বিদেশি সাহায্য ব্যবহারেই বেশি অদক্ষতা by শওকত হোসেন
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ পেতে তাদের সব শর্ত মেনে নিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি বিদেশ থেকে বেশি সুদে সার্বভৌম ঋণ নেওয়ারও পরিকল্পনা করছে সরকার। অথচ সাহায্য ব্যবহার করতে না পারায় এক হাজার ৩৪৬ কোটি ডলার অর্থ অব্যবহূত পড়ে আছে। ১৯৯০ সালের চেয়ে বর্তমান সরকার সাহায্য ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি অদক্ষতা দেখিয়েছে। গত তিন বছরে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ জমা পড়েছে পাইপলাইনে।
এর মধ্যে ২০১১ সালে সাহায্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা যায়নি। অর্থনীতির বর্তমান সংকট তৈরি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ঘাটতি থেকে। বিদ্যুৎ খাতের জন্য বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ ব্যয়ের তুলনায় আয় হচ্ছে না। ফলে টান পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রায়। জোগান আর চাহিদার এই অসামঞ্জস্যের কারণে বাড়ছে ডলারের দাম, কমছে টাকার মান।
বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নও পিছিয়ে পড়ছে। গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রকল্প সাহায্য বাস্তবায়িত হচ্ছে চলতি অর্থবছরে। ফলে পরিকল্পনা কমিশন প্রায় ২৩ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্যের বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করতে পারলে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং সংকটের সমাধান হবে। সরকার অবশ্য বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার বাড়ানোর দিকে না গিয়ে সহজ পথে যাচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে কঠিন শর্তের অথবা বেশি সুদের ঋণ। ফলে এরই মধ্যে আইএমএফের শর্ত মেনে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিনিময় হারও বাজারভিত্তিক করার শর্ত রয়েছে। তা করা হলে ডলারের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণ সময়ে কম সুদের বৈদেশিক সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। আর এখন তো বিশেষ এক সময়। কারণ, সামষ্টিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি ঋণ নিচ্ছে। এডিপিতে সাহায্য আসছে না। অনেক বেশি পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় সঠিক পথ হবে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করতে পারা। এতে টাকার অবমূল্যায়নও ঠেকানো যাবে। তিনি মনে করেন, সরকারের উচিত, এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাছাই করে কী কারণে প্রকল্প সাহায্য আটকে আছে, তা খুঁজে বের করা। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় যেমন বাড়বে, তেমনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিও তৈরি হবে।
উপচে পড়ছে পাইপলাইন: অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের শুরুতে বাংলাদেশের পাইপলাইনে সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার। আর এখন পাইপলাইনে থাকা সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪৬ কোটি ডলার। অথচ ২০১০ সালের ১ জুলাই পাইপলাইনে বা অব্যবহূত সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৯৪২ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ৪০০ কোটি ডলারের সাহায্য ব্যবহার করা যায়নি। পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ থাকার কারণেই পাইপলাইন ফুলে-ফেঁপে উঠেছে বলে ইআরডি সূত্র জানায়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার সময় পাইপলাইনে সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৮৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর এরশাদ সরকারের পতনের সময় দেশে অব্যবহূত সাহায্য ছিল ৪৮৪ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। বিগত বিএনপি সরকারের সময় এর পরিমাণ ছিল ৬৬৫ কোটি ডলার।
সাম্প্রতিক সময়ে সাহায্য ব্যবহারের অক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে পাইপলাইনে অব্যবহূত সাহায্য ছিল ৭১৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা হয় ৮৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর বর্তমান সরকারের সময়ে এর পরিমাণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
বেহাল অবস্থায় এডিপি: চলতি অর্থবছরের জন্য ৪৬ হাজার কোটি টাকার এক বিশাল এডিপি তৈরি করেছিল পরিকল্পনা কমিশন। বেহাল অবস্থায় পড়েছে সেই এডিপিও। জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হিসাব চূড়ান্ত করেছে কমিশন। এ পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২০ শতাংশ। এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ। গত তিন বছরের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন।
এই অবস্থায় কমছে বরাদ্দ। সরকার বিদেশ থেকে অর্থ আনতে না পারায় চার হাজার ২৩৭ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এটি এখন হবে ১৪ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। তবে এর পরিমাণ আরও কমবে বলে জানা গেছে।
