শিক্ষা-ডিজিটাল সরকারের এনালগ অভ্যাস by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
শিক্ষার মানে বড় বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমাজে যেমন ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রে এ রকম পরিস্থিতির রূপ নিতে চলেছে। সমাপনী, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফল মনিটর করতে হবে। যেসব স্কুলের ফল মোটেই সন্তোষজনক নয় তার কারণ চিহ্নিত করে ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনুদান বন্ধ করে কিংবা এ ধরনের কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা হবে আত্মধাতের শামিল। দেশের সর্বাঞ্চল থেকে প্রকৃত শিক্ষিত
মানুষ গড়ে না উঠলে রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে না গত ১ জানুয়ারি একটি সরকারি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ছাত্র ভর্তি করাতে গিয়েছিলাম। লটারিতে নির্বাচিত হয়েছে। একজন শিক্ষক এককভাবে কাজটি করেছিলেন। তিনি পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে নির্দেশ এলো, আপাতত এ কাজটি বন্ধ থাক। নতুন বই বিনা মূল্যে দেওয়া হবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। টিভি-ক্যামেরা এসেছে। ব্যানার টানানো হয়েছে, সব ছেলেকে মাঠে দাঁড় করানো হলো বই বিতরণ করার জন্য। কেন এ অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হলো। কারণ এটি দীর্ঘদিনের একটি কুঅভ্যাস। সরকার নতুন কোনো কিছু করতে গেলে পরবর্তী সময়ে তা কতটা বাস্তবায়ন হবে তা না ভেবেচিন্তে ঢাকঢোল পেটাতে ভালোবাসে। একে আমরা বলতে চাই, এনালগ অভ্যাস। জনকল্যাণের জন্য কাজ করা সরকারের দায়িত্ব। সেটি কতটা সুষ্ঠুভাবে হলো সেটাই দেখার বিষয়। প্রচার একটা বিড়ম্বনা। পদ্মা ব্রিজ নিয়ে তো অনেক প্রচার হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে। টিভিতে অনেক চিত্র দেখানো হলো, যেখানে দোতলা ব্রিজের ওপর দিয়ে তীব্র বেগে ট্রেন এবং বাস, ট্রাক দৌড়াচ্ছে। পদ্মা ব্রিজের ভবিষ্যৎ এখন তো অন্ধকার। অবশ্য কামনা করি, সরকার বাধা-বিপত্তি উতরিয়ে পদ্মা ব্রিজের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করুক। এবার আসি বই বিতরণের কথায়। এখন প্রতিষ্ঠিত বিষয় যে সরকার প্রতি বছর প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে বই সরবরাহ করবে। বর্তমান সরকার তৃতীয়বারের মতো এ কাজটি করছে। এটি জনগণের জন্য দয়া কিংবা করুণা নয়। জনগণের মৌলিক অধিকার যে রাষ্ট্র তাদের জন্য শিক্ষা এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করবে। এ বই প্রদানের মাধ্যমে জনগণ কর্তৃক দেয় অর্থ কিছু অংশ তাদের কল্যাণে অর্থাৎ তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। যদিও এটি পর্যাপ্ত নয়, কেননা প্রচুর সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন হয়। যেটা ছাত্রদের নিজেদের সংগ্রহ করতে হয়। উপরন্তু স্কুলের লেখাপড়ার মানও সন্তোষজনক নয়। সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি এবং এসএসসিতে যেসব স্কুল ভালো ফল করেছে তাদের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের গৃহ শিক্ষকের পেছনে কত ব্যয় করতে হচ্ছে তার পরিসংখ্যান নিলে ভয়াবহ চিত্রটি পাওয়া যাবে। তবুও সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এখনও এ উৎসবের মহড়া যখন ভর্তি করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে এ ধরনের সার্কাস করতে হয়। ছোট শিশুদের নিয়ে কী রকম বিপাকে পড়তে হয় অভিভাকদের, তা কি তারা ভেবে দেখেন। রাজধানীর বই বিতরণের চিত্র টেলিভিশনে দেখানো হবে; কিন্তু সুদূর পল্লীর চিত্র কীভাবে জানা যাবে? সরকার প্রতি মুহূর্তে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছে। আমরা সাধারণ মানুষ ডিজিটাল বলতে এটুকু বুঝি যে, এটি কর্মপদ্ধতিকে পারফেকশন দেবে, যেখানে থাকবে সময়সূচি শুরু এবং সমাপ্তির তারিখ। আজ প্রয়োজন এ মর্মে নির্দেশ প্রদান যে, ১ জানুয়ারি থেকে ৭ বা ১০ দিনের ভেতর সব বই বিতরণের কাজ শেষ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে হয় যে, বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তিতে যথেষ্ট উন্নতি ঘটিয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে যে কোনো জায়গায় তথ্য পাঠানো যাবে। অতএব থানা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব, ঢাকায় মূল কেন্দ্রে বই বিতরণের অগ্রগতির তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া। ঢাকার কেন্দ্রীয় অফিসে এ রকম একটি সেল থাকবে, যারা কাজটির মনিটর করবে। ফলে কোথাও বিতরণ ব্যবস্থা মন্থর হলে কিংবা সমস্যায় পড়লে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। এটাই হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রকৃত পদক্ষেপ।
