চার বছরে পা-জনপ্রিয়তার পারদ নিম্নগামী

ব্যর্থতার দায় আর ধর্ষণ-চেষ্টার গ্লানি নিয়ে চতুর্থ বছরে পা রাখল মহাজোট সরকার। সরকারের তিন বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সরকারের ইতিবাচক দিকগুলো উঠে এসেছে। অন্যদিকে, বিরোধী দল মনে করে, গত তিন বছরে সরকারের কোনো সাফল্য নেই। মহাপ্রত্যাশার মহাজোট সরকার গত তিন বছরে কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে কিংবা নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি মহাজোটের


ছিল, সেসব প্রতিশ্রুতির কতটা পূরণ হয়েছে গত তিন বছরে? তিন বছর পর এসে সরকারের কর্মকাণ্ড এখন অনেকটা মিলিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে। বর্তমান সরকারের হাতে সময় আছে আর মাত্র দুই বছর। বিগত তিন বছরে সরকার যেসব কাজ করতে পারেনি, সেসব কাজ দুই বছরে সম্পন্ন করা কতটা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্নটা এখানে অসংগত নয়। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল দুই বছরের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছ থেকে। নতুন পরিবেশে গণতন্ত্রে ফেরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার পারদ স্বাভাবিক কারণেই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। দুই বছরের সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর মানুষের আশা ছিল, নতুন সরকারের পাঁচ বছরে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতির কি আদৌ কোনো পরিবর্তন হয়েছে? নাকি পুরনো সেই চাপান-উতোরই চলছে এখনো? অন্যদিকে, বিগত সরকারের মতোই ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। চলছে আগের মতোই দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি। আগের সরকারের তুলনায় দুর্নীতি কমেছে, এমনটি মনে করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কোনো সুযোগ নেই। রাজধানীসহ মফস্বল শহরগুলোতেও যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সরকারের ইতিবাচক অনেক অর্জন ম্লান করে দিয়েছে। টাটকা উদাহরণ সাতক্ষীরা। সরকারের তিন বছর পূর্তির আগে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সেখানে এক নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণ-চেষ্টার মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা যায়নি। উল্টো জেলা পরিষদে নতুন প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে দলীয়করণের নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিগত জোট সরকারের আমলে তো বটেই, সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ ছিল দিশেহারা। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া থামানো যায়নি বর্তমান সরকারের তিন বছরেও। অদৃশ্য বাজার সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী। গড়ে তোলা যায়নি বিকল্প বাজারব্যবস্থা। আশা করা গিয়েছিল, তৃতীয় বছরে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরো প্রসারিত হবে। কিন্তু সেখানেও দুর্নীতির প্রসার ঘটেছে বলে অভিযোগ আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া খুব কমই এগিয়েছে। জঙ্গিবাদের প্রসার বাধাগ্রস্ত হলেও সার্বিক আইনশৃঙ্খলার চিত্র আশাব্যঞ্জক ছিল না। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে গুপ্তহত্যা। সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে বলা হচ্ছে বিরোধী দলের অপতৎপরতা। অন্যদিকে, বিরোধী দলের দাবি, ক্রসফায়ারের বিকল্প হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। সমঝোতা না হওয়ায় সংসদে ফেরেনি বিরোধী দল। তাই জাতীয় সংসদকে সেই অর্থে কার্যকর করা যায়নি। অন্যদিকে, শেয়ারবাজারের পতন সরকারের জনপ্রিয়তার সূচকে ধস নামিয়েছে বললে ভুল হবে না।
গত তিন বছর ধরেই মন্ত্রিসভার অদক্ষতার কথা বার বার উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য অর্জিত হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক হয়েছে-এগুলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের জন্য ইতিবাচক দিক। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে চুক্তি না হওয়াটাও রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারের সামনে রয়েছে আরও দুটি বছর। এই দুই বছরে সরকার কি পারবে তিন বছরের ব্যর্থতাগুলো মুছে ফেলতে? না পারলে জনপ্রিয়তার নিম্নগামী পারদ ঊর্ধ্বমুখী হবে না।

No comments

Powered by Blogger.