সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের একগুচ্ছ কবিতা
নবজন্ম
অন্ধ
বোবা
বধির
অলৌকিক আগুনে মাখানো বালিকা-উত্তর তিন তরুণী, তারা তিন জন ত্রিভুজ-
বোবা
বধির
অলৌকিক আগুনে মাখানো বালিকা-উত্তর তিন তরুণী, তারা তিন জন ত্রিভুজ-
দৃষ্টিহীন হলেও স্বপ্নহীন নয় । নির্বাক হলেও নীরব নয় । কালা হলেও কালো নয় ।
কি সুন্দর অন্ধ
কি অপূর্ব বোবা
কি চমৎকার বধির
কোন এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় গানে গানে তিন তলার ছাদে আকাশ ভেঙে নেমে এলো এলোমেলো ঝমঝমে তুমুল বৃষ্টি । তখন তিন অগ্নিকন্যা নৃত্যরত পরীর মত ভিজতে লাগল বর্ষার মুষলধারায় । মন্ত্র মাখানো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে...
...ভিজতে ভিজতে পরশ পাথরের প্রাণের ছোঁয়ায় খুলে গেল অদ্ভুত খিল ও খোসা । চিচিংফাঁকের মত উন্মুক্ত হল দিক দিগন্ত ! খুলে গেল দৃষ্টি । ফুটে উঠল ভাষা । ছুটে গেল আটকে থাকা সেই শ্রবণধ্বণির ধারা । টুটে গেল প্রতিবন্ধকতার আঁধার । প্রাকৃতিক পূর্ণতায় চোখে-মুখে ঝলকানো আশ্চর্য আলোর ঝিলিক !
বিহবলতায় কাঁপতে কাঁপতে আত্মহারা অন্ধবোনের চিৎকার, ‘আহ, কী আনন্দ! আমি পৃথিবীর ভাষা খুঁজে পেয়েছি’।
বৃষ্টিভেজা বিস্মিত বোবাভগ্নি বলল, ‘উহ, কীযে জাদু জাদু লাগছে! আজ আমি আমাকে দেখতে পাচ্ছি! মা গো, আমি কী সত্যি সত্যি দেখতে পাচ্ছি? আহ, কী যে ভাল্লাগছে জীবন!’
অবিশ্বাস্য বিস্ময়ে পাথরের মত স্থবির, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছোটবোন । সকল শব্দাবলির শিহরণে অভিভূত বধির-সহোদরা জানাল- আমি তোমাদের শুনতে পাচ্ছি । গানে গানে ঠশা-কানের প্রাণ ভরে যাচ্ছে! কোথায় বাজছে অই উৎসর্গকৃত বৃষ্টিসঙ্গীত : “আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম/ শুধু শ্রাবণ ‘সন্ধ্যা’টুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম”।
শেফালির হাতে শেফালি
তমুল তুফান-তর্কে বিতর্কে ভেঙে যাচ্ছে ভাষাব্রিজ
অনুকূলে প্রতিকূলে জোয়ার ভাটায় যথার্থ যুক্তি
গুঁড়িয়ে দিচ্ছে পুরনো প্রাচীর।
(হিংস্রতায় হাসান খুবলে নিচ্ছে ডিজেবিলিটি রুমানার দৃষ্টিচোখ
আবার শাহজাহানেরা প্রতিনিয়ত নির্মাণ করছে তাজমহল,
গাছে এক দড়িতে ঝুলন্ত যৌথজীবন ।)
শেফালির হাতে তুলে দিচ্ছে শেফালি ।
ভালোবাসা জয় যুক্ত হয়েছে, জয় যুক্ত হয়েছে, জয় যুক্ত হয়েছে...