সাহায্যের নিম্নগতি: চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বৈদেশিক সাহায্য এসেছে মাত্র ৪১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। আর এ সময়ে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফলে নিট সাহায্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ছয় কোটি ৮৯ লাখ ডলার। বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটিও নতুন রেকর্ড। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে কম সাহায্য প্রাপ্তি। আগের অর্থবছরে একই সময়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৩২ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নও পিছিয়ে পড়ছে। গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রকল্প সাহায্য বাস্তবায়িত হচ্ছে চলতি অর্থবছরে। ফলে পরিকল্পনা কমিশন প্রায় ২৩ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্যের বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করতে পারলে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং সংকটের সমাধান হবে। সরকার অবশ্য বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার বাড়ানোর দিকে না গিয়ে সহজ পথে যাচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে কঠিন শর্তের অথবা বেশি সুদের ঋণ। ফলে এরই মধ্যে আইএমএফের শর্ত মেনে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিনিময় হারও বাজারভিত্তিক করার শর্ত রয়েছে। তা করা হলে ডলারের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণ সময়ে কম সুদের বৈদেশিক সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। আর এখন তো বিশেষ এক সময়। কারণ, সামষ্টিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি ঋণ নিচ্ছে। এডিপিতে সাহায্য আসছে না। অনেক বেশি পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় সঠিক পথ হবে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করতে পারা। এতে টাকার অবমূল্যায়নও ঠেকানো যাবে। তিনি মনে করেন, সরকারের উচিত, এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাছাই করে কী কারণে প্রকল্প সাহায্য আটকে আছে, তা খুঁজে বের করা। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় যেমন বাড়বে, তেমনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিও তৈরি হবে।
উপচে পড়ছে পাইপলাইন: অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের শুরুতে বাংলাদেশের পাইপলাইনে সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার। আর এখন পাইপলাইনে থাকা সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪৬ কোটি ডলার। অথচ ২০১০ সালের ১ জুলাই পাইপলাইনে বা অব্যবহূত সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৯৪২ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ৪০০ কোটি ডলারের সাহায্য ব্যবহার করা যায়নি। পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ থাকার কারণেই পাইপলাইন ফুলে-ফেঁপে উঠেছে বলে ইআরডি সূত্র জানায়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার সময় পাইপলাইনে সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৮৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর এরশাদ সরকারের পতনের সময় দেশে অব্যবহূত সাহায্য ছিল ৪৮৪ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। বিগত বিএনপি সরকারের সময় এর পরিমাণ ছিল ৬৬৫ কোটি ডলার।
সাম্প্রতিক সময়ে সাহায্য ব্যবহারের অক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে পাইপলাইনে অব্যবহূত সাহায্য ছিল ৭১৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা হয় ৮৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর বর্তমান সরকারের সময়ে এর পরিমাণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
বেহাল অবস্থায় এডিপি: চলতি অর্থবছরের জন্য ৪৬ হাজার কোটি টাকার এক বিশাল এডিপি তৈরি করেছিল পরিকল্পনা কমিশন। বেহাল অবস্থায় পড়েছে সেই এডিপিও। জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হিসাব চূড়ান্ত করেছে কমিশন। এ পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২০ শতাংশ। এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ। গত তিন বছরের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন।
এই অবস্থায় কমছে বরাদ্দ। সরকার বিদেশ থেকে অর্থ আনতে না পারায় চার হাজার ২৩৭ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এটি এখন হবে ১৪ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। তবে এর পরিমাণ আরও কমবে বলে জানা গেছে।
সাহায্যের নিম্নগতি: চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বৈদেশিক সাহায্য এসেছে মাত্র ৪১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। আর এ সময়ে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফলে নিট সাহায্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ছয় কোটি ৮৯ লাখ ডলার। বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটিও নতুন রেকর্ড। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে কম সাহায্য প্রাপ্তি। আগের অর্থবছরে একই সময়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৩২ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
No comments