেন না।

ব্যাখ্যা
৪৮ নম্বর আয়াতে বদরের যুদ্ধের প্রসঙ্গে শয়তানের কিছু বিশেষ কার্যকলাপের প্রসঙ্গ এসেছে। এখানে শয়তানের ক্রিয়াকলাপগুলোর কথা এভাবে বর্ণিত হয়ছে যে দৃশ্যত মনে হতে পারে, শয়তান সশরীরে উপস্থিত হয়ে এখানে ভূমিকা রেখেছিল। অর্থাৎ সে মানুষের বেশে মুশরিকদের সামনে এসেছিল এবং এসব কথা বলে তাদের উস্কানি দিয়েছিল; কিন্তু শয়তানের যে ধারণা কোরআন-হাদিসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাতে বোঝা যায় যে শয়তান এমন কোনো জীব নয়। অপরদিকে শয়তান বা কোনো জীব কোনো বিশেষ মানুষের চেহারাসহ তার রূপ ধারণ করতে পারে, এমন ধারণা সঠিক নয়। বদরের যুদ্ধে শয়তানের পক্ষ থেকে মুশরিকদের প্ররোচিত করার কাজটি এভাবে হতে পারে যে শয়তান মুশরিকদের অন্তরে এ রূপ ভাবনা জাগ্রত করেছিল।
কথিত আছে, মক্কার মুশরিকরা যখন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিল তখন তাদের পুরনো শত্রু বনু বকরের দিক থেকে মক্কা আক্রান্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা করছিল। এ অবস্থায় কোরাইশ নেতারা যখন বনু বকরের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করতে যায় তখন বনু বকরের নেতা সুরাকা এ কথাগুলোই বলেছিল, যেগুলো শয়তান কোরাইশদের অন্তরে জাগিয়ে দিয়েছিল। তাদের আশ্বস্ত করেছিল এবং সহযোগী হিসেবে সঙ্গেও গিয়েছিল; কিন্তু কোরাইশদের পরাজয়ের আলামত বুঝতে পেরেই সে পেছন থেকে কেটে পড়েছিল। আসলে সুরাকার আচরণ শয়তানের মতোই ছিল এবং কোরাইশদের অন্তরজগতে কাজ করছিল শয়তান। এই আয়াতে এ বিষয়টাই তাৎপর্যপূর্ণ প্রতীকী ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।
৪৯ নম্বর আয়াতে মোনাফিক ও দোদুল্যমান অসৎ চরিত্রের লোকেরা বদরের যুদ্ধের সময় যে অবস্থান গ্রহণ করেছিল, তা বর্ণনা করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা যখন সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় স্বল্প সমরশক্তি নিয়ে কাফিরদের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিল, তখন মুনাফিকরা এ সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠল। তারা মুসলমানদের সম্পর্কে এমনও মন্তব্য করতে শুরু করল যে এই লোকগুলো নিজেদের নতুন ধর্ম নিয়ে পাগল হয়ে গেছে। নিজেদের ঘোর কাটলেই এরা মজাটা বুঝতে পারবে। আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের জানিয়ে দিচ্ছেন, আল্লাহর ওপর যারা ভরসা করে তারাই তো সঠিক পথে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.