ঢাকা অবরোধ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপি

ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চে ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দেওয়ার কথাও ভাবছে জোটটি। কাল রোববার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে চারদলীয় জোটের রোডমার্চ শুরু হবে। ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে জনসভা করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া গত বুধবার তাঁর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জ্বালাও-পোড়াও নয়,


শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে বিএনপি। দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পক্ষে।
বিএনপির নেতারা বলেন, ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকা অবরোধ বা ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিতে বলা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। তবে গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংস ঘটনার পর অবরোধ বা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন দলের শীর্ষনেতারা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ের রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এরপর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির সব কর্মকাণ্ড চলবে। ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি দল গোছানো, জোটের আকার বাড়ানোসহ অন্যান্য সাংগঠনিক সমস্যা নিরসনেও কাজ চালাবে বিএনপি। মহাসমাবেশ থেকেই মূলত সরকার পতনের মূল কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তাই দল ও জোটকে চাঙা করে সবাইকে আন্দোলনমুখী করতে চায় বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, এককভাবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া হলে এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামের জনসভা থেকে কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দিতে পারেন খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে ‘দলীয়’ নির্বাচন কমিশন হলে এর বিরুদ্ধে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএনপি।
এ ছাড়া ঢাকায় মহাসমাবেশ করার আগে জোট সম্প্রসারণের ঘোষণা দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে জোট সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টিসহ (এলডিপি) ১০টি রাজনৈতিক দলকে এই জোটে আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
বিএনপি ও জোটের শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকায় ফেব্রুয়ারিতে একটি মহাসমাবেশ করা হবে। তবে এর আগে ঢাকার আশপাশে জনসভা এবং রংপুর ও বরিশালে খালেদা জিয়া জনসভা করতে পারেন। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা, মহানগর ও পৌরসভা পর্যায়ে জোটের সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ-মিছিল করার কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। নেতারা জানান, আজ বিএনপি মাসব্যাপী কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে ‘চল চল ঢাকা চল’ নামে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁদের দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে। দলীয় চেয়ারপারসনও এমন কথা বলেছেন।
বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব প্রথম আলোকে বলেন, দলের মধ্য থেকে ঢাকা অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ার জন্য চাপ আছে। বিএনপির নেতারাও বিভিন্ন সমাবেশে এমন ইঙ্গিত করেছেন। তবে এ ধরনের কর্মসূচি ঘিরে সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। বিএনপি আপাতত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পক্ষে। তা ছাড়া গত ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনার পর দলের বহু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই সরকারকে আর কোনো সুযোগ না দিয়ে কীভাবে কঠোর কর্মসূচি পালন করা যায়, তা-ই ভাবা হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ হবে। তবে এখনো তারিখ ঠিক হয়নি। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ আরও কিছু কর্মসূচি থাকবে। সরকারের আচরণ সহনশীল থাকলে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবেই দাবি আদায়ের পথে থাকবে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট গত ১০ অক্টোবর থেকে রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু করে। প্রথম রোডমার্চটি সিলেটে গিয়ে শেষ হয়। এরপর ১৮ ও ১৯ অক্টোবর উত্তরাঞ্চল অভিমুখে, ২৬ ও ২৭ নভেম্বর খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ হয়। চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান খালেদা জিয়া।

No comments

Powered by Blogger.