আর্কিস্টাইল
বনজ গাছটাকে গৃহছাদ ফুটো করে দূর আকাশে উড়িয়ে দাও
কাঁচের কৌশলে রোদকে আমন্ত্রণ জানাও বৈঠকখানায়
কার্নিশে ঝুলিয়ে দাও বাবুইবাসা,
পাশাপাশি শারদীয় ভাদ্রআশ্বিনের আগমন ।
জানালার সৌজন্যে ধরে রাখ প্রতিবেশী কৃষ্ণচূড়া
অথবা সবুজ পাতাদের পত্রালাপ, একটু নীল, একটা নীলটুনি
কিংবা দূরের এক টুকরো দৃশ্যদানা ।
আলোবাতাসের ফ্রি টিকিট। দাও ষড়ঋতুর ইমিগ্রেশন
ড্রেসিং টেবিলের আয়না প্রতিফলিত হোক পাশের বাড়ির প্রজাপতি
ফ্লোরে সাদর স্বাগতম জ্যোৎস্না মাখানো চাঁদ
দখিনের ফাঁকাফ্রেমে বন্দি কর নান্দনিক ভিউ ।
সিঁড়ি বিছিয়ে সাদরে আকাশটাকে বিছানার পাশে নিয়ে এসো
গ্রামের বাড়ির পুকুরসহ উঠোন উঠিয়ে এনে সাজাও বারান্দায় ।
ফিরে এসো ফিদা
দুধ ভাত মাখা কাকে খাচ্ছে, ফিরে এসো ফিদা
নগ্ন সরস্বতী সেজে বসে আছে মাধুরী-মিনাক্ষী
তোমার জন্য জেগে উঠছে যৌনকাতর জলপরী
বন্য হরিণেরাও হায়েনার ভয়ে পোড়াচ্ছে খোয়াব...
দাহ হচ্ছে ভারতের কুশপুত্তলিকা, জ্বলছে গীতা
ফতোয়ার পর্ণো প্রতিবাদে পুড়ছে সীতার শাড়ি
তুমি হারিয়ে গেলে কার বাড়ি? তুলে নাও তুলি
আগুনের রঙ দিয়ে আঁকো আরেক নগ্ন জননী ।
পাহাড়ি টক শো
বনপাহাড়ি ঝর্ণা থেকে আসছে নেমে আমার ভাইয়ের রক্তজল
সেই নূপুরের শব্দ স্থলে আমার বোনের ক্রন্দনের সুর ছলাৎছলা
শান্তির মীথের সমীরণে আজ বাতাসে বারুদ পোড়া কড়া ঝাঁঝ
আর বনজ পাঁপড়ি পাখি কাঁপছে কাতর, দেখছে একী উড়ছে বাজ!
থমথমে সব! সন্ধ্যায় বন্ধ মন্দিরে কাল জ্বলেনি তো বাতিফুল,
তোমরা তখন তিন বাঙালি টিভি শো’তে আলোকিত, হুলস্থুল!
আমরা বোকা বাবু নই
আমরা তো আর জ্যোতি বাবু নেই, যে জ্যোতি দান করে যাব
ভোতা ব্রাশ দিয়ে পালিশ করব পুরনো পাদুকা!
কিন্তু মাটির চুলায় রান্না করা মুরগির মাংসের ঝোল
আর শাদা ভাতের স্বাদ... নারায়নগঞ্জের নৌকার ঘুরে বেড়ানোর
কবিতা পড়তে চাই ।
খাঁটি ঘি’য়ের মতো ‘ঐতিহাসিক ভুল’ অন্তত আমরা করব না,
কারণ আমরা অতটা বোকা বাবু নই ।
বর্ণ আছে, বর্ণমালা নেই
আদুরে শিশুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল- বেবি ল্যাঙ্গুয়েজে
রান্নাঘরে বিড়ালের ভাষায় ডাকছে বিড়াল
জানালার ফাঁকে বাতাস এবং বৃক্ষের কথোপকথনে কাঁপছে পাতা
স্কুলমাঠে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে মাতছে কিশোর ক্রিড়াবিদ
আর চ্যানেলে হঠাৎ সেক্স-ল্যাঙ্গুয়েজে মাতল মডেল ।
ভাষাগুলোর বর্ণিল বর্ণ আছে, বর্ণমালা নেই ।
কি সুন্দর অন্ধ
কি অপূর্ব বোবা
কি চমৎকার বধির
কোন এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় গানে গানে তিন তলার ছাদে আকাশ ভেঙে নেমে এলো এলোমেলো ঝমঝমে তুমুল বৃষ্টি । তখন তিন অগ্নিকন্যা নৃত্যরত পরীর মত ভিজতে লাগল বর্ষার মুষলধারায় । মন্ত্র মাখানো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে...
