কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: বিশ্লেষণ-আফজল খানের হারের যত কারণ by আনোয়ার হোসেন ও গাজীউল হক

লীয় কোন্দল ও স্থানীয় পাঁচ সাংসদের রেষারেষির কারণে মেয়র পদে দলীয় সমর্থন পাওয়ার পরও বেকায়দায় ছিলেন আফজল খান। শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে গণসংযোগে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া সারা দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, টেন্ডারবাজি, মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তায় ভাটা—সবকিছু মিলিয়েই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আফজল খানের। গতকাল শুক্রবার কুমিল্লা


নগরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে আফজল খানের হারের কারণ সম্পর্কে এসব কথা জানা গেছে।
অনেক ভোটারের মতে, আফজল খানের আলোচিত-সমালোচিত রাজনৈতিক ইতিহাস এবং দলের দুই ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থী যেভাবে আফজল খানের বিরূপ সমালোচনা করেছেন, সেটাও তাঁর হারের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম শিকদার বলেন, ‘আফজল খানের হারের অনেক কারণ রয়েছে। সেগুলো এখন বলতে চাই না।’
তবে জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আফজল খানের পরিবার থেকে চারজনের প্রার্থী হওয়া, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁর পরিচিতির অভাব, বহিরাগতদের এনে ভোটারদের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের ভোট তেমনভাবে না পাওয়া এবং কর্মীর অভাবের কারণে বর্ষীয়ান এই নেতা নির্বাচনে হেরে গেছেন। কয়েকজন নেতার মতে, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ভোটারদের মাঝে ৭২ বছর বয়সী এই নেতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পৌঁছে দিতে পারেনি, যে কারণে তাঁর ভরাডুবি হয়েছে।
নগরের কান্দিরপাড় এলাকার বাসিন্দা ফরিদ মিয়া ও মোস্তাক হোসেন বলেন, আফজল খান ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে পারেননি, যে কারণে তিনি ভোট কম পেয়েছেন।
ঠাকুরপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু ভোটার বলেন, নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাঁরা আফজল খানকে ভোট দেননি। তাঁর পরিবারের সদস্যদের ভাবমূর্তির কারণে তাঁরা সব সময় তটস্থ থাকেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ৬৫টি কেন্দ্রের মধ্যে আফজল খান মাত্র সাতটি কেন্দ্রে বিজয়ী হয়েছেন। সদর দক্ষিণ এলাকার ২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনি একটিতেও জিততে পারেননি। কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিনের এলাকার দুটি কেন্দ্রেই আফজল খান বিজয়ী হন।
স্থানীয় রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর দক্ষিণে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পল্লি উন্নয়ন সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরীর ভোটব্যাংক রয়েছে। সেই ভোট গেছে মনিরুল হকের পক্ষে, যে কারণে ভোটের ব্যবধান বেড়ে গেছে।
অনেকের মতে, ভোটের দিন আফজল খানের ব্যাজ পরা অনেক বহিরাগত লোককে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এতেও ভোটাররা ক্ষুব্ধ হন, যা ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
এ ব্যাপারে আফজল খানের সঙ্গে গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে তিনি ওই সময় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার নবগঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আফজল খান সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী মনিরুল হকের কাছে হেরে যান।
পরাজিত মেয়র প্রার্থীদের বাড়িতে মনিরুল হক: নবনির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক গতকাল রাতে পরাজিত মেয়র প্রার্থীদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি তাঁদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে মনিরুল হক জানান, ফলাফল ঘোষণার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার ও মির্জা আব্বাস, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সাংসদ বরকতউল্লা তাঁকে মুঠোফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.