কয়েকদিন আগে পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেল, শিক্ষা সচিব পরপর দু'দিন সভা অনুষ্ঠিত করেও শিক্ষা ক্যাডারের লোকজনের ন্যায্য পদোন্নতির বিষয়টির কোনো সুরাহা করতে পারেনি। কয়েক হাজারের মতো পদ বিভিন্ন পর্যায়ে শূন্য রয়েছে। লেকচারার থেকে সহকারী অধ্যাপক এবং সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপকে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। বছরের পর বছর এ পদোন্নতি না হওয়ায় তাদের ভেতর হতাশার সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। শুধু আদর্শের বুলি শুনিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায় না। প্রণোদনার প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এরকম বিলম্ব ঘটে। তার মানে যে যথাযথভাবে তথ্য রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না অথবা দক্ষ-অদক্ষ বিচার করার কোনো সুস্পষ্ট এবং স্বচ্ছ মাপকাঠি হয়তো রাখা হয় না। আজ তো তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে সব তথ্য রাখা যায় এবং সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যপত্র অতি সহজে তৈরি করা যায়। এত ডিজিটাল ডিজিটাল বলে চিৎকার করার পরও কেন এই ব্যর্থতা। আমরা আশা করব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচেতন হবে, কেননা আমরা জানি, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মোটামুটি সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের অন্যতম। কিন্তু এটাও ঠিক যে, ওপরে যে ব্যর্থতার কথা তুলে ধরা হলো সেটি নিশ্চয়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সাফল্যের ঔজ্জ্বল্য কিছুটা হলেও ম্লান করেছে।
শিক্ষার মানে বড় বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমাজে যেমন ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রে এ রকম পরিস্থিতির রূপ নিতে চলেছে। সমাপনী, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফল মনিটর করতে হবে। যেসব স্কুলের ফল মোটেই সন্তোষজনক নয় তার কারণ চিহ্নিত করে ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনুদান বন্ধ করে কিংবা এ ধরনের কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা হবে আত্মধাতের শামিল। দেশের সর্বাঞ্চল থেকে প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ গড়ে না উঠলে রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে না।
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস
কয়েকদিন আগে পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেল, শিক্ষা সচিব পরপর দু'দিন সভা অনুষ্ঠিত করেও শিক্ষা ক্যাডারের লোকজনের ন্যায্য পদোন্নতির বিষয়টির কোনো সুরাহা করতে পারেনি। কয়েক হাজারের মতো পদ বিভিন্ন পর্যায়ে শূন্য রয়েছে। লেকচারার থেকে সহকারী অধ্যাপক এবং সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপকে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। বছরের পর বছর এ পদোন্নতি না হওয়ায় তাদের ভেতর হতাশার সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। শুধু আদর্শের বুলি শুনিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায় না। প্রণোদনার প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এরকম বিলম্ব ঘটে। তার মানে যে যথাযথভাবে তথ্য রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না অথবা দক্ষ-অদক্ষ বিচার করার কোনো সুস্পষ্ট এবং স্বচ্ছ মাপকাঠি হয়তো রাখা হয় না। আজ তো তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে সব তথ্য রাখা যায় এবং সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যপত্র অতি সহজে তৈরি করা যায়। এত ডিজিটাল ডিজিটাল বলে চিৎকার করার পরও কেন এই ব্যর্থতা। আমরা আশা করব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচেতন হবে, কেননা আমরা জানি, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মোটামুটি সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের অন্যতম। কিন্তু এটাও ঠিক যে, ওপরে যে ব্যর্থতার কথা তুলে ধরা হলো সেটি নিশ্চয়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সাফল্যের ঔজ্জ্বল্য কিছুটা হলেও ম্লান করেছে।
শিক্ষার মানে বড় বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমাজে যেমন ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রে এ রকম পরিস্থিতির রূপ নিতে চলেছে। সমাপনী, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফল মনিটর করতে হবে। যেসব স্কুলের ফল মোটেই সন্তোষজনক নয় তার কারণ চিহ্নিত করে ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনুদান বন্ধ করে কিংবা এ ধরনের কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা হবে আত্মধাতের শামিল। দেশের সর্বাঞ্চল থেকে প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ গড়ে না উঠলে রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে না।
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস
No comments