...ভিজতে ভিজতে পরশ পাথরের প্রাণের ছোঁয়ায় খুলে গেল অদ্ভুত খিল ও খোসা । চিচিংফাঁকের মত উন্মুক্ত হল দিক দিগন্ত ! খুলে গেল দৃষ্টি । ফুটে উঠল ভাষা । ছুটে গেল আটকে থাকা সেই শ্রবণধ্বণির ধারা । টুটে গেল প্রতিবন্ধকতার আঁধার । প্রাকৃতিক পূর্ণতায় চোখে-মুখে ঝলকানো আশ্চর্য আলোর ঝিলিক !
বিহবলতায় কাঁপতে কাঁপতে আত্মহারা অন্ধবোনের চিৎকার, ‘আহ, কী আনন্দ! আমি পৃথিবীর ভাষা খুঁজে পেয়েছি’।
বৃষ্টিভেজা বিস্মিত বোবাভগ্নি বলল, ‘উহ, কীযে জাদু জাদু লাগছে! আজ আমি আমাকে দেখতে পাচ্ছি! মা গো, আমি কী সত্যি সত্যি দেখতে পাচ্ছি? আহ, কী যে ভাল্লাগছে জীবন!’
অবিশ্বাস্য বিস্ময়ে পাথরের মত স্থবির, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছোটবোন । সকল শব্দাবলির শিহরণে অভিভূত বধির-সহোদরা জানাল- আমি তোমাদের শুনতে পাচ্ছি । গানে গানে ঠশা-কানের প্রাণ ভরে যাচ্ছে! কোথায় বাজছে অই উৎসর্গকৃত বৃষ্টিসঙ্গীত : “আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম/ শুধু শ্রাবণ ‘সন্ধ্যা’টুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম”।
শেফালির হাতে শেফালি
তমুল তুফান-তর্কে বিতর্কে ভেঙে যাচ্ছে ভাষাব্রিজ
অনুকূলে প্রতিকূলে জোয়ার ভাটায় যথার্থ যুক্তি
গুঁড়িয়ে দিচ্ছে পুরনো প্রাচীর।
(হিংস্রতায় হাসান খুবলে নিচ্ছে ডিজেবিলিটি রুমানার দৃষ্টিচোখ
আবার শাহজাহানেরা প্রতিনিয়ত নির্মাণ করছে তাজমহল,
গাছে এক দড়িতে ঝুলন্ত যৌথজীবন ।)
শেফালির হাতে তুলে দিচ্ছে শেফালি ।
ভালোবাসা জয় যুক্ত হয়েছে, জয় যুক্ত হয়েছে, জয় যুক্ত হয়েছে...
আর্কিস্টাইল
বনজ গাছটাকে গৃহছাদ ফুটো করে দূর আকাশে উড়িয়ে দাও
কাঁচের কৌশলে রোদকে আমন্ত্রণ জানাও বৈঠকখানায়
কার্নিশে ঝুলিয়ে দাও বাবুইবাসা,
পাশাপাশি শারদীয় ভাদ্রআশ্বিনের আগমন ।
জানালার সৌজন্যে ধরে রাখ প্রতিবেশী কৃষ্ণচূড়া
অথবা সবুজ পাতাদের পত্রালাপ, একটু নীল, একটা নীলটুনি
কিংবা দূরের এক টুকরো দৃশ্যদানা ।
আলোবাতাসের ফ্রি টিকিট। দাও ষড়ঋতুর ইমিগ্রেশন
ড্রেসিং টেবিলের আয়না প্রতিফলিত হোক পাশের বাড়ির প্রজাপতি
ফ্লোরে সাদর স্বাগতম জ্যোৎস্না মাখানো চাঁদ
দখিনের ফাঁকাফ্রেমে বন্দি কর নান্দনিক ভিউ ।
সিঁড়ি বিছিয়ে সাদরে আকাশটাকে বিছানার পাশে নিয়ে এসো
গ্রামের বাড়ির পুকুরসহ উঠোন উঠিয়ে এনে সাজাও বারান্দায় ।
ফিরে এসো ফিদা
দুধ ভাত মাখা কাকে খাচ্ছে, ফিরে এসো ফিদা
নগ্ন সরস্বতী সেজে বসে আছে মাধুরী-মিনাক্ষী
তোমার জন্য জেগে উঠছে যৌনকাতর জলপরী
বন্য হরিণেরাও হায়েনার ভয়ে পোড়াচ্ছে খোয়াব...
দাহ হচ্ছে ভারতের কুশপুত্তলিকা, জ্বলছে গীতা
ফতোয়ার পর্ণো প্রতিবাদে পুড়ছে সীতার শাড়ি
তুমি হারিয়ে গেলে কার বাড়ি? তুলে নাও তুলি
আগুনের রঙ দিয়ে আঁকো আরেক নগ্ন জননী ।
পাহাড়ি টক শো
বনপাহাড়ি ঝর্ণা থেকে আসছে নেমে আমার ভাইয়ের রক্তজল
সেই নূপুরের শব্দ স্থলে আমার বোনের ক্রন্দনের সুর ছলাৎছলা
শান্তির মীথের সমীরণে আজ বাতাসে বারুদ পোড়া কড়া ঝাঁঝ
আর বনজ পাঁপড়ি পাখি কাঁপছে কাতর, দেখছে একী উড়ছে বাজ!
থমথমে সব! সন্ধ্যায় বন্ধ মন্দিরে কাল জ্বলেনি তো বাতিফুল,
তোমরা তখন তিন বাঙালি টিভি শো’তে আলোকিত, হুলস্থুল!
আমরা বোকা বাবু নই
আমরা তো আর জ্যোতি বাবু নেই, যে জ্যোতি দান করে যাব
ভোতা ব্রাশ দিয়ে পালিশ করব পুরনো পাদুকা!
কিন্তু মাটির চুলায় রান্না করা মুরগির মাংসের ঝোল
আর শাদা ভাতের স্বাদ... নারায়নগঞ্জের নৌকার ঘুরে বেড়ানোর
কবিতা পড়তে চাই ।
খাঁটি ঘি’য়ের মতো ‘ঐতিহাসিক ভুল’ অন্তত আমরা করব না,
কারণ আমরা অতটা বোকা বাবু নই ।
বর্ণ আছে, বর্ণমালা নেই
আদুরে শিশুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল- বেবি ল্যাঙ্গুয়েজে
রান্নাঘরে বিড়ালের ভাষায় ডাকছে বিড়াল
জানালার ফাঁকে বাতাস এবং বৃক্ষের কথোপকথনে কাঁপছে পাতা
স্কুলমাঠে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে মাতছে কিশোর ক্রিড়াবিদ
আর চ্যানেলে হঠাৎ সেক্স-ল্যাঙ্গুয়েজে মাতল মডেল ।
ভাষাগুলোর বর্ণিল বর্ণ আছে, বর্ণমালা নেই ।
সকালের মৃত্যু এবং পানসুপারি
একটি সকালের মৃত্যু কাউকে কাঁদায়নি,
মাসির মতো শুধু কেঁদেছিল সন্ধ্যা ।
বরিশাল থেকে ব্রাসেলস পর্যন্ত ইস্টিমার যাবে না জেনেও
মাসি মা’র আশীর্বাদ ছিল
গোবরে গৌরবোজ্জ্বল হবে সূর্যফুল ।
মৃত্যু আর আত্মহত্যা শীর্ষক সেমিনারের পর
বক্তারা পান-সুপারি খাবার জন্য
আসাদ চৌধুরীকে খুঁজতে থাকে ।
বস্ত্রফুল
নীল চাষের জন্য আমরা লাল হয়েছি,
আমাদের পূর্বপুরুষেরা হারিয়েছে আঙুল
মসলিনের জন্য অশ্লীলভাবে তারা কেটেছে গোলাপ!
মাটি মৃত্তিকার মতো মমতাময়ী
এখন ফুটছে অজস্র জুঁই-চামেলী-হাসনাহেনা
আমাদের চকড়িকাটা বোনেরা আবার কাজল রেখায়
সেই সূচ দিয়ে-
বিদেশি বর্গীবন্ধুদের জন্য বানাচ্ছে বস্ত্রফুল ।
No comments